অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলোকে বিবেচনায় রেখেই বাজেটে পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে, বলেন তিনি।
Published : 02 Jul 2024, 09:37 PM
ব্যাংক ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নির্দিষ্ট থাকার সময়ও অনেকের খেলাপি হওয়ার কথা তুলে ধরে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেছেন, এখন বেসরকারি খাতে অর্থায়নের ক্ষেত্রে বাজারভিত্তিক সুদহার কী ধরনের ফল দেয় সেটা দেখার অপেক্ষায় আছেন তিনি।
মঙ্গলবার ঢাকায় ওয়েস্টিন হোটেলে স্মার্ট বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে আর্থিক অন্তর্ভূক্তি বিষয়ক এক আলোচনা সভায় প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ আয়োজিত এ সভায় এক ব্যবসায়ীর প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ব্যাংকের সুদহার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে এবং মুদ্রা বিনিময় পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে এর ইতিবাচক ফল পেতে শুরু করেছি। জুন মাসে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছে।
“সুদহার যখন নয়-ছয় ছিল সেসময়ও আমরা খেলাপি হওয়ার মত অনেক ঘটনা দেখেছি। ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন সরবরাহে বাজারভিত্তিক সুদহার কেমন হয়, সেটা দেখার জন্য আরও কিছুটা সময় দেওয়ার প্রয়োজন।”
অর্থনীতিতে এখন আরও যে চ্যালেঞ্জ আছে সেগুলো একে একে চিহ্নিত করে সমাধান করার কথা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাজেটে চ্যালেঞ্জগুলোকে বিবেচনায় রেখেই পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে।
শুল্কায়নকে শতভাগ ডিজিটালাইজ করার জন্য সরকার ব্যাপকভাবে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এটা করা সম্ভব হলে এনবিআর সংক্রান্ত অনেক সমস্যারই সমাধান হয়ে যাবে। তবে এনবিআরকে আধুনিকায়নের প্রচেষ্টা যে খুব ধীর গতিতে এগুচ্ছে সেটাও আমি স্বীকার করি। পৃথিবীর কোনো দেশেই সরকারি খাত আর বেসরকারি খাত একই গতিতে আগায় না। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না।
“তবুও একটা বিষয় স্বীকার করতে হবে যে, ২০০৯ সাল থেকে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। আমরা ভুল থেকে শিখেছি, এরপর আবার সামনে এগিয়েছে। সরকারও বেসরকারি খাতের দিকে সব সময় বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছে।”
অ্যামচেম সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ক্যাশলেস’ উদ্যোগকে আরও প্রসারিত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মেট্রোরেল, টোলপ্লাজাসহ অন্যান্য ক্ষেত্র উন্মুক্ত করে দেওয়া গেলে এসব ক্ষেত্রেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে এ সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো।
বেকারত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিবছর ২০ লাখ নতুন শিক্ষিত শ্রেণি তৈরি হলেও দক্ষ কর্মশক্তির ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। তাই কর্মমুখী শিক্ষার দিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও বিদেশি বিনিয়োগের দিকে জোর দেওয়া প্রয়োজন।
ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে লজিস্টিকস ও নীতিগত ক্ষেত্রে (পলিসি) বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে তিনি বলেন, লিড টাইম ও অধিক লজিস্টিক ব্যয়ের কারণে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে আছে। বিভিন্ন নীতি প্রণোয়ন ও এর প্রয়োগের মধ্যে অমিল বাংলাদেশের একটি অতি সাধারণ ঘটনা। ভালো নীতি আছে কিন্তু এর প্রয়োগ কম।
তিনি সরকারের প্রতিবছর নীতি পরিবর্তন না করে নীতির ধারাবাহিকতা এবং দীর্ঘমেয়াদি নীতি প্রণয়নের দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে ডিজিটাল উপস্থাপনায় অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম জোরদার করার জন্য সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ এবং ২০৩১ সালের মধ্যে শতভাগ ক্যাশলেস লেনদেন নিশ্চিত করতে চাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন স্ট্র্যাটেজি (২০২১-২০৬) বাস্তবায়ন করছে যেখানে ২০২৬ সালের মধ্যে সব মানুষকে আর্থিক অন্তর্ভূক্তির মধ্যে নিয়ে আসা হচ্ছে। বিকাশ, নগদের কারণে পল্লী অঞ্চলে আর্থিক অন্তর্ভূক্তিতে বিপ্লব ঘটে গেছে। এখন ২২ কোটি ৪০ লাখ মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট রয়েছে যা মোট জনসংখ্যার থেকেও বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকগুলোর প্রতি গ্রামের দরিদ্র মানুষদের ব্যাংকিং সুবিধার আওতায় আনতে একটি নির্দেশনা দিয়েছে।
আলোচনা সভায় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের কর্মাসিয়াল কাউন্সিলার (ফরেন কর্মাসিয়াল সার্ভিন) জন ফে ও অ্যামচেমের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।