Published : 27 Nov 2022, 09:00 PM
রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় পুলিশ, বিজিবি, রেলওয়ের মত সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকা পতিত জমিতেও চাষাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে সরকার প্রধান এ নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে আনোয়ারুল বলেন, “কেবল জনসাধারণের পতিত জমি না, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার যে পতিত জমিগুলো আছে, সেগুলোতেও যেন সেই এলাকার সুইটেবল ভ্যারাইটিগুলো উৎপাদনে নিয়ে আসা হয়।
“এটা একটা বেশ আকারের জমি হবে। এটা এক লাখ হেক্টরের বেশি। তার মানে আড়াই লাখ একর। এই আড়াই লাখ একরে যদি আমরা নতুন ভ্যারাইটিগুলো করতে পারি, নিশ্চিতভাবে আমাদের উৎপাদনের জন্য একটা বড় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সেক্ষেত্রে আমাদের আমদানিও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে আসবে।”
সব সংস্থাকে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “আর্মি, পুলিশ, বিজিবি, রেলওয়ে, সড়ক ও জনপথ…যার যার খালি জায়গায় আছে, সেগুলোকে চাষের আওতায় আনার জন্য।”
বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে ১২-১৩ বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে আনোয়ারুল জানান, সরকার প্রধানের সঙ্গে আলোচনায় অন্তত ১৬ জন সচিব বক্তব্য দেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “এই যে বৈশ্বিক সংকট, তার সবচেয়ে বড় সমাধান প্রত্যেকটা দেশের জন্য, আমাদের দেশের তো বটেই, নিজস্ব উৎপাদন বৃদ্ধি করা। সেক্ষেত্রে কৃষি উৎপাদনটা আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
“প্রধানমন্ত্রী বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন যে, সাম্প্রতিক সময়ে গত ৩-৪ বছরে আমাদের কৃষি, প্রাণিসম্পদ আর ফিশারিজ- এক্ষেত্রে নতুন নতুন ভ্যারাইটি উদ্ভাবন ও রিলিজ হয়ে গেছে। এগুলোকে দ্রুত যেন ছড়িয়ে দিই। এই ভ্যারাইটিগুলো যেন আমরা উৎপাদনে নিয়ে আসি।”
বাংলাদেশে কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও মাছের যেসব ধরন উদ্ভাবন হয়েছে, সেগুলো উৎপাদন করতে পারলে আগামী তিন বছরের মধ্যে খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণ করা সম্ভব হবে মনে করছেন আনোয়ারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “ভ্যারাইটি যেগুলো আমরা নিজেরাও ভেরিফিকেশন করে দেখেছি, আগামী তিন বছরের মধ্যে খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণ করা একেবারে সহজ। খুব কঠিন কাজ হবে না।
“সেক্ষেত্রে আমরা তো চাল আর অন্য শস্য আমাদেরকে আমদানি করতেই হবে না, বরঞ্চ আমরাও একটা বড় পরিমাণ চাল রপ্তানি করতে পারব।”
দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২২ নভেম্বরের হিসাবে দেশে ১৬ লাখ টনের বেশি খাদ্যশস্য মজুদ আছে। অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ ও আমদানি করার মাধ্যমে মজুদ যেন ১৫ লাখ টনের নিচে না নামে, সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
১ কোটি পরিবারের জন্য ওএমএস, বিশেষ ওএমএস, খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি, ভিজিডি বা ভিজিএফ, টিসিবি- কার্যক্রম চালুর রাখার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ ও বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করার জন্যও বাণিজ্য সচিবসহ অন্যদেরকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে জানিয়ে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “আইএমএফ এবং বিশ্ব ব্যাংকের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে তারা ইতোমধ্যে বলেছে যে, ২০২৩ সালটা একটু কঠিন সময় যাবে।”
ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া এবং চীনের শূন্য কোভিড নীতির কারণে উৎপাদন কমার প্রভাব পড়ার কথা তুলে ধরে সরকারি খরচের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, “আমরা যে খরচ করব, এগুলো খুব যৌক্তিক হতে হবে। সেগুলো বেশি প্রয়োজনীয় সেগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিশেষ করে বিদেশ থেকে আমরা যে জিনিসপত্র আনব, এনার্জি, সার ও খাদ্যকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
“খুব গুরুত্বপূর্ণ ক্যাপিটাল মেশিনারিজগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিলাসবহুল বা কম প্রয়োজনের জিনিসে খরচকে কমিয়ে আনতে হবে।”
প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন জানিয়ে আনোয়ারুল বলেন, “প্রকল্পে যেন সম্ভাব্যতা যাচাই যেন ঠিকভাবে হয়। ড্রইং, ডিজাইন ও ইস্টিমেটটা যেন ঠিকভাবে হয়, দক্ষ লোকজন নিয়োগ দিয়ে যেন এগুলো করা হয়।
“আর প্রকল্পগুলো যেন এই মোমেন্টের কথা বিবেচনা করে যাতে অগ্রাধিকার ঠিক করা হয়। এর আগে এ, বি, সি ক্যাটাগরি করা হয়েছে; সেগুলো মেনে যেন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হয়।”
বিদেশি সহযোগিতা বা ঋণের মাধ্যমে নেওয়া প্রকল্পের ক্ষেত্রেও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে সভায় বলা হয়েছে জানিয়ে আনোয়ারুল বলেন, “কারণ, আমরা দেখছি যে- গত কিছুদিন ধরে বিদেশি ঋণের মাধ্যমে যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে, তার খরচ একটু কম হচ্ছে। এগুলো যদি ব্যয় হয়, তাহলে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা বেশ আসবে।
“কারণ, আমরা যখন খরচ করি না, তখন কিন্তু উন্নয়ন সহযোগীরা এই টাকাগুলো আমাদেরকে বাজেট চ্যানেলে বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেয় না। সেজন্য এগুলোর ব্যাপারে বিশেষ দৃষ্টি দিতে বলা হয়েছে সব সচিবদেরকে।”
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রেমিটেন্স বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, ইআরডি ও এনবিআরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি জঙ্গিরা দেশে যে মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বৈঠকে বলা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “কারণ, পার্বত্য চট্টগ্রামে আপনারা দেখেছেন, একটা দলকে চিহ্নিত করেছে এবং কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে।
“বাকি কিছু পালিয়ে গেছে। তাদেরকে ট্র্যাক করে ধরা, জনগণকে সতর্ক করে দেওয়া এবং তারা যেন কোনোভাবে কারও আশ্রয় নিতে পারে, বা সহায়তা নিতে না পারে, বা কোনো আর্থিক সহযোগিতা নিতে পারে- সে ব্যাপারে সবাইকে দৃষ্টি রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”