“একই সঙ্গে সংস্কারের কাজ করবো, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করবো এবং বিনিয়োগের একটা পাইপলাইন তৈরি করবো।”
Published : 13 Apr 2025, 09:46 PM
বিনিয়োগ সম্মেলন বিষয়ে নিজের মূল্যায়ন তুলে ধরে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, দশে দশ পাওয়ার মত সম্মেলন হয়নি।
বাংলাদেশে সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের মাঝে বদ্ধমূল ‘নেগেটিভ নেরেটিভে’ পরিবর্তন আনা এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিনিয়োগ সম্মেলন শেষ হওয়ার তিন দিন পর রোববার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিডা চেয়ারম্যান।
চার দিনের বিনিয়োগ সম্মেলন শুরু হয় ৭ এপ্রিল। সম্মেলনটি আয়োজন করা হয়েছিল ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে।
সম্মেলন বিষয়ে নিজের মূল্যায়ন তুলে ধরে চৌধুরী আশিক বলেন, “দশে দশ পাওয়ার মতো সামিট হয়নি। প্রথমবারের মতো গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডের সামিট করার চেষ্টা করেছি। সামিট সফল হয়েছে কি না সেটা সময় বলে দেবে।”
“বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক নেগেটিভ ধারণা রয়েছে। অনেকে আমাদেরকে সাউথ এশিয়ার প্রেক্ষপটে বিবেচনা করেন। মনে করেন, আমাদের এখানে বন্যা খরা ছাড়া কিছু নেই। সেই নেগেটিভ নেরেটিভ দূর করতে বিনিয়োগকারীদের সশরীরে ঘুরে দেখানো হয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে বিডার হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নাহিয়ান রহমান জানান, বিনিয়োগ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন ৭১০ জন। এর মধ্যে ৫০টি দেশ থেকে ৪১৫ জন বিদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশি ছিলেন। এর বাইরে সাড়ে তিন হাজার মানুষ স্টার্টআপ প্যানেল বা ব্রেকআউট সেশনে অংশ নিয়েছিলেন।
তিনি জানান, চার দিনের সম্মেলনে ১৩০ জন প্যানেলিস্ট বা বক্তা বক্তব্য রেখেছিলেন। এর বাইরে ১৫০টি আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে বিডার পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে। সম্মেলনে চীনা প্রতিষ্ঠান হান্ডা ও দেশি কোম্পানি শপআপ ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ ঘোষণা করেছে। এর বাইরে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে ছয়টি।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউএনডিপি, এইচএসবিসি ব্যাংক, ডাচ অ্যাম্বাসি, লাইট ক্যাসেল পার্টনার্স, সাজিদা ফাউন্ডেশন ও ইবিএল ছিল আয়োজন সহযোগী।
বিনিয়োগে সম্মেলনের খরচ তুলে ধরে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, “সামিটে সরকারের পক্ষ থেকে খরচ হয়েছে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। যা পরিকল্পনার চেয়ে ৪২ শতাংশ কম। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, ফিকি ও ইউএনডিপি ছিল ইভেন্ট পার্টনার। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, ইউএনডিপি, ফিকির খরচ মিলিয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকার মত খরচ হয়েছে। বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য তারা এই টাকা খরচ হয়েছে।”
সম্মেলনের মূল্যায়ন করে চৌধুরী আশিক বলেন, “সামিটে চীনা প্রতিষ্ঠান হান্ডা ও দেশীয় কোম্পানি শপআপ তিন হাজার ১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ ঘোষণা করেছে। যেই বিনিয়োগ ঘোষণা এসেছে তা এই সামিটকে দেওয়া ঠিক হবে না। পৃথিবীর কোনো বিনিয়োগকারী একটা সামিটে এসে সবকিছু শুনে সাথে সাথে বিনিয়োগ করে ফেলে না। সামিটের সাফল্যকে এই বিনিয়োগ দিয়ে বিচার করা যাবে না।
“মূল উদ্দেশ্য ছিল বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে পারসেপশনটা ঠিক করা। উনারা নিজ চোখে বাংলাদেশ দেখে ফিরে গেছেন। একই সঙ্গে সংস্কারের কাজ করবো, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করবো এবং বিনিয়োগের একটা পাইপলাইন তৈরি করবো।”
“এগুলো সমান্তরালভাবে আগাতে হবে। যেই পাইপলাইনটা আমরা এখন তৈরি করছি এটা দৃশ্যমান হবে ২০২৬/২০২৭ সালের দিকে,” বলেন আশিক চৌধুরী।
বিনিয়োগ সম্মেলন বেশ কিছু চুক্তির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এমওইউ করা হয়েছে নাসার সাথে ও আইএলওর সাথে। প্রাণের সঙ্গে এইচআন্ডএমের একটা এমওইউ হয়েছে রিনিউয়েবল এনার্জির বিষয়ে।
“বিনিয়োগকারীরা যারা প্রথমবারের মত বাংলাদেশে এসেছেন তারা বলেছেন, তারা নিজ দেশের অন্যান্য বিনিয়োগকারীদেরকেও বাংলাদেশে ঘুরে দেখে যেতে বলবেন। যারা আগে থেকেই বাংলাদেশে ব্যবসা করছেন, তারা বলেছেন বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করা অনেক কঠিন। এটা সহজ করতে বলেছেন তারা।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।