‘তোঁয়ার লাই আঁর পেট পুরের’

চট্টগ্রামে জনসভায় গিয়ে চট্টগ্রামের ভাষায়ই কথা বললেন শেখ হাসিনা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2022, 03:53 PM
Updated : 4 Dec 2022, 03:53 PM

“আসসালামু আলাইকুম, অঁনরা ক্যান আছন? বেগ্গুন গম আছননি? তোঁয়ার লাই আঁর পেট পুরের, তাই আমি আইসি।“

রোববার পলোগ্রাউন্ডের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এভাবেই বক্তব্যের শুরুটা করেন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায়; যার অর্থ, “আসসালামু আলাইকুম, আপনারা কেমন আছেন? সবাই ভালো আছেন তো? তোমাদের জন্য আমার প্রাণ কাঁদে, তাই আমি এসেছি।”

নিজেদের ভাষায় বঙ্গবন্ধুকন্যার সম্ভাষণ শুনে সমবেত জনতাও তখন হর্ষধ্বনি তোলে।

শেখ হাসিনা বলেন, “নানা কারণে চট্টগ্রাম আমাদের প্রিয়। আব্বা জেল থেকে বের হলেই আমাদের নিয়ে আসতেন চট্টগ্রামে। আজও চট্টগ্রাম আসলে তখনকার নেতাকর্মীদের কথা মনে পড়ে। করোনায় অনেকদিন জনসভা করতে পারিনি। তাই আপনাদের কাছে এসে হাজির হয়েছি।”

চট্টগ্রামের প্রয়াত নেতাদের স্মরণ করার পাশাপাশি ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি লালদিঘী ময়দানে সভা করতে এসে পুলিশের গুলিতে নেতাকর্মীদের নিহত হওয়ার ঘটনা স্মরণ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “সেই ঘটনার নির্দেশদাতা পুলিশ কর্মকর্তাকে পরে বেগম খালেদা জিয়া পদোন্নতি দিয়েছিল। খুনিদের সাথে জানি না তাদের কী সংযোগ?”

আওয়ামী লীগের আমলে চট্টগ্রামে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “চট্টগ্রামে প্রথম বিমানবন্দর আমরা করেছি। ঢাকা-চট্টগ্রাম ৪ লেন আওয়ামী লীগ করে দিয়েছে। ৬ লেন করব। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রাস্তা ও রেললাইন করছি।

“কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করব। মেরিন একাডেমি, মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি- সব করে দিয়েছি। আমরা চাই, নতুন প্রজন্ম শিক্ষিত হোক। খালেদা জিয়া আজ কোথায়? জেলে কেন? এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত। তার এক সন্তান মারা গেছে, যে অর্থ পাচার করেছিল, আমরা ফেরত এনেছি। আরেকজনকে কুলাঙ্গার বানিয়ে গিয়েছিল জিয়াউর রহমান। সে এখন লন্ডনে বসে আছে। তত্ত্বাবধায়ক আমলে দেশ ছেড়ে গিয়েছিল মুচলেকা দিয়ে।”

সারাদেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের পতেঙ্গা সৈকতে মেরিন ড্রাইভ করে দিয়েছি। বন্দরের উন্নয়ন করেছি। চট্টগ্রামে যাতে মেট্রোরেল হয়, সমীক্ষার কাজ শুরু করেছি; ভবিষ্যতে তা করে দিব।

“বন্দরের আরও উন্নতির জন্য বে টার্মিনাল করছি। কালুরঘাটে সড়ক ও রেল ব্রিজ নতুন করে করবার উদ্যোগ নিয়েছি। এখানে ১৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি। আরও ১৩০০ মেগাওয়াটের কাজ চলছে। এ অঞ্চলে বিদ্যুতের ঘাটতি আর হবে না।”

টানেল চেয়েছিলেন মহিউদ্দিন ভাই’

জনসভায় ৫০ মিনিটের বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে কর্ণফুলী টানেল সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রয়াত মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কথা স্মরণ আওয়ামী লীগ সভাপতি।

শেখ হাসিনা বলেন, “চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছি। আরও প্রকল্প নিচ্ছি। কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল করে দিয়েছি। আশা করি, কিছু দিনের মধ্যে এই টানেল খুলে দিতে পারব। টানেল দিয়ে আপনারা আনোয়ারা যেতে পারবেন।

“আজ মহিউদ্দিন চৌধুরীর কথা মনে পড়ে। উনি সবসময় টানেলের কথা বলতেন। উনাকে বলেছিলাম কর্ণফুলীর উপর আর কোনো সেতু করব না। মহিউদ্দিন ভাই টানেল চেয়েছিলেন। আজ টানেল করেছি। তিনি আজ দেখে যেতে পারলেন না।”

চট্টগ্রামবাসীর উদ্দেশে কবিগুরুর ভাষায় শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা আমার পরিবার। নিঃস্ব আমি রিক্ত আমি, দেবার কিছু নাই, আছে শুধু ভালোবাসা, দিয়ে গেলাম তাই। আমরা আসব। দেখা হবে।”