স্মার্ট বাংলাদেশে’র জন্য বিশেষ বরাদ্দ ১০০ কোটি টাকা

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবন কেন্দ্রের মাধ্যমে ৮০ হাজার তরুণ-তরুণীকে অগ্রসর প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2023, 10:31 AM
Updated : 1 June 2023, 10:31 AM

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে তরুণ-তরুণী ও যুবসমাজকে প্রস্তুত করতে চায় সরকার; এজন্য প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গবেষণা, উদ্ভাবন ও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ প্রস্তাব করে বলেছেন, এরই মধ্যে সাধারণ, কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও জীবনমুখী শিক্ষার জন্য বিভিন্ন ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মে অনলাইনে শিক্ষার সুযোগ তৈরি ও সম্প্রসরণে কাজ করা হচ্ছে।

এবারের বাজেট বক্তৃতার শিরোনামও দেওয়া হয়েছে, ‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি দেশে-বিদেশে তরুণ-তরুণীদের কাজের সুযোগ বাড়ানো হবে। প্রথাগত কর্মসংস্থানের ধারণা থেকে বের হয়ে তারা যেন বিভিন্নমুখী ও উদ্ভাবনী উদ্যোগে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারে, নিজের ও সমাজের পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিতে পারে; সরকার তরুণদের মধ্যে সে ধরনের প্রণোদনার সঞ্চার করতে চায়।”

বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ ধারণা নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়।

এর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী।

নতুন অর্থবছরের বাজেটেও অন্যান্য উন্নয়নের পাশাপাশি তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও পেশাগত উন্নয়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভবিষ্যতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবন কেন্দ্রের মাধ্যমে ৮০ হাজার তরুণ-তরুণীকে অগ্রসর প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এরই মধ্যে স্টার্টআপ ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন উপযোগী অবকাঠামো গঠন ও সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে সেসব সম্পর্কেও কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, লেনদেনের ভারসাম্য পরিস্থিতির উন্নয়ন ‍ও বৈদেশির মুদ্রার বিনিময়র হার স্থিতিশীল রাখাই এ মুহূর্তের চ্যালেঞ্জ।”

এছাড়া স্বল্পোন্নত দেশ থেকে টেকসই উত্তরণ ও উত্তরণ পরবর্তী বাস্তবতা মোকাবেলা করার কৌশল এখনই নির্ধারণ করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, “বিশেষ করে, শুল্কহার যৌক্তিকীকরণ, রাজস্ব ঘাটতি ‍পূরণে অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ, ভর্তুকি বা নগদ সহায়তা প্রত্যাহার অথবা বিকল্প অনুসন্ধানসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এখনই ভাবতে হবে।”

দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের দিকে মনোযোগ দিতে হবে বলে মনে করছেন আ হ ম মুস্তফা কামাল।

অর্থমন্ত্রী জানান, স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখা মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশকে উন্নত থেকে উন্নততর দেশে রূপান্তরের কৌশল এই বাজেট প্রস্তাবে বিন্যাস করেছেন তিনি।

স্মার্ট বাংলাদেশের যে রূপরেখা আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে সেখানে চারটি কৌশলের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলো-স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট সোসাইটি ও স্মার্ট গভর্নমেন্ট ।

এই চার কৌশলসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে গবেষণা ও উদ্ভাবনে ১০০ কোটি টাকার এই বিশেষ তহবিল গঠন করা হচ্ছে, সেখানে মূলত অগ্রাধিকার পাবেন তরুণ-তরুণীরা। বাজেট বক্তৃতায় সে প্রস্তাবই করেছেন অর্থমন্ত্রী।

স্মার্ট বাংলাদেশে’র জন্য বিশেষ বরাদ্দ ১০০ কোটি টাকা

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালের সরকার গঠন করার প্রাক্কালে জাতির সামনে রূপকল্প ২০২১ পেশ করা হয়েছিল, যার মূল লক্ষ্য ছিল অর্থনেতিকভাবে সমৃদ্ধশালী সমতাভিত্তিক ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ।

“গত দেড় দশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক ও অবকাঠামোসহ সব ক্ষেত্রে যে অভূতপূর্ব অগ্রগতি করেছে তার মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি টেকসই ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে।

“২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ এর লক্ষ্য অর্জনে প্রধানমন্ত্রীর চিন্তাপ্রসূত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ' গঠনের উদ্যোগগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখবে। স্বপ্নের সে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে চারটি মূল স্তম্ভ- স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সোসাইটি ও স্মার্ট ইকোনমির ওপর ভিত্তি করে।”

কামাল বলেন, “আমাদের ‘স্মার্ট বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় হবে কমপক্ষে ১২ হাজার ৫০০ ডলার; দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকবে ৩ শতাংশের কম মানুষ আর চরম দারিদ্র্য নেমে আসবে শূন্যের কোঠায়। মূল্যস্ফীতি সীমিত থাকবে ৪-৫ শতাংশের মধ্যে; বাজেট ঘাটতি থাকবে জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে; রাজস্ব- জিডিপি অনুপাত হবে ২০ শতাংশের ওপরে; বিনিয়োগ হবে জিডিপির ৪০ শতাংশ। শতভাগ ডিজিটাল অর্থনীতি আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক স্বাক্ষরতা অর্জিত হবে।

“সকলের দোড়গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে যাবে। স্বয়ংক্রিয় যোগাযোগ ব্যবস্থা, টেকসই নগরায়নসহ নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সব সেবা থাকবে হাতের নাগালে। তৈরি হবে পেপারলেস ও ক্যাশলেস সোসাইটি। সবচেয়ে বড় কথা, স্মার্ট বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হবে সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা।”

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশের গড় মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৬৫ ডলার।