রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এর আগে এডিবিও প্রবৃদ্ধি কমার পূর্বাভাসের তথ্য দিয়েছিল।
Published : 10 Oct 2024, 08:37 PM
ক্ষমতার পালাবদলের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নানামুখী ‘অনিশ্চয়তার’ কথা তুলে ধরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চলতি অর্থবছরে কমে ৪ শতাংশ হওয়ার আভাস দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।
এর আগে এপ্রিলে দেওয়া ৫ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস থেকে এক লাফে এতটা নিচে নেমে যাওয়ার বিষয়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণের কথা বলেছে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রকাশিত আউটলুকে সংস্থাটি বলেছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। আগের প্রত্যাশার চেয়ে এ অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি বিস্তৃত পরিসরে উল্টো ঘুরতে শুরুছে, সঠিক পথেই রয়েছে।
বিশ্ব ব্যাংকের আগে আরেক উন্নয়ন সহযোগী এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকও (এডিবি) চলতি অর্থবছরের পূর্বাভাস কমিয়েছিল।
ক্ষমতার পালাবদলে শিল্পে নৈরাজ্য, অস্থিরতা আর উৎপাদনের স্থবিরতার মধ্যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কঠিন হওয়ার কথা বলেছিল ম্যানিলাভিত্তিক এডিবি। তাদের আভাস ছিল প্রবৃদ্ধি নেমে আসবে ৫ দশমিক ১ শতাংশে। এপ্রিলে তাদের আগের পূর্বাভাসে যা ছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য উত্থাপিত বাজেটে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে পরিকল্পনা সাজায়। তবে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে শুরু হওয়া আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সরকার পতনের দিকে গেলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়।
শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে এসে রাষ্ট্র সংস্কারের বিভিন্ন পদক্ষেপের পাশাপাশি অর্থনীতি মেরামতের কাজেও হাত দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
এ সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার দুই মাসের মাথায় প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট’ এর অক্টোবর সংস্করণে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে ৩ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ২ শতাংশের মধ্যে থাকবে; মধ্যবর্তী পয়েন্ট হবে ৪ শতাংশ।
এর আগে চলতি অর্থবছরের জন্য এপ্রিলে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক।
বিশ্ব ব্যাংক হালনাগাদ এ প্রতিবেদনে বলেছে, তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ধীরগতি এবং গণ আন্দোলনের পর চলমান পরিবর্তিত পরিস্থিতি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে।
নিকট ভবিষ্যতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগ ও শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি খুব একটা গতি পাবে না। সাম্প্রতিক বন্যার প্রভাবও অর্থনীতিতে নেতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বন্যার কারণে কৃষি উৎপাদনেও ধাক্কা লাগবে।
বিশ্ব ব্যাংক বলছে, “বাংলাদেশে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশে; যা ২০২৪-২৫ এ এসে ধীর হয়ে ৪ শতাংশ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
“ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন ব্যাপক বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর ৮ অগাস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এসব ঘটনাকে ঘিরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অর্থনৈতিক ব্যত্যয় ঘটায়। এর মধ্যে শিল্প ও সেবা খাতের কর্মকাণ্ড কমে যাওয়া, রপ্তানি চালান ও রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে যাওয়া অন্যতম।”
তবে সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রেও খুব আশাবাদী হওয়ার মত আভাস দিতে পারেন ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থাটি। ২০২২ সালে দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে মূল্যস্ফীতির পারদ ছিল চূড়ায়, যা এখন কমতে শুরু করলেও বাংলাদেশে তা হয়নি। নীতি সুদহার কমিয়ে অন্যান্য দেশ তা লক্ষ্যামাত্রার মধ্যে নামিয়ে আনতে পারলেও বাংলাদেশে তা এখনও হয়নি।
যদিও অন্তর্বর্তী সরকারেরন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ দাবি করেছেন তাদের সরকার ক্ষমতায় আসার দুই মাসে ঊর্ধমুখী মূল্যস্ফীতি থামাতে পেরেছে। তিনি বলেছেন, অধৈর্য না হলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যেও স্বস্তি পাওয়া যাবে।
সুলভ মূল্যে পণ্য পেতে জনগণকে আরও কিছু দিন ধৈর্য ধরার আহ্বান রেখে তিনি বলেন, “মূল্যস্ফীতি অফিসিয়ালি ১ শতাংশ কমেছে। মূল্যস্ফীতি আমরা মোটামুটি এক জায়গায় থামাতে পেরেছি।”
প্রবৃদ্ধির গতি কমে বাড়বে মূল্যস্ফীতি: পূর্বাভাস এডিবির