কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হলেও ব্যাংকগুলোর নাম প্রকাশ করা হয়নি।
Published : 09 Dec 2024, 11:20 PM
বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের ৭০ শতাংশই ১০টি ব্যাংকে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে তুরে ধরে বলা হয়েছে, যেটি কেবল তিন মাস আগেই ছিল ৫১ শতাংশের মত। আর খেলাপির ৫৪ শতাংশই পাঁচটি ব্যাংকে।
শীর্ষ ঋণগ্রহীতাদের এই খেলাপি ঋণ ব্যাংকিং খাতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সেই প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে।
সোমবার প্রকাশিত ‘ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট’ শিরোনামে প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া যায়। তবে এসব ব্যাংকের নাম প্রকাশ করা হয়নি প্রতিবেদনে।
এতে গত জুন পর্যন্ত হিসাব দেওয়া হয়েছে, এর পরের তিন মাসে খেলাপি ঋণের পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে খেলাপির অঙ্ক বেড়েছে ৭৪ হাজার কোটি টাকা। ফলে এখনকার চিত্র জানতে আরও সময় অপেক্ষা করতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, শীর্ষ ঋণগ্রহীতারা খেলাপি হলে ব্যাংকের মূলধনে প্রভাব পড়বে।
খেলাপি ঋণ বাড়ছে কেন এবং কেন টাকা আদায় করা যাচ্ছে না- এই প্রশ্নে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক তৌফিক আহমদ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঋণ যে নিয়েছে এবং ঋণ যে দিয়েছে এক্ষেত্রে দুই পক্ষই দোষী। কারণ প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও ব্যক্তিরা এসব ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে আর টাকা ফেরত না দেওয়ার জন্যই।”
তিনি বলেন, “যে প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া হয়েছে সেই প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় ও সেটার অস্তিত্ব আদৌ আছে কি না, সেই বিষয়ে বিবেচনা করা হয় না।”
ভুয়া জায়গা জমি ও প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ঋণ নেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে বিআইবিএম এর সাবেক মহাপরিচালক বলেন, “জায়গা জমিও নেই, তাই সেটা বিক্রি করেও ঋণ আদায় করতে পারছে না। তাই খেলাপিদের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকারদেরকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।”
জুন শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে তা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। এটি বিতরণ করা ঋণের ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ঋণের ৪০ শতাংশই খেলাপি
বরাবরের মতই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেসরকারি ব্যাংকের তুলনায় বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ১১১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪০ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপির অঙ্ক ছিল এক লাখ ২ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা, যা ছিল বিতরণ করা ঋণের মধ্যে ৩২ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে বেসরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে বেড়েছে ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি।
বিদেশি ও বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ পরিস্থিতির খুব একটা নড়চড় হয়নি এই তিন মাসে।
সেপ্টেম্বর শেষে বিদেশি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা যা বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
জুন শেষে এই অঙ্ক ছিল ২ হাজার ২২৯ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
বিশেষায়িত ব্যাংকের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা যা বিতরণ করা ঋণের ১৩ দশমিক ২১ শতাংশ।
জুন শেষে এই ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ ছিল ৫ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা যা বিতরণ করা ঋণের ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ।
আরও পড়ুন