শীতের সবজিতে নামল মূল্যস্ফীতির পারদ

মহামারীকালে খাদ্য সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধিতে গত অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি যে চড়েছিল, তা কমে এসেছে এক মাস বাদে।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2020, 03:56 PM
Updated : 3 Dec 2020, 03:56 PM

বাজারে শীতের সবজি ওঠার পাশাপাশি আলু, পেঁয়াজের দাম কমায় নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি কমেছে বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর।

পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, ডিম, ব্রয়লার মুরগি, মাছ ও মসলার দাম কমাও এতে ভূমিকা রেখেছে।

সাত বছর পর গত অক্টোবরে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে উঠেছিল, নভেম্বরে তা ৫ দশমিক ৫২ শতাংশে নেমে এসেছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরো বৃহস্পতিবার হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, সদ্য শেষ হওয়া নভেম্বর মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ।

এর অর্থ অর্থ হল, ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে যে পণ্য বা সেবার জন্য ১০০ টাকা খরচ করতে হত, ২০২০ সালের নভেম্বরে সেই পণ্য বা সেবার জন্য ১০৫ টাকা ৫২ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।

আগের মাস অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। আর গত বছরের নভেম্বরে এই হার ছিল ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বেশ কিছুদিন মূল্যস্ফীতি সহনীয় ছিল। পেঁয়াজ, আলুসহ কিছু নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের উপরে উঠে গিয়েছিল।

“শীত মৌসুমে শীতের শাক-সবজিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম কমায় মূল্যস্ফীতিও কমে এসেছে।”

তবে করোনাভাইরাস মহামারীর ক্ষতি সামলে উঠতে সরকার সহজ শর্তে এবং কম সুদে সোয়া লাখ কোটি টাকার যে প্রণোদনা দিচ্ছে, সেই টাকা বাজারে এসে মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে থমকে যাওয়া অর্থনীতি সচল করতে বাজারে বাড়তি মুদ্রাপ্রবাহের কারণে ঝুঁকি থাকলেও চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার।

বেশ কয়েক বছর স্থিতিশীল থাকার পর গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের ঘর অতিক্রম করেছিল। পরের তিন মাস (জুলাই, অগাস্ট ও সেপ্টেম্বর) অবশ্য ৬ শতাংশের নিচেই ছিল।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, নভেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ।

গত অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৫ শতাংশ।

অক্টাবরে মতো নভেম্বরেও শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি বেশি হয়েছে।

নভেম্বর মাসে দেশের গ্রামাঞ্চলে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। শহরে এই হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ; খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

অন্যদিকে নভেম্বর মাসে শহরাঞ্চলে খাদ্যের চেয়ে খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি বেশি হয়েছে।

এই মাসে শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ১১ শতাংশ। আর খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতির হ্রাস-বৃদ্ধি পর্যালোচনা করে পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিম, ব্রয়লার মুরগি, মাছ, শাক-সবজি ও মসলার মূল্য চলতি বছরের অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বরে কমেছে। তার প্রভাবেই নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেওড়াপাড়া বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব ধরনের শবজি ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। নতুন আলুও বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজের কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা।

চালসহ অন্যন্য পণ্য আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।

আরও পড়ুন