বর্তমানে করদাতার সংখ্যা ৩৫ লাখের মতো। আগামী এক বছরের মধ্যে তা এক কোটিতে উন্নীত করার লক্ষ্যের কথা জানান এনবিআর চেয়ারম্যান।
Published : 30 Nov 2023, 08:02 PM
আয়কর না দিলে গাড়ি-বাড়ি আর অন্যান্য সম্পদ কেনা যাবে না- এমনটা বোঝানো গেলে করযোগ্য আয়ের মানুষ আয়কর দেবেন বলে মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন।
কর আদায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা ভালো আচরণ করলে করদাতারা কর দিতে আগ্রহী হন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার জাতীয় আয়কর দিবস ২০২৩ উপলক্ষে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন কথা বলেন।
ঢাকার আগারগাঁয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবনের সম্মেলন কক্ষে ‘নতুন আয়কর আইন ও কর পরিপালন: পরিবর্তিত প্রেক্ষিত’ শীর্ষক এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মু. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজস্ব বোর্ডের আয়কর অনুবিভাগের সদস্য (নীতি) ড. সামস উদ্দিন আহমেদ। সেমিনারে ভ্যাট অনুবিভাগের সদস্য মো. মাসুদ সাদিক এবং কর প্রশাসন ও মানব সম্পদ অনুবিভাগের সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদ বক্তব্য রাখেন।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা কর কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনারা যদি সাধারণ মানুষকে বোঝাতে পারেন যে আপনি টাকা আয় করছেন কিন্তু আয়কর না দিলে আপনি গাড়ি, বাড়ি বা অন্য কোনও সম্পদ কিনতে পারবেন না। এগুলো কিনতে হলে আপনাকে রিটার্ন দেখাতে হবে। তাহলে (আয়করযোগ্য) মানুষ অবশ্যই কর দিবে।
“মানুষকে যদি আপনারা বোঝাতে পারেন, ট্যাক্স দেওয়ার লাভটা কী সেক্ষত্রে কিন্তু উনি ট্যাক্স দেবেন।”
প্রত্যেক বছর আগের বছরের চেয়ে বেশি কর দিতে হবে-এমন ভয়ে মানুষ কর দিতে এগিয়ে আসে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। মানুষের এ ভুল ধারণা ভাঙতে কর কর্মকর্তাদের কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
সবমিলে তিনি দেশে কর সংস্কৃতি গড়ে তোলার মাধ্যমে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পরামর্শ দেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি শঙ্কা কাজ করে যে তাকে করজালের ভেতরে ঢুকিয়ে হয়রানি করা হবে।
বর্তমানে করদাতার সংখ্যা ৩৫ লাখের মত জানিয়ে তিনি আগামী এক বছরের মধ্যে তা এক কোটিতে উন্নীত করার লক্ষ্যের কথা জানান। এ লক্ষ্য পূরণে সাধারণ মানুষের মধ্যে কর নিয়ে হয়রানির আশঙ্কা দূর করতে হবে।
তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষকে কর কেন দিতে হবে তা বোঝাতে হবে। কর দিলে আপনি পাবেন একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। এটিই সবাইকে বোঝাতে হবে।”
কর আইন সহজীকরণের মাধ্যমে কর প্রদান ব্যবস্থা সহজ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে আয়কর আইন ২০২৩ বাংলায় প্রণয়ন করেছি। এরফলে এখন সাধারণ মানুষ আইন বুঝতে পারেন।
“আমরা নতুন পদ্ধতি টিআরপি চালু করতে যাচ্ছি। সেটি হলে রিটার্ন জমা আরও সহজ হবে।”
এর আগে মূল প্রবন্ধে সদস্য সামস উদ্দিন বলেন, বিগত ১২ বছরে আয়কর আহরণে প্রায় ৩ গুণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ খানা আয় ব্যয় জরিপের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ওই জরিপের তথ্য অনুযায়ী দেশের ১২ শতাংশ মানুষ মাসিক ২৫ হাজার টাকার বেশি ব্যয়ের তথ্য দিয়েছে। সে হিসাবে ওই সময়েই দেশে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ লাখ মানুষের করযোগ্য আয় আছে। অথচ গত অর্থবছর কর সর্বমোট কর দিয়েছেন মাত্র ৩৫ লাখ।
বর্তমানে টিআইএন আছে ৯৫ লাখ। সবমিলে দেশে আয়কর দাতার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আয়ের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
গত পাঁচ দশকে মোট রাজস্বে প্রত্যক্ষ করের অবদান ক্রমান্বয়ে প্রায় চারগুণ বেড়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় মূল প্রবন্ধে।