চবি চারুকলার আন্দোলনের ৩ মাস, ছাত্র হোস্টেলে প্রক্টরের অভিযান

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রক্টরিয়াল বডির অভিযানের সময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Feb 2023, 09:43 AM
Updated : 2 Feb 2023, 09:43 AM

মূল ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীদের তিন মাস ধরে চলমান আন্দোলনের মধ্যে ইনস্টিটিউটের ছাত্রবাসে তল্লাশি চালিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ইন্সটিটিউটের রশিদ চৌধুরী ছাত্র হোস্টেলে পুলিশ নিয়ে অভিযান চালায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অভিযানের মুহূর্তে তাদের আন্দোলনের ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। তবে এ অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, “সবকিছু সিসিটিভি ফুটেজে আছে। পরে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

গত বছরের ২ নভেম্বর থেকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে আন্দোলন করছেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। অবস্থান কর্মসূচি, ফটকে তালা ঝোলানো ও ক্লাস বর্জনের কর্মসূচি দিয়ে তাদের আন্দোলন গড়িয়েছে ৯০ দিনে। চলমান আন্দোলনের মধ্যে মঙ্গলবার থেকে পুনরায় ক্লাস বর্জন শুরু করেছেন তারা।

বুধবার রাতে ছাত্রাবাসে অভিযানের কারণ জানতে চাইলে প্রক্টর রবিউল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অভিযানে ছেলেদের হোস্টেলের একটি কক্ষ থেকে এক ছাত্রীকে পাওয়া যায়। পরে মুচলেকা দিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অপর একটি কক্ষ থেকে কিছু মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়।”

ছাত্রাবাসে অবৈধ কেউ রয়েছে কি না, তা যাচাই করতে অভিযান চালানো হয় বলে প্রক্টরের ভাষ্য।

ইনস্টিটিউটের মাস্টার্সের এক শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তল্লাশির সময় প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা আমাদের যার যার কক্ষে চলে যেতে বলেন। ওইসময় এক আপু তার ছোট বোনের জন্য চারুকলায় অপেক্ষা করছিলেন। পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি দেখে ভয়ে পেয়ে তিনি একটি কক্ষে ঢুকে পড়েন। তার বাসা চারুকলা ইনস্টিটিউর পাশেই।”

শিক্ষার্থীদের ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ করে ওই শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা কক্ষে থাকা অবস্থায় পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডিকে শিক্ষক ক্লাবের ভবনে ঢুকতে দেখা যায়। এসময় আমাদের আন্দোলনের ব্যানার-ফেস্টুনও ছিঁড়ে ফেলা হয়।”

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরীর বাদশা মিয়া সড়কে সরকারি চারুকলা কলেজ ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সঙ্গে একীভূত হয়। চারুকলা ইনস্টিটিউট হিসেবে সেখানেই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় তখন থেকে।

তবে তার আগে চারুকলা বিভাগের কার্যক্রম চলত বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে। আর সেখানে ফিরে যেতেই আন্দোলন করছেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা।

গতবছরের ২ নভেম্বর শ্রেণিকক্ষের ছাদ থেকে ইট-সিমেন্ট খসে পড়ায় আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল। সেসময় ক্লাস বর্জন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা চারুকলা ইনস্টিটিউটকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে নিয়ে যাওয়াসসহ ২২ দফা দাবি জানায়।

দাবি আদায়ে সাড়া না পেয়ে তারা এক দফা, অর্থাৎ চবি ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার দাবিতে বাদশা মিয়া সড়কের ক্যাম্পাসের মূল ফটকে তালা দিয়ে ক্লাস বর্জন ও আন্দোলন শুরু করে তারা।

এরপর ২১ জানুয়ারি দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, জেলা প্রশাসক, নগর পুলিশের কমিশনারসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৬০ জনকে নিয়ে বৈঠক করেন।

সেদিনের বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গিয়ে নগরীর বাদশা মিয়া সড়কের চারুকলা ইন্সটিটিউটে গিয়ে গেইটের তালা খুলে দেন এবং শিক্ষার্থীদের ক্লাস করার আহবান জানান। তবে মন্ত্রী ও উপমন্ত্রী ইনস্টিটিউট থেকে ফিরে যাবার পর আবারও মানববন্ধন করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মূল ক্যাম্পাসে ফিরে যাবার দাবিতে অনড় থাকার কথা জানায়।

আরও পড়ুন-

Also Read: অনশনের হুমকি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলার শিক্ষার্থীদের

Also Read: মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে ফের আন্দোলনে চবি চারুকলা

Also Read: ক্লাসে ফিরেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলার শিক্ষার্থীরা

Also Read: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য কার্যালয়ে ‘ছাত্রলীগের ভাঙচুর’, ট্রেন অবরোধ