“বৃহস্পতিবারের মধ্যে সার্ভার ঠিক হয়ে যেতে পারে, সেদিন বিকালে বা রোববার সকাল থেকেই স্বাভাবিক হতে পারে কার্যক্রম,” বলছেন সঞ্চয় অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা।
Published : 14 Jan 2025, 11:10 PM
ছয় দিন ধরে সার্ভার বিভ্রাটে বন্ধ রয়েছে জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রি, যা ঠিকঠাক হতে আরও দুয়েকদিন সময় লাগতে পারে।
বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের আইটি বিভাগের কাজ করার তথ্য দিয়ে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলছেন, সমস্যাটি ‘দুয়েক দিনের মধ্যে’ ঠিক হয়ে যাবে বলে তিনি আশা করছেন। আর সেটি হলেই সঞ্চয়পত্রের লেনদেন স্বাভাবিক হবে।
অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেন, “আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে সার্ভার ঠিক হয়ে যাবে বলে ধরা হচ্ছে। ওই দিন বিকালে বা রোববার সকাল থেকেই স্বাভাবিক হতে পারে মূল সার্ভার।”
সার্ভার সচল না থাকায় গত বৃহস্পতিবার থেকে নতুন সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ বন্ধ রয়েছে। বন্ধ আছে বিনিয়োগের মুনাফা বিতরণও। সোমবারের মধ্যে বিষয়টি সমস্যা সমাধানের আশ্বাস ছিল। যদিও মঙ্গলবারও সার্ভার মেরামতের কাজ শেষ হয়নি।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, “কিছু টেমপ্লেট আপগ্রেডেশন (উন্নয়ন) করতে গিয়ে সার্ভারে সমস্যা দেখা দিয়েছে।”
নতুন নিয়ম অনুযায়ী সঞ্চয়পত্রের ওপর প্রাপ্ত মুনাফা স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রাহকের হিসাবে চলে যায়। কিন্তু সার্ভারে সমস্যার কারণে গত বৃহস্পতিবার থেকে মুনাফা বিতরণ বন্ধ রয়েছে।
তবে সঞ্চয়পত্রে পুনঃবিনিয়োগ বা মেয়াদ শেষ হলে নবায়ন করার আবেদন নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও নবায়ন করে। সাধারণত বেলা ২টা পর্যন্ত গ্রাহকের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায় সেখানে। তবে মঙ্গলবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও নবায়নের কাউন্টারগুলোতে গ্রাহক না থাকায় ফাঁকা দেখা যায়।
এদিন নতুন সঞ্চয়পত্র কিনতে এসে না পেয়ে পুরনোটি নবায়নের আবেদন জমা দেন রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার নজরুল ইসলাম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এসে শুনলাম বিক্রি বন্ধ। একটার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। নতুন সঞ্চয়পত্র কিনতে ও পুরানটার মেয়াদ বাড়াতে আসছিলাম। ভেবেছিলাম একদিনেই করতে পারব, কিন্তু শুনলাম সফটওয়্যারে না কি সমস্যা। তাই পুরাতনটা নবায়ন করতে আবেদন জমা দিলাম।”
তফসিলি ব্যাংকের পাশাপাশি ডাকঘরেও পাওয়া যায় জাতীয় সঞ্চয়পত্র। তবে ঢাকার বেশিরভাগ গ্রাহকই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ভিড় করেন।
নিম্ন মধ্যবিত্ত, সীমিত আয়ের মানুষ, নারী, প্রতিবন্ধী ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সঞ্চয়পত্রের বিভিন্ন প্রকল্প চালু রয়েছে। এ খাতের সুদ ব্যয়কে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা খাতে দেখায়।
আগের বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে প্রতি মাসেই মুনাফা বিতরণ করে থাকে জাতীয় সঞ্চয়পত্র। আর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অনেকেই ভাঙিয়ে নিলে আসল বাবদও পরিশোধ করতে হয়।
এই সুদ-আসল পরিশোধের পর প্রতি মাসে যা থাকে, তাকে বলা হয় নিট সেল বা নিট বিক্রি। এটি রাষ্ট্রের দায়। প্রতি মাসে পুরনো দায়ের সঙ্গে নতুন দায় সৃষ্টি হয় সরকারের, যা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা থাকে। প্রয়োজন অনুযায়ী সরকার তা বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে খরচ করে।
এ বিনিয়োগের বিপরীতে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। যে কারণে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে ধরা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের গত জুলাই-অক্টোবরের এ খাত থেকে সরকার নিট ঋণ নিয়েছে ৫ হাজার ১০৭ কোটি টাকার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে সরকার ঋণ নেওয়ার চেয়ে পরিশোধ করেছিল বেশি।
জুলাই-অক্টোবর চার মাসে নতুন সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ২০ হাজার ৮০৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার। একইসময়ে ভাঙানো বা মেয়াদ শেষ হওয়ায় ১৫ হাজার ৭৪২ কোটি ৭০ লাখ টাকা ও মুনাফাবাবদ ৪ হাজার ১৪১ কোটি ৯০ লাখ পরিশোধ করেছে সরকার। পরিশোধ শেষে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১০৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
গত অক্টোবর শেষে জাতীয় সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারের ঋণ স্থিতি বা মোট দায় রয়েছে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা, একবছর আগের একই সময়ে যা ছিল ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৯৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
অভ্যন্তরীণ উৎস হিসেবে চলতি অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। এর মধ্যে জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকার নেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে।
একসময় অন্যান্য বিনিয়োগের চেয়ে এখানে সুদ হার বেশি থাকায় বিক্রি বেড়েছিল। ২০২০ সালের এপ্রিলে ঋণ সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ বেঁধে দেওয়ায় আমানতের সুদের হার ৬ শতাংশের নিচে নেমে যায়। অন্যদিকে পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মন্দার কারণে লাফিয়ে বাড়ছিল সঞ্চয়পত্র বিক্রি। এতে সরকারের ঋণের বোঝা বাড়ছিল।
এরপর সুদ ভর্তুকি কমিয়ে আনতে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে বিধিনিষেধ আরোপ করতে শুরু করে সরকার। এর অংশ হিসেবে মুনাফা কমিয়ে ক্রয় সীমায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ ও সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করা হয়।
সঞ্চয়পত্র কেনায় বিধিনিষেধ আরোপ ও নানা শর্ত জুড়ে দেওয়ায় ২০২০-২০২১ অর্থবছরের শেষের দিক থেকেই কমতে থাকে এ খাতে বিনিয়োগ। ফলে সরকার এ খাত থেকে ঋণ পাচ্ছে কম।
সম্প্রতি সুদহার বেড়ে যাওয়ায় সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে ফের ব্যাংকমুখী হচ্ছেন গ্রাহকরা। বতর্মানে সঞ্চয়পত্রের বিভিন্ন স্কিমের মধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদী পেনশনে সর্বোচ্চ সুদহার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ দেওয়া হচ্ছে, আগে যা ছিল ১৪ শতাংশ পর্যন্ত।