মূল্যস্ফীতির পারদ চড়ছে

মহামারীকালে এক লাফে ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশে উঠেছে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি। আর খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে ৭ দশমিক ৩৪ শতাংশে পৌঁছেছে।

আবদুর রহিম হারমাছি, প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Nov 2020, 06:26 PM
Updated : 4 Nov 2020, 06:26 PM

এর মধ্যে শহরের চেয়ে গ্রামে জিনিসপত্রের দাম বেশি বেড়েছে। অক্টোবরে শহরে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ, আর গ্রামে তার চেয়ে বেশি ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

পরিসংখ্যান ব্যুরো বুধবার হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, সদ্য শেষ হওয়া অক্টোবর মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশে পৌঁছেছে; যা গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

এর আগে ২০১২-১৩ অর্থবছর শেষে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হার ছিল ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

অক্টোবরের ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ মূল্যস্ফীতির অর্থ হল, ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে যে পণ্য বা সেবার জন্য ১০০ টাকা খরচ করতে হত, ২০২০ সালের অক্টোবরে সেই পণ্য বা সেবার জন্য ১০৬ টাকা ৪৪ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।

আগের মাস সেপ্টেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ। আর গত বছরের অক্টোবরে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা তো অবধারিতই ছিল। বাজারে সব জিনিসের দামই চড়া। মূল্যস্ফীতি বাড়াটাই স্বাভাবিক।”

করোনাভাইরাস মহামারীর ক্ষতি সামলে উঠতে সরকার সহজ শর্তে এবং কম সুদে সোয়া লাখ কোটি টাকার যে প্রণোদনা দিচ্ছে, সেই টাকা বাজারে এসে মূল্যস্ফীতি বাড়াবে বলে আভাস ছিল।

আহসান মনসুর বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন করছে। সরকার মহামারী মোকাবেলার জন্য সোয়া লাখ কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, সেগুলোও বাস্তবায়ন হচ্ছে।

“এ সব কারণে বাজারে টাকার সরবরাহ বেড়ে গেছে। এ সময়ে মূল্যস্ফীতি বাড়াটাই স্বাভাবিক। কোথায় গিয়ে ঠেকে, সেটাই এখন বড় বিষয়।”

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে থমকে যাওয়া অর্থনীতি সচল করতে বাজারে বাড়তি মুদ্রাপ্রবাহের কারণে ঝুঁকি থাকলেও চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার।

বেশ কয়েক বছর স্থিতিশীল থাকার পর গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের ঘর অতিক্রম করে ৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে উঠেছিল। পরের তিন মাস (জুলাই, অগাস্ট ও সেপ্টেম্বর) অবশ্য ৬ শতাংশের নিচেই ছিল।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, অক্টাবরে শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি বেশি হয়েছে।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের চতুর্থ মাস অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে ৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ হয়েছে। সেপ্টেম্বরে এই হার ছিল ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।

আর গত বছরের অক্টোবরে ছিল ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

অক্টোবরে খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৫ শতাংশ হয়েছে। সেপ্টেম্বরে ছিল ৫ দশমিক ১২ শতাংশ।

গত বছরের অক্টোবরে খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

অক্টোবর মাসে দেশের গ্রামাঞ্চলেও সাধারণ মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ হয়েছে। সেপ্টেম্বরে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ। আর বছরের অক্টোবরে ছিল ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

একইভাবে শহর অঞ্চলেও সাধারণ মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ হয়েছে। সেপ্টেম্বরে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। গত বছরের অক্টোবরে ছিল ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, অক্টোবরে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে ছিল ৬ দশমিক ৬১ শতাংশ। গত বছরের অক্টোবরে ছিল ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

অক্টোবরে গ্রামে খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ হয়েছে। সেপ্টেম্বরে যা ছিল ৪ দশমিক ৭১ শতাংশ।

অক্টোবরে শহর অঞ্চলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ হয়েছে। সেপ্টেম্বরে যা ছিল হয়েছে ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ।

আর খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৫১ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে ছিল ৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ।