বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমানো, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুতের দাবি ব্যবসায়ীদের

দক্ষ জনবল তৈরিতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাবও এসেছে প্রাক-বাজেট এ আলোচনায়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2023, 06:59 PM
Updated : 27 May 2023, 06:59 PM

আগামী অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমানোর ‘সর্বোচ্চ চেষ্টা’ নেওয়ার প্রস্তাব উঠে এসেছে প্রাক-বাজেটের এক আলোচনায়।

একই সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে শিল্পোৎপাদন অব্যাহত রেখে দেশি শিল্পের উৎপাদন বাড়ানোর পরামর্শ দেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসীম উদ্দিন।

আমদানি কমিয়ে বিদেশি মুদ্রার চাপ কমানো সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।

শনিবার বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির ‘কেমন বাজেট চাই’ শীর্ষক প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব প্রস্তাব করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

আগামী ১ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করবেন।

এর চার দিন আগের এ প্রাক-বাজেট আলোচনায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ এবং বিকেএমইএ’র সভাপতি মো. হাতেম নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।

এনটিভির হেড অব নিউজ জহিরুল আলমের সঞ্চালনায় তেজগাঁওয়ে এনটিভি স্টুডিওতে এ সভা হয়।

এতে জসীম উদ্দিন বলেন, “কোভিড পরবর্তী আমরা অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর মুহূর্তে ইউক্রেইন যুদ্ধ আমাদের সাপ্লাই চেইনকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

“এর প্রভাবে বিশ্বের সকল দেশেই মূল্যস্ফীতি আঘাত করছে। ইংল্যান্ডের মতো দেশেও মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশ অতিক্রম করেছে।”

তিনি বলেন, “মূল্যস্ফীতি বাড়ছে মূলত আমদানি পণ্যের কারণে। সুতরাং মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে। চলতি বছর কৃষিতে বাম্পার ফলন একটি স্বস্তির জায়গা। আমাদের কৃষি ও নিত্যপণ্যে শুল্ক সুবিধা দিতে হবে বলে আমি মনে করি।”

এসময় তিনি কর জিডিপি হার আশানুরুপ পর্যায়ে উন্নীত করতে কর আদায়ে জড়িত প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন।

দেশি উৎপাদন বাড়িয়ে স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানি বাড়াতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের আহ্বানও জানান ব্যবসায়ীদের এই নেতা।

আবাসন খাতে কমিয়ে হলেও শিল্পায়নে চাহিদানুযায়ী গ্যাস সরবরাহের দাবি জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে অন্যরা দেশে দক্ষ জনবল তৈরির জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, “শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে চলতি অর্থবছরে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল তা ব্যয় করতে পারেনি। এ প্রেক্ষিতে শুধু বরাদ্দ বাড়িয়ে লাভ হবে না।

“শিক্ষাটাকে ঘুরিয়ে জীবনমুখী করা উচিত। জ্ঞান-বিজ্ঞানে দক্ষতা বাড়িয়ে বিশ্বমানে নিয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু শুধু বরাদ্দ বাড়িয়ে এটা সম্ভব নয়।”

অনুষ্ঠানে দরিদ্র বা অসচ্ছল মানুষের জন্য প্রদেয় ভাতা স্থবির হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেন অনেক।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “এটা কোনোও অনুকম্পা নয় এটা শুধু প্রণোদনা ভাতা। ওইটার সঙ্গে নিজ চেষ্টায় বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে এটা দেওয়া হয়

“তবে নতুন বাজেটে প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হতে পারে।”

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা তুলে ধরে বলেন মন্ত্রী আরও বলেন, “সরকারপ্রধানের একটাই বার্তা উৎপাদন বাড়ান। উৎপাদন বাড়াতে পারলে আমাদের চাহিদা আমরাই পূরণ করতে পারব।”

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “২০০৮ সালে আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে নিত্যপণ্যের দাম কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম।

“তারই ধারাবাহিকতায় ৯৫ টাকার পটাশিয়াম সার আমরা মাত্র ২০ টাকায় নামিয়ে আনি। এছাড়াও অন্যান্য সার ও কীটনাশকসহ সকল ধরনের কৃষি পণ্যের দাম কমিয়ে এনে দেশে কৃষি উৎপাদন বেড়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। তবে সম্প্রতি বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতায় আমদানি পণ্যের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।”

এ সময় তিনি পেঁয়াজের দাম ৫০ টাকার বেশি থাকলে আমদানি করা হবে বলে জানান।

“সরকার এখনও এসব ভর্তুকি দিয়ে আসছে বলেই দেশে উৎপাদিত খাদ্য পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তুলনামুলক কিছুটা হলেও কম আছে।” এর ধারাবাহিকতায় এক কোটি পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

তবে এসব আলোচনার মধ্যে বারবার মূল্যস্ফীতির বিষয়টি উঠেছে এ প্রাক-বাজেটের আলোচনায়।

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “এবারের বাজেটে অবশ্যই মূল্যস্ফীতি একটি চ্যালেঞ্জ হবে। বাজেটে এটিকে চিন্তায় রাখা উচিত।

“কর জিডিপি‘র হার বাড়ানো গেলে সরকারি ব্যয় বিশেষ করে সামাজিক নিরাপত্তায় ব্যয় করা যেত। কিন্তু কর হার কম।”

বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মো. হাতেম বলেন, “গেল এক বছরে আমাদের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে আমাদের রপ্তানি আদেশ কম আসছে। অন্যদিকে আমাকে ঠিক মতো কাঁচামাল আনতে দিচ্ছে না।”

এ পরিস্থিতিতে ১ শতাংশ হারে অগ্রিম কর নিচ্ছে; বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই কর আদায় যুক্তিযুক্ত নয় বলে মনে করেন তিনি।

সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাজেটে শুধু প্রবৃদ্ধি নয় বরং সাধারণ মানুষের কল্যানমূখী বাজেট করা উচিত।

তিনি বলেন, “দেশের প্রান্তিক মানুষের কল্যানে ভর্তুকি বাড়লেও আইএমএফ কিছু করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। সুতরাং প্রান্তিক মানুষের ভর্তুকি কিছুটা হলেও বাড়ানো উচিত।

দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণের পরামর্শও দেন তিনি।

আরও পড়ুন 

Also Read: এবারের বাজেট উপস্থাপন ১ জুন