আদিগন্ত সবুজ ধানের মাঠ- চিরায়ত গ্রামবাংলার এই রূপের বিপরীত চিত্র ঢাকার সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর গ্রামে। এই গ্রামের মাঝ বরাবর চলে যাওয়া রাস্তার দুই পাশজুড়ে যতদূর চোখ যায় শুধু গোলাপের বাগান।
Published : 25 Dec 2017, 07:25 PM
গোলাপের সুবাসে বদলে গেছে এখানকার মানুষের জীবনও, যার ছোঁয়া লেগেছে আশপাশের শ্যামপুর, কমলাপুর, বাগ্মীবাড়ি গ্রামেও।
এসব গ্রামে সাদা গোলাপ, গ্লাডিওলাস, জারবেরা চাষ হলেও সবচেয়ে বেশি চাষ হয় মিরান্ডা প্রজাতির লাল গোলাপ।
সাভারের এসব গ্রামে প্রায় সারাবছর গোলাপ চাষ হলেও মূলত শীতকালই আসল মৌসুম। এসময় পরিপূর্ণ যৌবন লাভ করে ফুলটি, হাসি ফোটে চাষিদের মুখে।
গোলাপের মৌসুমে প্রতি বিঘা জমি থেকে এক থেকে দেড় লাখ টাকা লাভ হয় চাষিদের।
সাদুল্লাপুরে ২৫-৩০ বছর ধরে চার বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করছেন সাবেত আলী। মিরপুরের বাসিন্দা সাবেত আগে বোটানিক্যাল গার্ডেনের কর্মচারী ছিলেন, সেখান থেকেই গোলাপ চাষ শিখেছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যত্ন নিলে সারা বছরই গোলাপ হয়; কিন্তু শীতকালে গোলাপে যৌবনের বাহারে পাইবেন। আমি গোলাপ নিয়ে আগারগাঁও ফুলের বাজারে বিক্রি করি। তিনশ গোলাপের দাম মিলে ১৩শ থেকে ১৪শ টাকা।”
সাবেত জানান, এই গ্রামের পাঁচশ থেকে সাতশ গোলাপ চাষি রয়েছে, গ্রামবাসীদের ৯০ শতাংশই এর সাথে সংশ্লিষ্ট।
সাদুল্লাপুর গ্রামেই গোলাপের তিনটি পাইকারি বাজার রয়েছে। সেখানেই ফুল বিক্রি করেন আরেক চাষি সোলাইমান।
তিনি বলেন, “আগে সবজি ফলাইতাম; কিন্তু পোষায় না, এর চাইতে গোলাপ চাষ অনেক লাভের, খাটনিও কম। আমি দুই বিঘা জমিতে গোলাপ লাগাইছি, দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লাভ হইব।”
তিনি বলেন, “১৮ বছরের বেশি সময় ধইরা গোলাপ চাষ করতেছি। আগে সবজি ফলাইতাম, পেট চলত না, এখন গোলাপ আমাগো জীবনে সচ্ছলতা আনছে।”
গোলাপ চাষ লাভজনক হলেও ফুল সংরক্ষণ, পোকামাকড়-রোগ প্রতিকার ও স্থায়ী পাইকারি বাজার না থাকায় সমস্যার কথা জানিয়েছেন চাষিরা।
গোলাপ চাষি সোলাইমান বলেন, “এই বছর গাছে নতুন এক অসুখ হইছে, পাতা সব লাল হয়ে যাইতাছে আর ফুল কম হচ্ছে। বাগানের ৬০ শতাংশ গাছেই এই অসুখ।”
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গোলাপ চাষ অত্যন্ত লাভজনক। কিন্তু নানা রোগ-বালাইয়ে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর কারণ হতে পারে এ বছরের অতিবৃষ্টি।
“আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে গাবতলীতে এক একর জমির উপর ফুলের স্থায়ী পাইকারি বাজার তৈরি করার অনুমোদন পেয়েছি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে। এছাড়া শুধু গোলাপ সংরক্ষণের জন্য ২০ শতক জমির উপর সাভারে একটি ‘কুলিং চেম্বার’ স্থাপনেরও কথা রয়েছে। এগুলো হয়ে গেলে আশা করি চাষিদের সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে। সেই সাথে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ফুল চাষ সংক্রান্ত আলাদা একটি বিভাগ সৃষ্টির জন্য আবেদন জানিয়ে আসছি আমরা।”