দেশের বীমা খাতকে সম্পূর্ণভাবে ডিজিটাল ও অটোমেশনে আনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 01 Mar 2022, 02:35 PM
তিনি বলেছেন, “এটা যদি ডিজিটাল হয়, প্রিমিয়াম দেওয়ার ব্যাপারে বা কোনো ব্যাপারে সরাসরি যদি কাজ করা যায়, বা অনলাইনে করা যায়, তা সকলের জন্য সুবিধা হবে, সবাই আগ্রহী হবে।”
আর সেজন্য বীমা খাতের সেবায় প্রযুক্তিকে যুক্ত করে এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচার চালাতে বলেছেন তিনি, যাতে মানুষ বীমা করতে আগ্রাহী হয়।
মঙ্গলবার ‘জাতীয় বীমা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখন তো আমাদের দেশটা আমরা ডিজিটাল করে ফেলেছি। সব কিছু এখন ডিজিটালি হয়। কেনা-বেচা হয়, সব কিছু হয়।
“আর ডিজিটাল করেছিলাম বলেই করোনাকালীন সময়ে আমাদের অর্থনীতির চাকা যেমন সচল রাখতে পেরেছি, মানুষের জীবন জীবিকাও সচল থেকেছে।”
গ্রাহকেদের আস্থা অর্জনে ইউনিফাইড ম্যাসেজিং প্ল্যাটফর্ম (ইউএমপি) চালু করা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বীমা নিয়ে মানুষের আস্থা বাড়াতে হবে। গ্রাহকের স্বার্থকে সর্ব্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সেবা দিতে হবে।
“মানুষকে বীমা বিষয়ে আগ্রহী করতে নতুন নতুন পদ্ধতি কাজে লাগাতে হবে। জনগণকে আরও উৎসাহিত করতে হবে। এটাই আমার একটা অনুরোধ থাকবে।”
তিনি বলেন, বীমা সেবা যদি মানুষ হাতের কাছে পায়, তাহলে অনেকে তার জীবন নিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারে। সেজন্য সরকারি বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
“অন্তত আমি এইটুকু বলতে পারি, আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর আমরা কিন্তু বেসরকারিখাতে অনেক বীমা কোম্পানি দিয়েছি। তাতে যেমন অনেকের ব্যবসা করারও সুযোগ হয়েছে, বীমা ব্যবসায় যেমন সবাই সম্পৃক্ত হয়েছে, পাশপাশি আমাদের দেশের অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।”
সরকারপ্রধান বলেন, “আমি যেটাই করি, আমার মাথায় সব সময় এটাই থাকে যে আমি কী করে আরও বেশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। এজন্য আমি যখনই সরকারে এসেছি, প্রথমবার ১৯৯৬ সালে তখন থেকে এই পর্যন্ত আমরা কিন্তু সকল প্রতিষ্ঠান বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছি।
“এই উন্মুক্ত করে দেওয়ার একটাই উদ্দেশ্য, সে উদ্দেশ্যটা হল মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা,” বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “বীমা মানে হল আমানত। আমি একটা আমানত রাখছি। সেই আমানত যেন যথাযথভাবে সময়মত মানুষ পেতে পারে। আবার এটা পেতে গিয়ে যেন কোনো ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে না হয়। তার জন্য যেটা গ্রাহকের প্রাপ্য সে যেন সহজে সেটা পেতে পারে, সে ব্যবস্থাটাও করতে হবে।
“হ্যাঁ পাশাপাশি কেউ যেন দুই নম্বরি করতে না পারে, সেটাও অবশ্যই দেখতে হবে। কিন্তু তার টাকাটা যেন সে পায়, কোন হয়রানী যেন না হয়।”
আওয়ামী লীগ সরকারের আসার পর বেসরকারি খাতে অনেকগুলো বীমা কোম্পানির অনুমোদন দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তাতে যেমন অনেকের ব্যবসা করার সুযোগ হয়েছে, সেই বীমা ব্যবসায় যেমন মানুষ সম্পৃক্ত হয়েছে, পাশাপাশি আমাদের দেশের অনেক মানুষের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হয়েছে।”
বীমা সংশ্লিষ্টদের দু্টি বিষয়ে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, “একটা হল মানুষের অনিহা, ওই যে টাকা দিতে হবে সে দিতে চায় না, সেখানে একটা ফাঁকি দেওয়া। আরেকটা হচ্ছে এই যে মিথ্যা মিথ্যা ঘটনা ঘটিয়ে সেখান থেকে টাকা নেওয়া। এই দুইটা বিষয়ে আমি মনে করি খুব বেশি নজর দেওয়া দরকার।
“আর যারা দুই নম্বরি করে টাকা নিতে চায়, সেগুলোও ভালোভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে দেখতে হবে। এই বিষয়ে আমি মনে করি আপনারা আরও বেশি সর্তক থাকবেন।”
যারা নাটক সাজিয়ে বীমার টাকা নিতে চায়, তাদের বিষয়ে সর্তক করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা ছোটবেলা থেকে দেখেছি। একটা ঘটনা বলি, পাটের গুদামে হঠাৎ আগুণ লেগে যেত, আগুন লাগার সাথে সাথে সব পাট নাকি পুড়ে যেত। তখন বীমা থেকে বিরাট অঙ্কের টাকা নিত। তো একবার এটা খোঁজ করে দেখা গেল আসলে পাটের মালিক পাট বিক্রি করে আগুন লাগিয়ে দিত। এরপরে একটা বিশাল অঙ্কের টাকা দাবি করে বসত। একই ঘটনা আমি পেয়েছি গার্মেন্টস সেক্টরেও।
“আমার সন্দেহ হল, আমি নাম বলে কাউকে বিব্রত করব না। কিন্তু এটা আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। তারপর নজরদারি শুরু করলাম। ঠিক দেখা গেল যে ঘটনা তাই।... সেটা আমি এক পর্যায়ে আটকালাম। ভালোভাবে তথ্য নিলাম। তো এই ধরনের ঘটনাও কিন্তু ঘটে।”
‘থার্ড পার্টি ইনসুরেন্স’ বন্ধ করে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা বন্ধই করে দিতে হবে। এটা একেবারে ধোঁকাবাজি ছাড়া কিছু না।”
শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে দেশের মানুষের কল্যাণে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেন, বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন উপস্থিত ছিলেন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন।