“এটা সব বাজেটে সব অর্থমন্ত্রীরাই করেন, সরকারই করেন এবং উন্নত দেশে এর পরিমাণ অনেক বেশি।”
Published : 07 Jun 2024, 06:02 PM
বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভরতার সমালোচনা অনেকে করলেও অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলছেন, এ নিয়ে চিন্তার কারণ নাই।
শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “ব্যাংক থেকে যে ঋণ নেওয়া, এটাতো একটা স্ট্যান্ডার্ড প্রসেডিওর। এটা সব বাজেটে সব অর্থমন্ত্রীরাই করেন, সরকারই করেন এবং উন্নত দেশে এর পরিমাণ অনেক বেশি।
“আমরাতো এবার ৫ শতাংশের মধ্যে এটাকে ধরে রেখেছি। কাজেই এটা এতকিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস নয়। তো, এটা নিয়ে আপনার চিন্তার কোনো কারণ নাই।”
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।
এর মধ্যে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা তিনি রাজস্ব খাত থেকে যোগান দেওয়ার পরিকল্পনা সাজিয়েছেন, যা বাস্তবায়ন করা হবে বড় চ্যালেঞ্জ।
তারপরও তার আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকবে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৮ শতাংশ বেশি।
ঘাটতি মেটানোর জন্য অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে যে পরিকল্পনা অর্থমন্ত্রী সাজিয়েছেন, বড় খাত হিসাবে ব্যাংক ঋণকে ধরেছেন তিনি।
ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে বাজেটে, যা মোট ব্যয়ের ১৭.২৫ শতাংশ।
ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার এই লক্ষ্য বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ কম হলেও মূল বাজেটের তুলনায় কিছু বেশি।
গত অর্থবছরে তখনকার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি ঋণ করার লক্ষ্য ধরেছিলেন; সংশোধিত বাজেটে তা প্রায় ১৮ শতাংশ বেড়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আরও ৮ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন মাহমুদ আলী।
সঞ্চয়পত্র থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৮ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল; তবে শেষ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ৩১০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র।
বাজেটে সম্ভাব্য বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার পরিমাণ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট থেকে ৯০০ কোটি টাকা বেশি।
তারল্য সংকট ও চলতি হিসাবে ঘাটতির মধ্যে ব্যাংক থেকে সরকার বড় অংকের ঋণ নিলে প্রভাব কী হবে, সে বিষয়ে এক প্রশ্নে অর্থ বিভাগের সচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, “এই বাজেট ঘাটতির সঙ্গে ব্যাংকের তারল্য সংকট বা ঘাটতির কোনো সম্পর্ক নাই।”
ব্যাংক ঋণের প্রতি নির্ভরতার পক্ষে যুক্তি তিনি বলেন, “সবসময় আমরা বিদেশি ঋণের ওপর প্রায়োরিটি দিই। কিন্তু এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের কারণে আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। সুতরাং আমাদেরকে ক্রমবর্ধমান হারে অভ্যন্তরীণ ঋণের ফোকাস করতে হচ্ছে।
“অভ্যন্তরীণ ঋণের ক্ষেত্রে আমাদের মেজর ফোকাসটা সঞ্চয়পত্রের ওপর যেত, সেখানে যেহেতু সুদের হার অত্যন্ত বেশি, সরকারের ব্যয় বেড়ে যায়, সে কারণে আমরা সঞ্চয়পত্রকে নিরুৎসাহিত করে আসছি এবং আস্তে আস্তে আমরা ব্যাংক ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছি।”
গত অর্থবছরে ব্যাংক ঋণ থেকে যে টাকা জোগানোর কথা ছিল, তা ছাড়িয়ে গেছে প্রায় ১৮ শতাংশ। তবে এবার যে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে, বছর শেষে তা পুরোপুরি লাগবে না বলে আশা করছেন অর্থ সচিব।
তিনি বলেন, “এখানে যে আমরা ব্যাংক থেকে নিচ্ছি বলছি, এটাতে আমরা ধরে নিয়েছি যে এনবিআরের রেভিনিউ আবার কম হবে, বাজেট ঘাটতি হবে।
“এখন বছরশেষে যে আমরা এই টাকাটা ব্যাংক থেকে নিয়েই নেব, তাও না। কারণ, আমাদের এনবিআরের রেভিনিউ যত বাড়বে, ততই আমাদের এই ঋণ কমে যাবে।”
পুরনো খবর
ঘাটতির বাজেটে ১৭% আসবে ব্যাংক ঋণ থেকে