ব্যবসায়ীদের পর এবার ভোক্তা সংগঠনের পক্ষ থেকেও পণ্য বিক্রির উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ নিয়ে বিরোধিতা এসেছে।
Published : 24 May 2016, 08:18 PM
এতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে তুলবে বলে আশঙ্কা কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব)।
বাজেট ঘোষণার আগে মঙ্গলবার ক্যাবের এক সংবাদ সম্মেলনে ১৫% ভ্যাটের বিরোধিতা করলেও রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধির জন্য আয়কর আদায় বাড়ানোর প্রতি মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের কথা রয়েছে, যা সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছে ব্যবসায়ী মহল।
বর্তমানের মতো প্যাকেজ পদ্ধতিতে ভ্যাট আদায়ের সুপারিশ জানানোর পাশাপাশি শুরুতে ভ্যাটের হার কমিয়ে ধরার প্রস্তাবও আসছে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, “সরকার রাজস্ব আয় বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে সব পণ্যের বিক্রির ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব বিবেচনা করছে।
“এই প্রস্তাব বাস্তবসম্মত বলে আমরা মনে করি না। এতে দ্রব্যমূল্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং ভ্যাট ফাঁকির প্রবণতা বাড়বে।”
ক্যাব মনে করে, মানুষের নিত্য ব্যবহার্য প্রয়োজনীয় সেবা ও পণ্যের বিক্রয় মূল্যের ওপর ভ্যাট আরোপ সরকারের জনকল্যাণমুখী নীতির বিরোধী।
২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে নিত্য প্রয়োজনীয় সেবা ও পণ্য ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা এবং নতুন কোনো শুল্ক আরোপ না করার সুপারিশ করেছে ভোক্তা সংগঠনটি।
পাশাপাশি বিলাস পণ্যের ওপর আরোপিত কর যাতে সরকারি কোষাগারে যায়, তা তদারকির পরামর্শও দিয়েছে সংগঠনটি।
গোলাম রহমান বলেন, “রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সব পণ্য, বিশেষ করে তামাকজাত পণ্যের ওপর বর্ধিত হারে করারোপ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি আয়কর আদায়ের তৎপরতা বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগও নিতে হবে।”
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির সঙ্গে আয়কর প্রদানকারী ব্যক্তির সংখ্যা কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতি বছর ২৫ শতাংশ হারে আয়করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।”
করারোপের সর্বনিম্ন সীমা বাড়ানোর বিষয়টিও বিবেচনা করতেও সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে ক্যাব।
দ্রব্যমূল্য ‘নিয়ন্ত্রণে রাখুন’
রোজার আগে ইতোমধ্যে বাজার পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে দাবি করে বাজার নিয়ন্ত্রণে মনোযোগী হতে সরকারকে তাগিদ দিয়েছে ক্যাব।
ক্যাবের মূল্যায়নে বলা হয়েছে, “নিত্যপণ্যের বাজার গুটিকয়েক মানুষের হাতে নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারণে যখন-তখন দাম বাড়াতে পারছে তারা। সরকারের উচিৎ বাজারে কারসাজির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।”
নিত্য পণ্যের মজুদ যথেষ্ট রয়েছে দাবি করে আসছে রোজায় দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল থাকবে বলে আশা প্রকাশ করছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
“কিন্তু এরই মধ্যে রোজা শুরুর ২/১ মাস আগেই বেশ কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। প্যাকেট লবণের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। রসুনের দাম বেড়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা,” বলেন গোলাম রহমান।
এজন্য অসাধু ব্যবসায়ীদের দায়ী করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ক্যাব সভাপতি। তবে কোনো নির্দোষ ব্যবসায়ী যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সে দিকেও দৃষ্টি রাখতে বলেছেন তিনি।
‘দাম বাড়ান’ গ্যাসের, ‘কমান’ বিদ্যুতের
গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ নিলে এর দাম বাড়ালে আপত্তি নেই ক্যাবের। তবে বিদ্যুতের দাম কমানোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
জ্বালানি তেলের দাম কমায় ‘কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র’গুলোতে উৎপাদন ব্যয় ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে দাবি করে ক্যাবের মূল্যায়নে বলা হয়, সে কারণে বিইআরসির মাধ্যমে গণশুনানি করে বিদ্যুতের দাম কমানো উচিৎ।
সেই সঙ্গে বলা হয়, “দেশে গ্যাস সরবরাহ অপর্যাপ্ত। গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির অর্থায়ন সুগম করার লক্ষ্যে ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে ‘গ্যাস উন্নয়ন তহবিল’ও গঠন করা প্রয়োজন।”
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম অনেকদিন ধরে কম থাকায় বিপিসির যে লাভ হচ্ছে, তাকে মুনাফা হিসাবে বিবেচনা না করে ‘জ্বালানি তেলের মূল্য স্থিতিশীলতা তহবিল’ গঠনে তা কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছে ক্যাব।