বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ডেটা সঠিক এবং এতে কোনও ফাঁকফোকর থাকলে বের হয়ে ‘আসতোই’ বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
Published : 27 Feb 2022, 06:02 PM
রোববার জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁয়ে পরিসংখ্যান ভবন সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এমন দাবি করেন।
তিনি বলেন, “পরিসংখ্যান বিভাগের কাজ আমরা ব্যবহার করি। জনগণের সামনে দাঁড়াবার সাহস পাই, শক্তি পাই। ডেটাগুলো যদি এভাবে চমৎকারভাবে সঠিকভাবে না আসত, তাহলে আমরা এইভাবে বারবার বলতে পারতাম না।
“ফাঁকফোকর থাকলে বেরিয়ে আসতোই।”
তথ্য নিয়ে এখন সচেতনতা বেশি মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের মধ্যে, জনগণের মধ্যেই সচেতনতা অনেক বেশি এখন। প্রায়শই আমি সাংসদ হিসেবে হাটে-বাজারে, থানায়-উপজেলায় বিভিন্ন জায়গায় কথা বলি। ঠিকই মানুষে খবর রাখে।”
ডেটার শক্তিকে দানবের সঙ্গে তুলনা করে মান্নান বলেন, “এ দানবকে কাজে লাগাতে হবে। এ দানবের দুটি রোগই আছে- সম্পদও দিতে পারে, আবার হত্যাও করতে পারে।”
সময় মতো ডেটা প্রকাশের ওপর গুরুত্বারোপ করে বিবিএসের উদ্দেশে তিনি বলেন, “সকালের ডেটা সকালেই প্রকাশ করতে হবে, বিকালে নয়।”
জনশুমারি বিলম্ব হওয়ার প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “যদিও জনশুমারি সঠিক সময়ে করতে পারিনি। সেন্সাস নিয়ে সমস্যায় পড়েছি। উদ্দেশ্য আমাদের সৎ। প্রধানমন্ত্রীকে আমি অবহিত করেছি। তবে আশা করছি মার্চ ও এপ্রিল মাসে জনশুমারি নিয়ে আশার আলো দেখব।”
বিবিএসকে জাতীয় ডেটা উৎপাদনের একমাত্র কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, “গত ১৩ বছরে আমরা প্রমাণ করেছি যে জাতীয় পরিকল্পনা জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রবৃদ্ধিকে দ্রুততর করতে পরিকল্পনার বিকল্প নেই।
“সেই পরিকল্পনা কিছু ইচ্ছার কথা নয়। সকল পরিকল্পনা তথ্যভিত্তিক হলে তখনই সেটা পরিকল্পনা হয়। তথ্য ও ডাটা সঠিক ছিল বলেই আমরা সফল হয়েছি।”
বিবিএসকে যুগোপযোগী করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “আমাদের ব্রান্ডিং হচ্ছে আমাদের ডেটা। এই ডেটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হওয়ার মতো করে জেনারেট করতে হবে।”
‘বাংলা নিয়ে জড়তা কেন’
বাংলা ভাষাকে সব ক্ষেত্রে শতভাগ ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “আমি এই জড়তার বৈজ্ঞানিক কোনও কারণ দেখি না। কেন বাংলা ভাষা প্রাধান্য পাবে না।
“প্রায় বলা হয়- ইংরেজি না জানলে নাকি আমরা দুনিয়াতে টিকতে পারব না। চীনা, জাপানি, থাই, রাশিয়ান তারা কটা ইংরেজি বলে? আকাশে-বাতাসে জলস্থলে অন্তরীক্ষে ঘুরছে। তাহলে বাংলা ভাষায় কথা বলে আমরা কেন এগুতে পারব না?”
ভাষার ওপর ব্রিটিশ শাসনের প্রভাবের কথাও উল্লেখ করেন এম এ মান্নান। তার কথায়, “আমাদেরকে মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে আমাদের প্রভুরা, ইংরেজি ইংরেজি।
“শুন্যতা হলেই কিন্তু অন্যরা ঢুকে পড়ে। আমাদের ভাষা যথেষ্ট শক্তিশালী, আমাদের ভাষা শিখিয়েই আমাদের জনগণকে শক্তিশালী করতে হবে।”
বাংলা ভাষাকে সহজ ও সাবলীল করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “অহেতুক পাণ্ডিত্য প্রদর্শনের প্রয়োজন নেই। জনগণ যেটা গ্রহণ করে ফেলেছে, সেটা আপনারা মেনে নিন।
“টেলিফোনকে আমরা দুরালাপনী বলার পরও এখনও পর্যন্ত আমরা জনপ্রিয় করতে পারি নাই। জনগণ টেলিফোন হিসেবে নিয়েছে, এটাকে মেনে নিন।”
যে কোনো ভাষায় অন্য ভাষার প্রভাব থাকার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “বর্তমানে ইংরেজি ভাষার ৭০ ভাগ শব্দ লাতিন এবং ফ্রেঞ্চ। ইংরেজি ভাষা যেটা ছাড়া আমরা চলতে পারি না, সেটাও পরের ওপর নির্ভরশীল।”
এ সময় বিবিএসের সব প্রকাশনা বাংলায় করার নির্দেশনা দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে তথ্য ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন সভাপতিত্ব করেন।