প্রতিবারের মত সিসিসির এবারের বাজেটও উন্নয়ন অনুদান, হাল কর ও বকেয়া কর নির্ভর।
Published : 27 Jun 2024, 07:13 PM
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১ হাজার ৯৮১ কোটি ৫২ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
বন্দর নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টায় তার চতুর্থ বাজেট ঘোষণা করেন তিনি।
প্রতিবারের মত এবারের বাজেটও উন্নয়ন অনুদান, হাল কর ও বকেয়া কর নির্ভর।
বাজেটে আগামী অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ব্যয়ও হবে উন্নয়ন কাজে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় হবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা ও পারিশ্রমিক খাতে।
রেজাউল করিম বলেন, “আমি দায়িত্ব গ্রহণ করেছি ১ হাজার ৭৫ কোটি টাকা দেনা নিয়ে। তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে দেনা পরিশোধের পর আজ চট্টগ্রাম সিটির দেনার পরিমাণ ৪৪০ কোটি টাকা।
“যারা আমাকে নাগরিকসেবা ও উন্নয়নের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, সেই গুরু দায়িত্ব স্মরণে রেখে সমৃদ্ধ বাসযোগ্য নান্দনিক নগর প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করে বাজেট উপস্থাপন করছি।”
নতুন অর্থবছরের বাজেটের ঘোষণার দিনে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের ১ হাজার ৬৬১ কোটি ৯ লাখ ৪০ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেটও উপস্থাপন করেন মেয়র।
গত অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ১ হাজার ৮৮৭ কোটি ২৮ লাখ টাকার; সে হিসেবে বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে ৮৮ শতাংশের বেশি।
আয়ের লক্ষ্য
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সবচেয়ে বেশি আয় ধরা হয়েছে উন্নয়ন অনুদান খাতে, ৯০৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রাপ্তি ৫০০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে 'এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়ন' প্রকল্পে। আর লোকাল গর্ভমেন্ট কোভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড রিকভার প্রকল্পে ১৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়ার হিসাব ধরা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে উন্নয়ন অনুদান খাতে ৮৯৪ কোটি টাকা প্রত্যাশা করা হলেও আরও প্রায় একশ কোটি টাকা বেশি অর্থাৎ ৯৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে সিসিসি।
এর মধ্যে 'এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়ন' প্রকল্পে ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ মিলবে এমনটা গতবারের প্রস্তাবিত বাজেটে ধরা হয়েছিল। বছর শেষে এই প্রকল্পে বরাদ্দ মিলেছে ৬১৬ কোটি টাকা।
এ প্রকল্পে উন্নয়ন বরাদ্দ বেশি মিললেও সিসিসির নিজস্ব আয়ের খাতগুলোতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। তারপরও ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে গতবারের চেয়েও বেশি আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে হাল কর ও অভিকর খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা; বছর শেষে সংশোধিত বাজেটে দেখা গেল, এ খাতে আয় ১৯৬ কোটি টাকা। আর ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে আয় ধরা হয়েছে ২৩২ কোটি টাকা।
একইভাবে গত অর্থবছরের বাজেটে বকেয়া কর ও অভিকর খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা; বিপরীতে আয় হয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, যা মাত্র ৩০ শতাংশ। অথচ ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়িয়ে আয় ধরা হয়েছে ২৩৯ কোটি ৪৭ টাকা।
ব্যয়ের হিসাব
সিসিসির ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সবেচেয়ে বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে উন্নয়ন খাতে মোট ৯০৪ কোটি টাকা।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ হবে 'এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়ন' প্রকল্পে ৫৫০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ‘লোকাল গর্ভমেন্ট কোভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড রিকভার’ প্রকল্পে ১৮০ কোটি, সড়কবাতি আধুনিকায়ন প্রকল্পে ৮০ কোটি, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আবাসন নির্মাণ প্রকল্পে ৫০ কোটি এবং নতুন নগর ভবন নির্মাণে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে।
এ বছর ব্যয় খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খরচ হবে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা ও পারিশ্রমিক খাতে ৩২৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় হয়েছে ৩০০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
অর্থ ও সংস্থাপন স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইসমাইল বাজেটের আর্থিক বিবরণ উপস্থাপন করেন।
নগরীর সীমানা বাড়াতে চান মেয়র
২০০৯ সালে একবার সিসিসির এলাকা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। পরে সে উদ্যোগ থেমে যায়। এবারের বাজেট অধিবেশনে ফের সেই উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন মেয়র রেজাউল।
বাজেট অধিবেশনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “৬০ বর্গমাইল এলাকায় ৭০ লাখ মানুষের বাস। সিটি করপোরশনের আওতা আমরা বাড়াতে চাই। একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আলোচনাও করেছি। একটা কমিটি করেছি। জরিপ করে প্রতিবেদন দিলে কার্যক্রমে হাত নেব। যে এলাকা নিতে চাই সেখানকার বাসিন্দাদের মতামত নেব।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, “বাণিজ্য নগরী হলেও এখানে কোনো আন্তর্জাতিক মানের মিলনায়তন নেই। এফআইডিসি রোডের সামনে আমাদের ১১ একর জমি আছে। সেখানে চার-পাঁচ একর জমিতে ‘ইন্টারন্যাশনাল মাল্টিপারপাস হল’ এবং শিশু পার্ক করতে চাই।”
বাজেট অধিবেশনে ফুটপাত দখলমুক্ত করা ও জলাবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ নিয়েও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন, প্যানেল মেয়র আফরোজা কালাম, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বাজেট অধিবেশনে ছিলেন।