“আমরা প্রাউডলি বলি, আমাদের মাথাপিছু আয় ইন্ডিয়া থেকে বেশি, আদৌ বেশি কি না। আমরা পাকিস্তান থেকে এগিয়ে গেছি, আদৌও এগিয়ে গিয়েছি কি না,” বলেন প্রেস সচিব।
Published : 15 Dec 2024, 06:55 PM
স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশ ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করবে কি না তা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ‘ভাবছে’ বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেছেন, “যেটা লাভ হবে, যেটা আমরা দেখব যে ম্যাক্সিমাম মানুষের লাভ হবে, আমরা সেদিকেই যাব।”
বর্তমান সামষ্টিক অর্থনীতির পরিস্থিতি ও এলডিসি উত্তরণের প্রস্তুতি বিষয়ে রোববার ঢাকায় এক কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন শফিকুল।
তিনি বলেন, “এটা নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সবার সাথে কথা বলছে। আমরা যখন নিউ ইয়র্কে গেলাম তখন ইউএনের কর্মকর্তাদের সাথে এ নিয়ে কথা হয়েছে।
“ইউএনের যিনি এ বিষয়টা দেখছেন, তার সাথে বিস্তারিত আলাপ হয়েছে। আমরা অনেকের সাথেই কথা বলেছি। এ জিনিসটা নিয়েও আমরা ভাবছি যে কোনটা করলে জাতি হিসেবে আমাদের বা দেশ হিসেবে আমাদের লাভ হবে।…এখনও আমাদের সিদ্ধান্ত হয়নি।”
উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ না হলে বাংলাদেশের কী লাভ, সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে প্রেস সচিব অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পরিসংখ্যান নিয়ে কারসাজি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “পুরো ‘ডিকটেটরশিপ’ যেটা জারি করেছিল শেখ হাসিনা, ওগুলোর ভিত্তি ছিল একরকম ‘স্ট্যাটিস্টিক্যাল ম্যানিপুলেশন’।ফলে আমরা এখন যে ডেটাগুলো দিচ্ছি, প্রত্যেকটা ডেটার ক্ষেত্রে সন্দেহ তৈরি করছে, এটা কি ঠিক না বেঠিক।
“আমাদের জিডিপির যে সাইজ সেই সাইজটা আছে কি না। আমরা প্রাউডলি বলি, আমাদের মাথাপিছু আয় ইন্ডিয়া থেকে বেশি, আদৌ বেশি কি না। আমরা পাকিস্তান থেকে এগিয়ে গেছি, আদৌও এগিয়ে গিয়েছি কি না।”
১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ২০১৮ সালেই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করে বলে জাতিসংঘ থেকে জানানো হয়।
মাথাপিছু জাতীয় আয় ১ হাজার ২৫ ডলারের নিচে থাকলে সে দেশ এলডিসিভুক্ত হয়, এই আয় ১২৩০ ডলার অতিক্রম করলে ধাপ উন্নয়নের যোগ্যতা অর্জন হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে এই আয় দাঁড়ায় দুই হাজার ৭৪৯ ডলার।
২০১৮ সালে মানব সম্পদ সূচকে বাংলাদেশের পয়েন্ট ছিল ৭২। এক্ষেত্রে ৬২ পর্যন্ত দেশগুলো এলডিসিভুক্ত, ৬৪ ছাড়ালে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার যোগ্যতা অর্জিত হয়। এই তালিকাতেও বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নতি হচ্ছে। ২০২০ সালের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে বিশ্বের ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩৩। পরের বছর ১৯১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ উঠে আসে ১২৯তম।
জাতিসংঘের ই-গভর্নমেন্ট সার্ভে ২০২৪ অনুযায়ী, এ বছর ১৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ এখন ১০০তম। আগের বছর ছিল ১১১তম।
অর্থনৈতিক ঝুঁকির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পয়েন্ট ২০১৮ সালে ছিল ২৫ দশমিক ২। এই পয়েন্ট ৩৬ এর বেশি হলে এলডিসিভুক্ত হয়, ৩২ এ আনার পর উন্নয়নশীল দেশে যোগ্যতা অর্জন হয়।
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম বৈঠকের ৪০তম প্লেনারি সভায় স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুপারিশ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে গত ৪ থেকে ৮ মার্চ জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি বা সিডিপির পর্যালোচনা বৈঠকে বলা হয়, এলডিসি থেকে উত্তরণ হয়েছে কিংবা হওয়ার পথে রয়েছে এমন দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশই টানা তিনটি মূল্যায়নে সব সূচকে পাস করেছে।
বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণের তারিখও ঠিক করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটবে।
বাংলাদেশ একটি স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে ইউরোপের রপ্তানি বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়ে এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে ২০২৬ সালের পর সেই সুবিধা আর থাকবে না।
কী করতে পারে বাংলাদেশ
এলডিসি থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ পেছানোর ‘সুযোগ’ এখনও শেষ হয়ে যায়নি বলে কর্মশালায় মত দেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক।
কমনওয়েলথ সচিবালয়ের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতির সাবেক এই প্রধান বলেন, “সরকার অবশ্যই আবেদন করতে পারে। সে আবেদন হতে হবে পূর্ণ যুক্তির মাধ্যমে। এক্ষেত্রে সরকারের অবশ্যই একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে বাংলাদেশ জাতিসংঘকে চিঠি লিখতে পারে, দরখাস্ত করতে পারে কিন্তু সিদ্ধান্ত তাদের (জাতিসংঘ) থেকে আসবে।”
তবে এলডিসি থেকে উত্তরণ ঠেকানো ‘প্রায় অসম্ভব’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা এলডিসি থেকে বেরোতে চাই না, এটা বলা যাবে না। আমরা যেটা করতে পারি সেটা হচ্ছে, আমরা সময় খানিকটা বাড়ানোর জন্য সুপারিশ করতে পারি।
“আবার বলছি, সময়টা কতখানেক বাড়বে সেটাও নির্ধারণ করবে জাতিসংঘ। তারাই বলতে পারে বাংলাদেশকে কতখানি বেশি সময় দেওয়া যায়। সেটা কিন্তু আমাদের মাথায় রাখতে হবে।”
বর্তমান রাজনৈতিক পালাবদলের কথা উল্লেখ করে রাজ্জাক বলেন, “এলডিসির ‘স্মুথ ট্রানজিশনের’ জন্য কী কী সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সরকার এবং তার জন্য কত সময় লাগতে পারে সেটি উল্লেখ করে আবেদন যৌক্তিক হবে।”
আরও পড়ুন...
এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের সুপারিশ জাতিসংঘে গৃহীত
দেশ উন্নয়নশীল, রাজনীতি কি উন্নয়নশীল
এলডিসি থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেল বাংলাদেশ
উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতিপত্র পেল বাংলাদেশ