তরুণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ করে তুলতে শিক্ষা খাতে বাজেটের কমপক্ষে ২০ শতাংশ বরাদ্দ রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে এক অনুষ্ঠান থেকে।
Published : 21 May 2019, 07:52 PM
জাতীয় বাজেট ঘোষণার আগে মঙ্গলবার ইআরএফ কনফারেন্স রুমে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) যৌথভাবে এই আলোচনার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে ‘যুব জনগোষ্ঠীর জন্য বিনিয়োগ বাজেটে প্রতিফলন কী?’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইংরেজি দৈনিক দি ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেস’র পরিকল্পনা সম্পাদক আসজাদুল কিবরিয়া।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ এখন একটি অত্যন্ত জনমিতিক সুবিধার মধ্য দিয়ে সময় পার করছে; তবে কর্মক্ষম সুবিধা বাংলাদেশ ২০৩০ থেকে ২০৪০ সালের পরে আর পাবে না।”
কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সুবিধা কাজে লাগানোর জন্য সরকারের যে পরিকল্পনা, তাতে ‘যথেষ্ট ঘাটতি’ রয়ে গেছে বলে প্রবন্ধে তুলে ধরা হয়।
আসজাদুল কিবরিয়া বলেন, “২২টি মন্ত্রণালয় যারা যুব ও যুব উন্নয়ন সম্পর্কিত কাজগুলো করে তাদের জন্য গত বছর বাজেটে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা, যা পরবর্তীতে ২১ দশমিক ৬ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়।
“অথচ একই সময় মূল বাজেট ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে অর্থাৎ সাতটি এই ২২ মন্ত্রণালয়ের বাজেট মূল বাজেট থেকে অনেক বেশি কমানো হয়েছে।”
সভায় উপস্থাপিত প্রবন্ধ অনুযায়ী, “২০১৯ সালের বাজেটে শিক্ষা খাতে রাখা হয়েছিল মাত্র ১৪ দশমিক ৬০ শতাংশ।”
একে ‘অপ্রতুল’ উল্লেখ করে আসজাদুল কিবরিয়া বলেন, “শুধু তাই না, বেকারত্ব যুবকদের জন্য একটি বড় সমস্যা। কিন্তু এসব সমস্যা সমাধান করার জন্য যারা কাজ করছে, তাদের টাকা নেই।
“এক্ষেত্রে দেখা গেছে সম্মিলিতভাবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও শিল্প মন্ত্রণালয় বরাদ্দ জাতীয় বাজেটের এক শতাংশের কম।”
শিক্ষা খাতের গুরুত্ব তুলে ধরে আসজাদুল কিবরিয়া বলেন, “শিক্ষা খাতে মোট বাজেটের ২০ শতাংশ টাকা আসতে হবে।
“পাশাপাশি দক্ষতা উন্নয়ন ও গুণগত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম আরো জোরালো করতে হবে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় যুব সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দিতে হবে। বাজেট সম্পর্কে জানতে ও বাজেট প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে যুবকদের উৎসাহিত করতে হবে।”
শিক্ষায় বিনিয়োগে জোর দিয়ে অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, “যুবকরাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আর যুবকদেরকে সেই দক্ষতা অর্জন করতে হলে মানসম্মত শিক্ষা এবং ভাল স্বাস্থ্য দুটোই প্রয়োজন।
“আমরা যদি শিক্ষায় বিনিয়োগ করতে না পারি আমাদের সন্তানদের মেধার বিকাশ হবে না। এসডিজি অর্জন হবে না।”
দেশে যুব সমাজের প্রশিক্ষণ নিয়ে গোছানো পরিকল্পনা নেই বলে মত দেন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি, যুবকদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়গুলোকে আমাদের নজর রাখতে হবে। আমাদের দেশে যুব সমাজে এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করছে। আমাদের তাদেরকে অস্থিরতা থেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে।
“আর তাদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারটা অত্যন্ত জরুরি কিন্তু আমি যেটা দেখেছি, বাংলাদেশে এ ব্যাপারগুলো অপরিকল্পিত এবং খুবই বিক্ষিপ্ত ভাবে হচ্ছে যার ফলে আমরা পরিকল্পনা মাফিক একটি দক্ষ সুপরিকল্পিত যুব সমাজ গড়ে তুলতে পারছি না।”
তবে অনুষ্ঠানে বক্তব্যে আলোচকদের হতাশ করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নাহিম রাজ্জাক বলেন, “এ বছরের মার্চ মাস নাগাদ বাজেটের মূল রূপরেখা তৈরি হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে নতুন করে যুবকদের জন্য কোনো কিছু করার সম্ভাবনা নেই।”
তিনি একইসঙ্গে বলেন, “তবে আমাদের একটি পরিকল্পনা আছে, আমরা সে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। এর মধ্যে বেশ কিছু বড় বড় অর্জন আমাদের রয়েছে। তবে আমি মনে করি, আমাদের কাজে কিছুটা সমন্বয়ের সমস্যা রয়েছে। আমরা আশা করি সেগুলো আমরা আস্তে আস্তে কাটিয়ে উঠতে পারব।”