ওমরগনি এমইএস কলেজের বিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শাওন পড়ালেখার পাশাপাশি ফটোগ্রাফি করতেন।
Published : 28 Feb 2024, 05:40 PM
চট্টগ্রামে একদিন আগে যে কলেজছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, তাকে ক্যামেরা ছিনিয়ে নিতে খুন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বুধবার ভোর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ছিনিয়ে নেয়া ক্যামেরা উদ্ধারও করেছে।
গ্রেপ্তাররা হলেন- ইমতিয়াজ আলম মুরাদ (২১), আশহাদুল ইসলাম ইমন (২৪), তৌহিদুল আলম (২৩), মো. বাহার (২২) ও মো. আলমগীর (৩০)।
তাদের মধ্যে মুরাদ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত এবং ইমন ক্যামেরা ছিনতাইয়ের অন্যতম পরিকল্পনাকারী বলে পুলিশের ভাষ্য।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) পংকজ দত্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নিহত শাওনের মতো ইমনও ফটোগ্রাফি করেন বলে পুলিশকে জানিয়েছে। মূলত সে ক্যামেরা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনাকারী।
তিনি বলেন, “গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ইমন গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে ছবি তোলার কথা বলে সাড়ে সাত হাজার টাকায় শাওনের সঙ্গে চুক্তি করে এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৫০০ টাকা অগ্রিম দেয়। কথামত শাওন সোমবার রাতে কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় যায়।
“সেখান থেকে শাওনকে অনুষ্ঠানস্থলে নেয়ার কথা বলে অনন্যা আবাসিক এলাকায় নিয়ে যায় মুরাদ। মুরাদ শাওনের মোটর সাইকেলে করে এবং ইমন ও বাহার একটি অটোরিকশা নিয়ে সেখানে পৌঁছায়।”
পুলিশ কর্মকর্তা পংকজ দত্ত বলেন, “অনন্যা আবাসিক এলাকায় নেয়ার পরপরই শাওনের কাছ থেকে মুরাদ ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। শাওন বাধা দেয়ায় তাকে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করে।”
চট্টগ্রামের অনন্যা আবাসিক এলাকার সড়কের পাশ থেকে মঙ্গলবার শাওন বড়ুয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ওমরগনি এমইএস কলেজের বিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শাওন পড়ালেখার পাশাপাশি ফটোগ্রাফি করতেন।
পুলিশ জানায়, শাওন ফটোগ্রাফি করলেও তার নিজের ক্যামেরা ছিল না। অন্যের কাছ থেকে ক্যামেরা ভাড়া নিয়েই মূলত তিনি কাজ করতেন।
যেভাবে শনাক্ত হয় খুনি
পুলিশ কর্মকর্তা পংকজ দত্ত বলেন, ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়া হলেও শাওনের কাছ থেকে মোবাইল, মানিব্যাগ কিছুই নেয়নি গ্রেপ্তারর। মৃতদেহের পাশেই শাওনের মোবাইল ফোন ও মোটর সাইকেল পড়ে ছিল। আর অন্য একটি হাতঘড়ি পড়ে ছিল।
হাতঘড়িটি গ্রেপ্তার মুরাদের বলে তার ভাষ্য।
পুলিশ জানায়, বিভিন্ন ফটোগ্রাফারের ফেইসবুক পেইজ থেকে ফোন নম্বর সংগ্রহ করে ইমন টেলিফোনে শাওনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। শাওনের সঙ্গে মুরাদও টেলিফোনে যোগাযোগ করেছিলেন। বিশ্বাস স্থাপনের জন্য মোবাইলে ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৫০০ টাকা বুকিং মানিও দেয়া হয়।
চট্টগ্রামে সড়কের পাশে পড়েছিল তরুণের লাশ
শাওনকে যে দোকানের মোবাইল থেকে টাকা পাঠানো হয়েছিল মঙ্গলবার বিকালে দোকানটি শনাক্ত করা হয়। কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকার দোকানটিতে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ইমনকে দেখা যায় টাকা পাঠাতে।
কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকা থেকে ইমনকে আটকের পরই অন্যদের আটক করা হয় এবং বাহারের বাসা থেকে ছিনতাই করা ক্যামেরাটি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এডিসি পংকজ দত্ত বলেন, “ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করায় শাওন ও মুরাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে মুরাদ ছুরি দিয়ে শাওনকে সাতটি আঘাত করে। অদূরে ইমন ও বাহার দাঁড়িয়ে ছিল।”
“ছু্রিকাঘাতে শাওন নিস্তেজ হয়ে যাওয়ার পর তৌহিদ ঘটনাস্থল থেকে মুরাদকে আরেকটি মোটর সাইকেলে করে নিয়ে যায়।”
ক্যামেরা ছিনতাইয়ের এ পরিকল্পনায় আরও কয়েকজন জড়িত আছে জানিয়ে পঙ্কজ দত্ত বলেন, তাদেরও ধরতে অভিযান চলছে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শাওনের বাবা টিপু বড়ুয়া একটি হত্যা মামলা করেছেন।