আইএমএফের শর্ত মেনে চলতি ডিসেম্বর শেষে নিট রিজার্ভ ১৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
Published : 19 Dec 2024, 10:24 PM
আন্তর্জাতিক মুদ্রা মহবিল-আইএমএফের শর্ত পূরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে থাকায় বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এক সপ্তাহে বেশ খানিকটা বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুসারে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার, যা গত ১১ ডিসেম্বর ১৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার ছিল।
অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে রিজার্ভে যোগ হয়েছে ৭৫৩ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইএমএফের শর্ত মেনে চলতি ডিসেম্বর শেষে নিট রিজার্ভ ১৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। সেজন্য ‘ডলার বিক্রি না করে’ উল্টো বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে কিনছে।”
ডলার কেনায় রিজার্ভ বাড়ছে কি না, এই প্রশ্নে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনের আরা শিখা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রিজার্ভ কীভাবে বাড়ছে সেই ব্যাখ্যা আমি দেব না।"
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়াতে ডলার কেনার প্রতিক্রিয়ায় আবার টাকার বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাটির দাম বেড়ে যাচ্ছে। বুধবার কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক রেমিটেন্স কিনেছে ১২৬ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২৭ টাকায়, যা মাস খানেক আগেও ছিল ১২০ টাকা। মানি এক্সচেঞ্জগুলো ডলার বিক্রি করছে আরও বেশি দরে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা বলেন, “অনেক ব্যাংক ইন্টারব্যাংকে ডলার না দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করছে। আর বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোও ব্যাংকগুলোতে বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে।”
গত মাসে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মাধ্যমে আমদানি দায় পরিশোধের কারণে রিজার্ভ কমে ১৮ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে যায়।
এরপর রেমিটেন্স ও রপ্তানির অর্থ যোগ হওয়ায় রিজার্ভ আবার বাড়তে শুরু করে, যদিও তা গত অগাস্ট মাসে সরকার পতনের সময়ের তুলনায় এখনও কম।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের চারদিন আগে ৩০ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ করে। তখন রিজার্ভে ছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার, ২১ অগাস্টও তাই ছিল।
২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারীর সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ রেকর্ড ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। কিন্তু বিশ্ববাজারে শেষে জ্বালানি আর খাদ্যের দাম বৃদ্ধি এবং এরপর ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরু হলে বেড়ে যায় আমদানি খরচ। ২০২২ থেকে কমতে থাকে রিজার্ভ।
গত দুই অর্থবছর বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে সরকারি ঋণপত্র বা এলসি খোলার জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে, তাতেও কমছে বৈদেশিক মুদ্রা।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন আহসান এইচ মনসুর। সে সময় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি তিনি বন্ধ করে দিয়েছেন। তাতে রিজার্ভ বাড়বে, কমার কোনো আশঙ্কা নেই।
তবে বাস্তবে সেটি ঘটেনি। চার মাসেও রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারে ঘর অতিক্রম করতে পারেনি, যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক একাধিকবার রিজার্ভ বৃদ্ধির দাবি করেছে।