আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায় সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং

প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি ৯৭ শতাংশ।

কাজী মোবারক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2023, 03:15 AM
Updated : 21 July 2023, 03:15 AM

আমদানি করা জ্বালানি তেল সাগর থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে খালাসের জন্য সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) নির্মাণ শেষে এখন অপেক্ষা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের।

মহেশখালীর মাতারবাড়ি থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে গভীর সাগরে স্থাপিত ভাসমান বয়ার মাধ্যমে জ্বালানি খালাসের কাজ শিগগিরই উদ্বোধন হওয়ার কথা।

প্রকল্প কর্মকর্তা মনজেদ আলী শান্ত জানান, প্রায় ৮ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চলতি বছরের যে কোনো সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) প্রকল্প উদ্বোধন করবেন।

প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরতে গিয়ে এই কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি ৯৭ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৮৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

“বর্তমানে ১১ দিনে যে পরিমাণ জ্বালানি তেল খালাস করা যায়, প্রকল্পটি চালু হলে সেটির সময় কমে আসবে মাত্র ৪৮ ঘণ্টায়। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর লাইটার জাহাজের প্রয়োজন হবে না। এতে পরিবহন খরচ ও অপচয় হ্রাস পেয়ে সরকারের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।"

প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ ও চীন সরকারের জিটুজি চুক্তির আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অধীন কোম্পানি ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ার কোম্পানি লিমিটেড।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৯০ একর জায়গার উপর ছয়টি স্টোরেজ ট্যাংক ও পাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি পরিশোধিত তেলের জন্য ও তিনটি অপরিশোধিত তেলের জন্য।

প্রতিটি পরিশোধিত স্টোরেজ ট্যাংকারের ধারণ ক্ষমতা ৫০ হাজার ঘনমিটার। অপরিশোধিত স্টোরেজ ট্যাংকারের ধারণ ক্ষমতা ৩০ হাজার ঘনমিটার।

মুরিং পয়েন্ট থেকে ৩৬ ইঞ্চি ব্যসের দুটি আলাদা পাইপলাইনের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল ও ডিজেল আনলোড করা হবে। এরপর মহেশখালী স্টোরেজ ট্যাংক থেকে ১৮ ইঞ্চি ব্যাসের দুটি পৃথক পাইপলাইনের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল ও ডিজেল যাবে ইস্টার্ন রিফাইনারির শোধনাগারে। 

বর্তমানে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি বছরে ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধন করতে পারে। ইস্টার্ন রিফাইনারি দ্বিতীয় ইউনিট চালু হলে পরিশোধন ক্ষমতা ৪৫ লাখ টনে উন্নীত হবে। এই পরিশোধন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে এসপিএম।

Also Read: পাইপলাইনে ত্রুটি, লাইটারেজ জাহাজেই তেল খালাসের উদ্যোগ

Also Read: সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং: সাগরে পাইপ লাইনে তেল খালাসের পরীক্ষামূলক যাত্রা

চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা এবং কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলের গভীরতা কম হওয়ায় মাদার অয়েল ট্যাংকারগুলো সরাসরি খালাস করা সম্ভব হয় না।

সে কারণে এসব ট্যাংকার গভীর সমুদ্রে নোঙ্গর করে ছোট ছোট লাইটারেজ ভেসেলের মাধ্যমে অপরিশোধিত তেল খালাস করা হয়।

এভাবে ১১ দিনে একটি এক লাখ ডিডব্লিউটি ট্যাংকার খালাস করা যায়। গতানুগতিক এই পদ্ধতি সময়সাপেক্ষ, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় পাইপলাইন বসানোর প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়।

প্রকল্প কর্মকর্তা মনজেদ আলী শান্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাহাজ ভর্তি অপরিশোধিত যে তেল আসে, সেই তেল মাদার ভেসেল থেকে লাইটারিং করে চট্টগ্রামে নেওয়া হত। এতে ১০ থেকে ১১ দিন সময় লাগার পাশাপাশি অনেক আর্থিক ব্যয় হত।

“প্রকল্পটি চালু হলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমরা একটি জাহাজ খালাস করতে পারব।”

এতে করে সরকারের বছরে ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ মাসের শুরুতে পাইপলাইনের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে তেল খালাস শুরু হয়।

“কিন্তু ছোট একটি দুর্ঘটনার কারণে দেরি হচ্ছে। এর একটি প্রতিবেদন আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। তারা শিগগিরই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।"

এসপিএমের বার্ষিক আনলোডিং ক্ষমতা ৯০ লাখ টন। এ প্রযুক্তিতে এক লাখ ২০ হাজার ডিডব্লিউটি (ডেডওয়েট টনেজ) ধারণ ক্ষমতার ক্রুড অয়েল ট্যাংকার খালাসে সময় লাগবে ৪৮ ঘণ্টা। আর ৭০ হাজার ডিডব্লিউটি ধারণ ক্ষমতার ডিজেল ট্যাংকার খালাসে ২৮ ঘণ্টা সময় লাগবে।

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়াসিন বলেন, “প্রকল্প কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে এই প্রকল্প চালু হলে ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। আর এই ৮০০ কোটি টাকা আমাদের রিজার্ভে যুক্ত হবে।”

প্রকল্পটি চালু হলে অনেকের কর্মসংস্থান হবে জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, “প্রকল্পটি পরিচালনার জন্য আলাদা একটি কোম্পানি হতে যাচ্ছে। এটি জাতীয় প্রকল্প হলেও স্থানীয় মানুষজনেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এতে তাদের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে।"