“বর্তমানে অফিসিয়ালভাবে এই হার সাড়ে ১২ শতাংশ। আগামী মাসে এটি ১৫ শতাংশ, এরপর ১৭ শতাংশ হয়ে ধীরে ধীরে ছয় মাসের মধ্যে ২৫-৩০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে”, বলেন তিনি।
Published : 01 Dec 2024, 09:55 PM
ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছয় মাসের মধ্যে বর্তমানের দ্বিগুণের কাছাকাছি ঠেকবে বলে সতর্ক করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বলেছেন, “এখন আমাদের কাজ হল এটি কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, সেই উপায় বের করা। এটি আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।"
রোববার দুপুরে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রণীত শ্বেতপত্রের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়ার পর সেখানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
গভর্নরের এই বক্তব্যের ভিডিওটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ফেইসবুক পেজে শেয়ার করেছেন।
সেই ভিডিওতে দেখা যায়, গভর্নর বলেছেন, "আর্থিক খাতের যে চিত্র পাওয়া যাচ্ছে, তাতে ধারণা করা যায়, খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৫-৩০ শতাংশে পৌঁছাবে।
“বর্তমানে অফিসিয়ালভাবে এই হার সাড়ে ১২ শতাংশ। আগামী মাসে এটি ১৫ শতাংশ, এরপর ১৭ শতাংশ হয়ে ধীরে ধীরে ছয় মাসের মধ্যে ২৫-৩০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।”
অবশ্য গভর্নর বর্তমানে খেলাপির হার সাড়ে ১২ শতাংশ বললেও গত ১৭ নভেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে হিসাব দিয়েছেন, তাতে বিতরণ করা ঋণের ১৭ শতাংশ খেলাপি হয়ে গেছে।
এই ঋণের মধ্যে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসেই বেড়েছে প্রায় ৭৪ হাজার কোটি টাকা, যে সময়ের প্রায় দুই মাস ক্ষমতায় অন্তর্বর্তী সরকার।
দেশের ইতিহাসে এর আগে কোনো প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ এত বেশি বাড়েনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র ও পরিচালক শাহরিয়ার সিদ্দিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে দুটি কারণের কথা তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, “বড় রকমের নীতি পরিবর্তন করা হয়েছে। ২০১৯ সালে ঋণের হিসাব গণনায় বিশেষ এক ধরনের সুবিধা দেওয়া হয়। অনেকগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ কিস্তি পরিশোধের শেষ তারিখ থেকে ছয় মাস পর্যন্ত গণনা করা হত না। আইএমএফের সঙ্গে আলোচনার সাপেক্ষে সেটি কমিয়ে তিন মাস করা হয়েছে। আগামী বছরের মার্চে এটি কিস্তি পরিশোধের সময় শেষ হওয়ার পরের দিন থেকেই করা হবে।
“এই পরিবর্তনের কারণেই সেই বকেয়া কিস্তিগুলো খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে। যদি আগের নীতি বলবৎ থাকত, তাহলে খেলাপি ঋণ এত বাড়ত না।”
খেলাপি ঋণ নিয়ে আদালতে চলতে থাকা অনেক রিট খারিজ হয়েছে জানিয়ে একে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির দ্বিতীয় কারণ হিসেবে তুলে ধরেছেন শাহরিয়ার সিদ্দিক।
‘বেশি বেড়েছে ২০১৭ সাল থেকে’
গভর্নর বলেন, "এই খেলাপি ঋণের অর্ধেকই বড় বড় ‘স্ক্যাম’ থেকে এসেছে। এস আলম, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীসহ কিছু বড় গ্রুপ ও ব্যবসায়ীরা এর সঙ্গে জড়িত। টাকার পরিমাণ আনুমানিক আড়াই লাখ কোটি টাকারও বেশি।
"২০১৭ সালের পর এসব ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বাড়তে থাকে। ব্যাংকিং খাত থেকে এই অর্থ ঋণ হিসেবে নিয়ে পরে তা পাচার করা হয়।’’
খেলাপি ঋণ কমানে কী কী করতে হবে, সে বিষয়েও বক্তব্য রাখেন আহসান মনসুর।
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ব্যাংকগুলোকে নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করার এবং নিয়ম-নীতি অনুসরণ করাতে জোর দিতে হবে।
"আমরা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর সম্পদের মান পরীক্ষা করব। আগামী ১১ ডিসেম্বর থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রথমে ১২টি ব্যাংক এবং পরে ২০টি ব্যাংকে নিরীক্ষা করা হবে। এর মাধ্যমে প্রকৃত চিত্র উদঘাটিত হবে।"
ব্যাংকের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ প্রয়োজন হবে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তবে আমানতকারীদের সুরক্ষায় আমরা অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।
“ব্যাংকাররা জানতে চেয়েছেন, ব্যাংক রক্ষা করা হবে কি না। আমি বলেছি, ব্যাংক রক্ষা করা আমার দায়িত্ব নয়, তবে আমানতের সুরক্ষা দেওয়া হবে। ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, এর মাধ্যমে গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।"
ব্যাংকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আইন করা হচ্ছে জানিয়ে গভর্নর বলেন, “পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। আমরা একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সম্পদের মান যাচাই করে প্রমাণ সংগ্রহ করব এবং অর্থ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাব।
“যদিও এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, তবে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব।"
আরও পড়ুন
জুলাই-সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণ বাড়ল ৭৪ হাজার কোটি টাকা
খেলাপি ঋণের নিয়ম কঠোর করল বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক খাতের অবস্থা আসলে কতটা খারাপ?
ডলারের উচ্চ মূল্য: ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পের ঋণ পরিশোধে ৮ বছর সময়
বিনিয়োগ 'স্থবির', ব্যবসায় গতি না ফিরলে বাড়বে খেলাপি ঋণ, ব্যবসায়ীদ