পুলিশ ভ্যানে ট্রেনের ধাক্কা: গেইটম্যান ছিলেন না, লোহার বার ছিল ওঠানো

ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছে রেলওয়ে।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ট্রেনের সঙ্গে পুলিশের পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষের সময় ফকিরপাড়া রেলক্রসিংয়ে গেইটম্যান ছিলেন না, সেসময় সেখানে লোহার বারও ছিল না নামানো।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও রেল কর্মকর্তারা গেইটম্যান শাহরিয়ার মাহমুদ বিপুর উপস্থিত না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গাফিলতির কারণে পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরিচ্যুতও করেছে।

রোববার বেলা সোয়া ১২টার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার দক্ষিণ ছলিমপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ফকিরপাড়া ওয়ার্ডের রেলক্রসিংয়ে সীতাকুণ্ড থানা পুলিশের একটি টহল পিকআপে ধাক্কা দেয় ঢাকা থেকে আসা আন্তঃনগর ট্রেন ‘সোনার বাংলা এক্সপ্রেস’। তাতে তিন পুলিশ কনস্টেবল নিহত হন, আহত হন এসআইসহ দুইজন।

সীতাকুণ্ড থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের টহল দলটি পিকআপ নিয়ে ফকিরপাড়া এলাকায় একটি ঘটনা তদন্তে যাবার পথে রেলক্রসিং পার হবার সময় সোনার বাংলা এক্সপ্রেস পেছন দিক থেকে ধাক্কা মারে। এ সময় পেছনে থাকা তিন পুলিশ কনস্টেবল মারা যান।

“আমরা প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হয়েছি ট্রেনটি আসার সময় ওই রেলক্রসিংয়ে কোনো গেইটম্যান ছিলেন না, লোহার বারও নামানো ছিল না। সে কারণেই পিকআপটি রেললাইনে উঠে যায়।”

ওসি তোফায়েল বলেন, “যখন পিকআপটি রেললাইনে উঠেছে, তখন ওই এলাকায় প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। লোহার বার না থাকায় গাড়ির চালক হয়ত ট্রেনের আসার বিষয়টি সেভাবে টের পাননি। গেইটম্যান থাকলে হয়ত এ দুর্ঘটনা ঘটত না। দুর্ঘটনার পর গেইটম্যান বিপুকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।”

প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য

ফকিরহাট রেলক্রসিংয়ের পাশে লাগোয়া তরকারি ও মুরগি বিক্রেতা মোহাম্মদ তারেক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পুলিশের পিকআপটি যখন রেললাইনে উঠছিল, তখন প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। গাড়িটির জানালার কাচও ছিল বন্ধ।

“ওইসময় ট্রেনের হুইসেল শুনে আমরা কয়েকজন চিৎকার করি। কিন্তু কাচ বন্ধ থাকায় তারা শোনে নাই। রেল লাইন পার হবার সময় পিকআপের পেছন দিকে ট্রেনটি ধাক্কা মারে। ধাক্কা লাগার সাথে সাথে পুলিশের গাড়িটি ঘুরে গেইটের লোহার সাথে ধাক্কা লাগে। পেছনে থাকা তিনজন পুলিশ পড়ে যান।”

তারেক জানান, ট্রেন চলে যাবার পর তিনি ও স্থানীয় লোকজন মিলে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন। তারা আহতদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা নেন।

ট্রেনটি আসার আগে গেইটম্যান বিপু সেখানে ছিলেন না দাবি করে তিনি বলেন, “লোহার বারটিও নামানো ছিল না। ওই গেইটম্যান দীর্ঘদিন ধরে অনিয়মিতভাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। নিয়মিত বেতনও পেত না বলে বিপু তাদের জানিয়েছিল।”

গেইটম্যান চাকরিচ্যুত

পুলিশের পিকআপের সাথে ট্রেনের দুর্ঘটনায় তিন কনস্টেবল নিহতের ঘটনার পর ফকিরহাট রেলক্রসিংয়ের গেইটম্যান শাহরিয়ার মাহমুদ বিপুকে চাকরিচ্যুত করার কথা জানিয়েছেন পূর্ব রেলের ডিআরএম আবিদুর রহমান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে গেইটম্যানের গাফিলতি পাওয়া গেছে। দুর্ঘটনার সময় সে ঘটনাস্থলে ছিল না। সেকারণে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।”

গেইটম্যান বিপু আউটসোর্সিংয়ের ভিত্তিতে চাকরি করছিলেন। অর্থাৎ তিনি রেলওয়ের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী নন।

ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি হয়েছে জানিয়ে আবিদুর রহমান বলেন, তদন্তে প্রকৃত ঘটনা উঠে আসবে।

তদন্তে রেলের চার সদস্যের কমিটি

সীতাকুণ্ডের ফকিরহাটে সোনার বাংলা ট্রেনের সাথে পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে তিন পুলিশ কনস্টেবল নিহতের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে পূর্ব রেলের তরফে।

পূর্ব রেলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) আনিসুর রহমানকে প্রধান করে দুর্ঘটনার পরপরই চার সদস্যের এই কমিটি করা হয়।

পূর্ব রেলের ডিআরএম আবিদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

হতাহতদের পরিচয়

নিহত পুলিশ কনস্টেবলরা হলেন- মো. হোসাইন, এস্কান্দর আলী মোল্লা ও মো. মিজানুর রহমান। হোসাইন কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা গ্রামের ফরিদ আহম্মদের ছেলে। এস্কান্দর বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার ভাড়াশিয়া গ্রামের মসরুম মোল্লার ছেলে এবং মিজানুর গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার উজানি গ্রামের ইমান আলী মুন্সীর ছেলে।

আহতরা হলেন- সীতাকুণ্ড থানার এসআই সুজন শর্মা ও তাদের গাড়ি চালক সমর চন্দ্র সরকার।

সীতাকুণ্ডে ট্রেনের পথে টহল পিকআপ, তিন পুলিশের মৃত্যু