এই পাঁচ জনকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে সম্প্রতি কুমিল্লায় খুন হওয়া এক অটোরিকশা চালকের হত্যার রহস্যও উন্মোচিত হয়েছে।
Published : 28 May 2024, 10:22 PM
অটোরিকশা চালককে কৌশলে নেশাদ্রব্য খাইয়ে ফেলে রাখা হত মহাসড়কে, পরে গাড়িতে পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারাত চালক। আর অটোরিকশাটি ছিনতাই করে রং পরিবর্তন করে দ্রুত বিক্রি করে দেওয়া হত।
এভাবে কৌশলে চালককে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে কুমিল্লা জেলা পুলিশ। তাদের কাছ উদ্ধার করা হয়েছে সাতটি অটোরিকশা, অটোরিকশার ব্যাটারিসহ বিপুল যন্ত্রাংশ।
মঙ্গলবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়ে পুলিশ সুপার মো. আব্দুল মান্নান বলেন, এই পাঁচ জনকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে সম্প্রতি কুমিল্লায় খুন হওয়া এক অটোরিকশা চালকের হত্যার রহস্যও উন্মোচিত হয়েছে।
গ্রেপ্তাররা হলেন- কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার শাকতলা এলাকার মো. আবদুল হাকিমের ছেলে মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে জাবেদ (২৬), শাকতলা উত্তরপাড়া এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মো. রুবেল (২৮), চান্দিনার মহিচাইল ইউনিয়নের অম্বরপুর এলাকার মো. আব্দুল রবের ছেলে মো. শরীফ (২৫), চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর এলাকার মৃত আরব রহমানের ছেলে মো. আমির হোসেন (৩২) এবং একই এলাকার মৃত সুরুজ মিয়ার ছেলে মো. সোহাগ হোসেন (২৫)।
পুলিশ সুপার মান্নান জানান, গত ১৭ মে কুমিল্লা নগরীর টিক্কারচর এলাকার অটোরিকশা চালক পরান তার অটোরিকশাসহ নিখোঁজ হন। পরে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ এলাকার হারাতলী এলাকায় মহাসড়ক থেকে উদ্ধার করা অজ্ঞাত যানবাহনের চাপায় পিষ্ট পরানের মরদেহ।
এ ঘটনায় পরাণের স্ত্রী বাদী হয়ে কুমিল্লা কোতয়ালি থানায় মামলা করেন।
ওই মামলার তদন্তের সূত্রে পুলিশ জানতে পারে, কিছুদিন ধরে কুমিল্লা নগরীসহ সদর দক্ষিণ ও বুড়িচং থানা এলাকায় প্রায় একই রকম কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে।
এর জেরে সোমবার কুমিল্লা নগরীর গোবিন্দপুর এলাকা থেকে জাবেদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে গ্রেপ্তার করা হয় শরীফ ও রুবেলকে।
পরে চৌদ্দগ্রামের গোবিন্দপুর গ্রামের আমির হোসেনের গ্যারেজে অভিযান চালিয়ে সাতটি অটোরিকশা, চারটি অটোরিকশার ব্যাটারি এবং বেশ কিছু অটোরিকশার যন্ত্রাংশ উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার করা হয় গ্যারেজ মালিক আমির হোসেন এবং তার সহযোগী সোহাগ মিয়াকে।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পুলিশ সুপার বলেন, “চক্রটি দীর্ঘদিন যাবৎ সন্ধ্যায় নগরীসহ আশপাশ এলাকা থেকে অটোরিকশা ভাড়া নিত। এক পর্যায়ে সু-কৌশলে তারা অটোরিকশা চালককে নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে বিস্কুট/কোমলপানীয় খাইয়ে দিত।
“চালক চেতনাহীন হয়ে পড়লে তাকে মহাসড়কে ফেলে রাখত। এরপর অটোরিকশা নিয়ে চলে যেত। এক্ষেত্রে মহাসড়কে ভারী যানবাহনে পিষ্ট হয়ে মারা যায় অটোচালক। যেমনটি হয়েছিল পরান নামের অটো চালকের সঙ্গে।”
এভাবেই চক্রটি দীর্ঘদিন যাবৎ ছিনতাইয়ের পর চোরাই অটোরিকশা তাৎক্ষণিকভাবে রঙসহ নানা রকম পরিবর্তন ঘটিয়ে অন্যত্র বিক্রয় করে আসছে।
জিজ্ঞাসাবাদে চক্রটি বেশ কয়েকটি ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। এ চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলেও জানান পুলিশ সুপার।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) খন্দকার আশফাকুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কামরান হোসেন, কুমিল্লা কোতয়ালি মডেল থানার ওসি ফিরোজ হোসেন, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি র্জ রাজেস বড়ুয়া।