সুদের হার কমাতে ব্যাংকের জন্য আরও ছাড়

বেসরকারি ব্যাংকগুলো যেন সুদের হার কমাতে পারে সে জন্য তাদেরকে আরও সুবিধা দিতে প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখার নিয়মে ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2018, 01:29 PM
Updated : 24 June 2018, 01:29 PM

গ্রাহকের রপ্তানি বিল ও ব্যাংক গ্যারান্টি দেওয়ার বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে আর মুনাফার ১ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হবে না।

বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের (বিআরপিডি) মহাব্যবস্থাপক আবু ফারহা মো. নাছের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যাংকগুলো সুদ কমানোর যে ঘোষণা দিয়েছে তারা যেন তা বাস্তবায়ন করতে পারে তাই তাদেরকে ছাড় দেওয়া হল ।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বেসরকারি ব্যাংকগুলো ১২ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদে ঋণ বিতরণ করছে। আর আমানত সংগ্রহ করছে ৮ থেকে ১১ শতাংশ সুদে।

গত ১৪ এপ্রিল বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১০ শতাংশের নিচে (সিঙ্গেল ডিজিট) নামিয়ে আনতে ব্যাংক মালিকদের তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর ২০ জুন বৈঠক করে ব্যাংক ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয় বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)।

নাছের বলেন, “প্রভিশন বা সঞ্চিতি রাখলে ব্যাংকের খরচ বাড়ে। আমরা কিছু সঞ্চিতি রাখার নিয়ম বাতিল করেছি। এতে ব্যাংকগুলোর মুনাফায় ইতিবাচক প্রভাব আসবে, তবে ব্যাংক এর সম্পদ ঝুঁকিতে পড়বে না।”

আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে ঋণের শ্রেণিমান অনুযায়ী প্রতিটি ব্যাংককে নির্ধারিত হারে প্রভিশন বা নিরাপত্তাসূচক অর্থ সংরক্ষণ করতে হয়।

সাধারণত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমানের ঋণের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ ঋণে শতভাগ পর্যন্ত প্রভিশন রাখার নিয়ম আছে।

ব্যাংকগুলোকে তাদের অর্জিত মুনাফা থেকে এ এই অর্থ সংরক্ষণ করতে হয়। প্রভিশন ঘাটতি থাকলে কোনো ব্যাংক লভ্যাংশ দিতে পারে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০১২ সালের এক নির্দেশনায় বিলস ফর কালেকশন বা গ্রাহকের হয়ে বিল সংগ্রহে এবং বড় প্রকল্পে গ্রাহকের হয়ে ব্যাংক গ্যারান্টি দেওয়ার ক্ষেত্রেও ১ শতাংশ হারে সাধারণ প্রভিশন বা সঞ্চিতি রাখার বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছিল।

বৃহস্পতিবারের প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই বাধ্যবাধকতা তুলে নিয়েছে। ফলে গ্রাহকের বিল বা বড় প্রকল্পের ব্যাংক গ্যারান্টির ক্ষেত্রে গ্রাহকের ব্যর্থতার দায় ব্যাংককের নিতে হবে না।

বিআরপিডির মহাব্যবস্থাপক নাছের বলেন, “যখন একজন রপ্তানিকারক ব্যাংকে বিল জমা দেন, অর্থাত্ তিনি পণ্য পাঠিয়ে দিয়েছেন, এখন তিনি বিদেশ থেকে টাকা পাবেন... তিনি যদি বিদেশ থেকে টাকা না পান এটা ব্যাংকের ঝুঁকি নয়, এটা রপ্তানিকারকের ঝুঁকি। তাই বিলস ফর কালেকশন এর উপর ১ শতাংশ প্রভিশন বা সঞ্চিতি রাখার নিয়ম বাতিল করেছি।”

ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে সাধারণ প্রভিশনের শর্ত শিথিল করার বিষয়ে তিনি বলেন, বড় বড় কাজের জন্য দেশীয় ব্যাংকগুলো এবং বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য আর্ন্তজাতিক সংস্থাগুলো যে ব্যাংক গ্যারান্টি দেয়, তার ওপর ১ শতাংশ প্রভিশনও এখন থেকে আর রাখতে হবে না ।

“যে সব ক্ষেত্রে এডিবি বা বিশ্ব ব্যাংক গ্যারান্টি দেয় সে ক্ষেত্রে আমাদের দেশের ব্যাংকের আর ঝুঁকি থাকে না। তাই এর উপর ১ শতাংশ প্রভিশন বা সঞ্চিতি রাখার নিয়ম বাতিল করেছি ।”