৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার টানেলে দুটি টিউব দিয়ে যাওয়া আসা করবে যানবাহন।
Published : 07 Feb 2024, 11:58 AM
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে দুই প্রান্তকে সড়কপথে যুক্ত করা ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ নির্মাণের কাজ শেষ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামবাসীর স্বপ্নের এ টানেলের উদ্বোধন করবেন, পরদিন এ পাতাল পখ সবার চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রাণলয়ের সেতু বিভাগের সচিব মো মনজুর হোসেন।
মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিমূলক সভা হয় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সেতু সচিব।
তিনি বলেন, “২৮ অক্টোবর উদ্বোধনের সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। সেদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী টানেল উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের পরদিন ২৯ অক্টোবর জনসাধারণের জন্য টানেল খুলে দেওয়া হবে। টানেলের প্রি কমিশনিং শেষ। এখন সেইফটি ড্রিল হবে।”
বন্দরনগরীর পতেঙ্গা নেভাল অ্যাকাডেমির পাশ দিয়ে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরতায় নেমে যাওয়া এই পাতাল পথ কর্ণফুলীর ওপারে আনোয়ারায় সিইউএফএল ও কাফকোর মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে আবার ভূপৃষ্ঠে উঠবে। ৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার টানেলে দুটি টিউব দিয়ে যাওয়া আসা করবে যানবাহন।
টানেলে প্রতিটি সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। একটির সঙ্গে অপর টিউবের দূরত্ব ১২ মিটারের মত। প্রতিটি টিউবে দুটি করে মোট চারটি লেইন রয়েছে।
টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম ও প্রান্তে থাকছে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। এ ছাড়া ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ওভারব্রিজ রয়েছে আনোয়ারা প্রান্তে।
সেতু সচিব বলেন, "এই টানেল দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। এটা সুন্দর রাখা সবার দায়িত্ব। সিডিএ খেয়াল রাখবে, তাদের বেশ কিছু দায়িত্ব আছে। টানেলের সুফল পেতে এন্ট্রি ও এক্সিট সহজ করা জরুরি।"
তিনি জানান, এই টানেলে গাড়ি চলবে ঘণ্টায় ৮০কিলোমিটার গতিতে। তবে শুরুতে হয়ত গতি কিছুটা কম রাখতে হবে, যাতে সবাই অভ্যস্ত হতে পারে। মোটর সাইকেল বা অটোরিকশার মত তিন চাকার বাহন এ টানেলে চলবে না।
“ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করে টানেল করা হয়েছে। চট্টগ্রাম কক্সবাজারের যেসব মেগা প্রকল্প চলমান, সেগুলোর সুফলের জন্য। জনসাধারণের জন্য বাস সার্ভিস থাকবে।"
মনজুর হোসেন বলেন, “টানেল এলাকায় গেলে আপনার গাড়িতে যদি এফএম রেডিও চালু থাকে, তাহলে আটটি এফএম রেডিওতে টানেল ব্যবহারের নির্দেশনা চলতে থাকবে।”
সরকার আশা করছে, বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের চিত্র পাল্টে যাবে এবং এখানকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপক প্রসার ঘটবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে যুক্ত করবে এই সুড়ঙ্গপথ। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামর সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ আরও সহজ হবে।
নদীর দক্ষিণে আনোয়ারায় রয়েছে কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইপিজেড, সিইউএফএল ও পারকি সমুদ্র সৈকত। কর্ণফুলী পেরিয়ে আনোয়ারা দিয়েই কক্সবাজার, বাঁশখালী ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যাবে।
কর্ণফুলী নদীর দুইপাড়ে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার। ২০১৫ সালে অনুমোদন পাওয়ার দুই বছর পর ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে কাজ শুরু হয়।
এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে একটি নতুন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বানানো হয়েছে এ টানেল। নির্মাণ কাজ করছে চীনা কোম্পানি ‘চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’।
চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা বাড়াতে এবং প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দরের নির্মাণ কাজ ত্বরান্বিত করতেও এই টানেল ভূমিকা রাখবে বলেও সরকার আশা করছে।
বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ অর্থায়নে টানেল প্রকল্পের শুরুর দিকে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। অনুমোদনের দুই বছর পরে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শুরু হলে ব্যয় বাড়িয়ে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা করা হয়।
(প্রতিবেদনটি প্রথম ফেইসবুকে প্রকাশিত হয়েছিল ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক)