নাছির বলেন, কেউ যদি দলীয় আদর্শ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করেন তাকে কিছুতেই ছাড় দেয়া হবে না।
Published : 06 Dec 2023, 09:28 PM
সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপ ও নেতাকর্মীদের নিয়ে ‘বিষোদগার’ করায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ আসনে দল মনোনীত প্রার্থী এম এ লতিফের ব্যাখ্যা চাইবে নগর আওয়ামী লীগ।
বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।
নগর কমিটির প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে রাতে গণমাধ্যমকে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, “চট্টগ্রাম-১১ আসনের এমপি এম এ লতিফ গত কয়েকদিন ধরে গণমাধ্যমে দলীয় আদর্শ ও নীতিনৈতিকতা লঙ্ঘন করে চলেছেন। তার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ।
“বুধবার সন্ধ্যায় কার্যকরী কমিটির সভায় গৃহীত সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক এম এ লতিফের কাছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ ব্যাখ্যা চাইবে।”
সভায় চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, “একমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া, যত বড় নেতাই হই না কেন আমরা কেউই দলের ঊর্ধ্বে নই। কেউ যদি দলীয় আদর্শ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করেন তাকে কিছুতেই ছাড় দেয়া হবে না।
“দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদেরকে যে দিক নির্দেশনাগুলো দিয়েছেন তা থেকে তিল পরিমাণ বিচ্যুত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি এই ধরণের কাজ করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে অবহিত করা হবে এবং আশা করি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।”
চট্টগ্রামের আসনগুলোতে দলীয় প্রার্থদের বিজয়ী করার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “কিন্তু বিতর্কিত কোনো ব্যক্তিকে যদি নৌকা প্রতীক দেওয়া হয় তাহলে নগর আওয়ামী লীগের ওই ব্যক্তি সম্পর্কে মতামত কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অবশ্যই বিবেচনা করবেন বলে প্রত্যাশা করি।”
বুধবারের নির্বাহী কমিটির সভায় নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেন, “নৌকা প্রতীক নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরের অন্তর্ভুক্ত ও আওতাধীন ৬টি আসন থেকে যারা নৌকা প্রতীক পেয়েছেন তাদেরকে অবশ্যই মহানগর আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত ও মতামতের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নির্বাচন করতে হবে।
“কেউ যদি বিচ্ছিন্নভাবে নিজের মতো করে নির্বাচন করেন তাহলে তা সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে পরিণত হবে এবং তা আমরা কিছুতেই হতে দিতে পারি না। বিগত কয়েকদিন ধরে এম এ লতিফ সভা সমাবেশ করে দলের পরীক্ষিত ও নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের ছিন্নমূল বলে অপবাদ দিয়েছেন। যা আমরা কিছুতেই বরদাস্ত করতে পারি না।”
বুধবারের সভায় উপস্থিত ছিলেন নগর কমিটির সহ সভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, এড. সুনীল কুমার সরকার, ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শফিকুল ইসলাম ফারুক, সৈয়দ হাসান মাহমুদ শমসের, শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মসিউর রহমান চৌধুরী, হাজী মো. হোসেন ও ইঞ্জিনিয়ার মানস রক্ষিত।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ। চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি লতিফ নগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটিরও সদস্য।
২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে পর্যন্ত লতিফ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। পরে দলীয় সংসদ সদস্য হয়ে নগরের রাজনীতি তিনি ছিলেন নাছিরঘনিষ্ঠ। এরপর নানা কারণে নাছিরের সঙ্গে তার দূরত্ব বাড়ে। বরং প্রয়াত নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর বলয়ে তার ঘনিষ্ঠতা হয়।
এবার লতিফ দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর তার আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জিয়াউল হক সুমন।
মনোনয়ন ঘোষণার একদিন পরই সুমনের পক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরসহ তার অনুসারী নেতারা। সেই সভায় লতিফের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তোলেন নগর কমিটির ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের নেতারা।
এরপর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি নগর আওয়ামী লীগকে দেয়া হয়। যাতে লতিফের পরিবর্তে সুমনকে দলীয় প্রার্থী করার আবেদন জানানো হয়।
এরপর গত সপ্তাহে নগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভায় লতিফ ইস্যুতে নাছিরের অনুসারী কয়েকজন নেতা বক্তব্য রাখেন। তৃণমূলের নেতাদের দেয়া ওই চিঠি দলের কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান নাছির।
এ বিষয়ে এম এ লতিফ দাবি করেন, তার কাছ থেকে যারা অনৈতিক সুবিধা চেয়ে পায়নি তারাই তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাকে পরাজিত করতে পারে এমন কোনো শক্তি নেই।
এরপর স্থানীয় সংসদ সদস্য লতিফের পক্ষের এক মতবিনিময় সভায় ১ ডিসেম্বর অংশ নেন মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরী।
এ ঘটনায় স্থানীয় এক ভোটারের লিখিত অভিযোগের পর মেয়র ও লতিফের কাছে আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে কিনা জানতে তাদের ব্যাখ্যা চেয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি।
কার্যত চট্টগ্রাম-১১ আসনে দল মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নিয়ে আবারও চাঙ্গা হয়েছে নগর আওয়ামী লীগের পুরনো বিরোধ।