২০২১ সালের মধ্যে দেশের সব মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য অর্জনের প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে ছয়টি উপজেলার শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পেতে যাচ্ছেন, যা শনিবার প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
Published : 11 Aug 2016, 10:50 PM
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বৃহস্পতিবার নিজের মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
এই ছয় উপজেলা হচ্ছে- গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া, নারায়ণগঞ্জের বন্দর, নরসিংদীর পলাশ, চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, কুমিল্লার আদর্শ সদর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অধীনে ৫৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়ার এই কাজ হয়েছে, যার গ্রাহক সংখ্যা ২ লাখ ৩৮ হাজার ৫০ জন।
নসরুল হামিদ বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে সারা দেশে বিদ্যুৎ দেওয়ার যে ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন, তার অংশ হিসাবে ২০১৮ সালের মধ্যেই ৯৫ শতাংশ জায়গায় বিদ্যুতায়ন করতে পারবেন তারা।
প্রতিমন্ত্রী জানান, পল্লী বিদ্যুতে ‘সিস্টেম লস’ কমে ১২ দশমিক ৪৮ ভাগে নেমে এসেছে। মাসে বিদ্যুৎ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার, যা আগে ছিল ২৫০ কোটি টাকা।
প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে তিন লাখ গ্রাহককে বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
“শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আসা প্রথম দফার ৬টি উপজেলা ছাড়াও এ বছরের ডিসেম্বরে আরও ২৮টি, ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে ৭৫টি, ডিসেম্বরের মধ্যে ৭৯টি, ২০১৮ সালের জুনে ১১১টি, ডিসেম্বরে ১৭৬টি উপজেলা বিদ্যুতায়নের আওতায় আসবে। এই সময়ের মধ্যে মোট ৪৬৫ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন হয়ে যাবে। ”
পল্লী বিদ্যুতে এ সংক্রান্ত ১৪টি প্রকল্প চলছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এর ব্যয় প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা। প্রস্তাবিত সাত প্রকল্পের মূল্য প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা। প্রিপেইড মিটারের অধীনে পল্লীতে প্রায় ৫৭ লাখ গ্রাহককে নিয়ে আসা হচ্ছে।
“৩ হাজার মেগাওয়াটে বাংলাদেশে যে পরিমাণ বিদ্যুতায়ন ছিল, তার থেকে ধীরে ধীরে ’২১ সালে ২৪ হাজার মেগাওয়াটে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি, ২০১৮ সালের মধ্যে ১৬-১৭ হাজার মেগাওয়াট ছুঁয়ে ফেলব।”
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ কবে নাগাদ পাওয়া যাবে-এ প্রশ্নের জবাবে এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথা জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের একটা পর্যায়ে পৌঁছাতে হলে আমাদের আরও তিন বছর কাজ করতে হবে। আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ কিন্তু সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়া। আমরা এখনও পল্লী বিদ্যুতে ৫০-৬০ শতাংশ ‘লাইফ লাইন’ থেকে বিদ্যুৎ দিচ্ছি। যেখানে ৫০ কিলোওয়াটের নীচে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে।
“সরকার সেই জায়গায় সব থেকে বেশি ভর্তুকি দিচ্ছে। সেই দাম অন্য যারা বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে, সেখানে এডজাস্ট করা হচ্ছে। আপনারা বুঝতে পারছেন, ধীরে ধীরে এই জায়গা থেকে (ভর্তুকি) কমে আসছে। হয়ত আরও ৪-৫ বছরে অনেকখানি কমে আসবে। তখন কিন্তু বিদ্যুতের দামটাও একটা সাশ্রয়ী মূল্যে যাবে এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকবে।”
গ্রামে যেখানে সেখানে ঘর বাড়ি জমির উপর দিয়ে লাইন টেনে না দিয়ে কোনো নিয়মের আওতায় আনা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের বাংলাদেশের গ্রামগুলো কিছু বিচ্ছিন্ন জায়গায় খানিকটা। শহুরে পরিকল্পনাটাও পরিকল্পিত না। যার কারণে বিদ্যুতায়ন করতে গিয়েও আমরা অসুবিধা অনুভব করছি। তবে আমরা চেষ্টা করছি, যতদূর পারা যায় এই জায়গাটায় অন্তত দেখে শুনে বিদ্যুতের লাইন করা।
“শহর ও পৌরসভাকেন্দ্রিক বিদ্যুৎ আন্ডারগ্রাউন্ড কেবলে নিয়ে যেতে আমরা একটা প্রকল্প করছি। ঢাকায় এটা আমরা শুরু করে ফেলেছি। ঢাকার আশপাশে বিদ্যুতায়ন করতে প্রধানমন্ত্রী একটা অনুশাসন দিয়েছেন, সে অনুসারে কাজ চলছে।”
পিডিবিতে চলমান আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, কোম্পানি হবে কি না, এটা নিয়ে আন্দোলন চলছে।
“আমরা মনে করি, অচিরেই এই আন্দোলনটা...। তাদের মধ্যে তথ্যে ঘাটতি ছিল, সেটা অনেকখানি কমে এসেছে।
“ডিস্ট্রিবিউশনের জায়গায় সরকার কোম্পানিতে চলে যেতে চাচ্ছে। উৎপাদনের জায়গায় একটা জায়গায় থাকতে চাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে আমরা কোম্পানিতে নিয়ে যাব। এটাই সরকারের চিন্তা ভাবনা।”
“যেমন আমরা নর্থ-ওয়েস্ট ও সাউথ জোনে ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে নিয়ে যাব। সেটার প্রক্রিয়াই চলছে। সরকার মনে করছে, সকলেরই লাভ হচ্ছে। যারা গ্রাহক তাদের সুবিধাই বেশি। তাদের কাছে জবাবদিহি থাকছে। সিস্টেম লস অনেকখানি কমে আসছে, যারা চাকরি করছেন, তাদের বেতনও দ্বিগুণের বেশি হয়ে গেছে। এ কারণেই সরকার মনে করছে, ধীরে ধীরে কোম্পানিতে নিয়ে যেতে। ”