“পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে সামিল থেকে এম এন লারমার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হবে।”
Published : 10 Nov 2023, 09:52 PM
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণ সভা হয়েছে চট্টগ্রামে।
শুক্রবার বিকেলে নগরীর নন্দনকাননের এ কে খান মিলনায়তনে এই স্মরণ সভার আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
স্মরণ সভায় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি তাপস হোড় বলেন, এম এন লারমা তার কর্ম ও আদর্শ দিয়ে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন।
“উনার সে আদর্শকে শোষিত, নিপীড়ন ও অধিকারহারা মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন। আমাদের তরুণদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ঐতিহাসিক দায়িত্ব নিতে হবে।”
তিনি বলেন, “লড়াই সংগ্রাম ছাড়া পৃথিবীতে কোনো জাতির অস্তিত্ব টিকে থাকেনি। তাই অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে তরুণদেরকেই অধিকতর সামিল হতে হবে। এম এন লারমার আদর্শকে ধারণ করে পাহাড়ের অধিকারহীন মানুষের আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”
সভায় বাংলাদেশর ওয়ার্কার্স পার্টি, চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান বলেন, "মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ের পাশাপাশি সমগ্র শ্রমজীবী ও নিপীড়িত মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখতেন। ছাত্রজীবন থেকেই মানব মুক্তির পক্ষে নিজেকে নিবেদিত করেছিলেন।
“জাতীয় সংসদে পার্বত্য অঞ্চলে প্রতিনিধিত্ব করার সময় তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শোষিত, নিষ্পেষিত, অধিকারহারা মানুষের মুক্তির কথা ফুটে ওঠে। তাই তিনি একজন মানব মুক্তির নেতা। এম এন লারমার শুরু করা আন্দোলনকে সফল করতে গেলে বাংলাদেশের অপরাপর যে সমস্ত মানুষ আদিবাসীদের অধিকারে বিশ্বাস করে তাদেরকে এই আন্দোলনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।”
শরীফ চৌহার বলেন, “এম এন লারমাকে আদর্শ বাস্তবায়নে দেশের প্রগতিশীল সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে সামিল থেকে এম এন লারমার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হবে।”
‘সকল প্রকার বিভেদ ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী ষড়যন্ত্র প্রতিহত করুন, জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব সংরক্ষণে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে অধিকতর সামিল হোন’- এই স্লোগান সামনে রেখে এই স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়।
স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সমাজতত্ত্ব বিভাগের সম্মানিত শিক্ষক বসুমিত্র চাকমা, সাবেক ছাত্রনেতা এস জে চাকমা, পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সভাপতি অমর কৃষ্ণ চাকমা বাবু, পিসিপি চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক অন্তর চাকমা প্রমুখ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক হ্লামিও মারমার সঞ্চালনায় স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগ্রামী সভাপতি নরেশ চাকমা।
অতিথিবৃন্দের উপস্থিতিতে এম এন লারমার প্রতিকৃতির সামনে মোমবাতি প্রজ্জ্বালনের মধ্য দিয়ে স্মরণ সভা শুরু হয়।
এমএন লারমা ছিলেন ১৯৭৩ সালের সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য। বাংলাদেশের সংবিধানে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে জাতীয় সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেছিলেন তিনি।
১৯৭২ সালের ৭ মার্চ পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তার নেতৃত্বে গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। ১৯৭৩ সালের ৭ জানুয়ারি গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র সংগঠন ‘শান্তিবাহিনী’; যে সংগঠনটির সদস্যরা ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সাক্ষরের মাধ্যমে অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।
১৯৩৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট এলাকার মাওরুম গ্রামে জন্ম নেন মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা।
১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর খাগড়াছড়ি জেলার ভগবান টিলায় নিজের গঠিত শান্তি বাহিনীর একদল বিভেদপন্থির হাতে আট সহযোদ্ধাসহ তিনি নিহত হন।
এমএন লারমা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও অঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার বড় ভাই।