রোববার সকাল ৭টার মধ্যে প্রত্যেক নির্বাচনি আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার নেতৃত্বে ব্যালট বিতরণ শেষ করা হবে।
Published : 05 Jan 2024, 06:22 PM
কয়েকটি আসনে উত্তাপ-সহিংসতার মধ্যে দিয়ে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের প্রচার শেষে চলছে ভোটের প্রস্তুতি। নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবারই নজর এখন ভোটগ্রহণ ঘিরে।
সারাদেশে রোববার সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে ভোটগ্রহণ। এবার চট্টগ্রামে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১২৫ জন প্রার্থী।
শুক্রবার সকাল থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তারা দফায় দফায় সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠক করছেন।
ইতিমধ্যে নগরী ও জেলায় সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয়েছে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে নৌবাহিনীর পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি।
রিটার্নিং অফিসার ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভোট গ্রহণের জন্য সামগ্রিক প্রস্তুতি গ্রহণ শেষ।
চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে এবার মোট ভোটার ৬৩ লাখ ১৪ হাজার ৩৯৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩২ লাখ ৮৯ হাজার ৫৯০ জন, নারী ভোটার ৩০ লাখ ২৪ হাজার ৭৫১ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৫৬ জন।
চট্টগ্রামের সব আসন মিলিয়ে মোট ভোট কেন্দ্র ২০২৩টি এবং ভোট গ্রহণ কক্ষ ১৩ হাজার ৭৩২টি।
প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ৪৩ হাজার ২১৯। ১০ শতাংশ অতিরিক্তসহ ভোট গ্রহণের দায়িত্বে থাকবে মোট ৪৭ হাজার ৫৪৪ জন।
১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে বন্দর নগরী ও জেলার ১৬টি আসনের মধ্যে পটিয়া, বাঁশখালী, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া, সন্দ্বীপ ও মীরসরাই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
সবশেষ বৃহস্পতিবার রাতেও পটিয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরী ও নৌকার প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর কর্মী-সমর্থকদের পাল্টপাল্টি হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া লোহাহাড়া ও বাঁশখালী থেকে শেষদিনে প্রচারণাকেন্দ্রিক গোলযোগের অভিযোগ এসেছে।
তবে বন্দর নগরীতে গত কয়েকদিনে প্রচারণা নিয়ে তেমন কোনো সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি। প্রচারণা শেষ হওয়ার পর শুক্রবার দিনভর নগরী ও জেলার কোথাও কোনো সংঘাতের খবর পাওয়া যায়নি।
আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী শুক্রবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ। ১৬ আসনের সব নির্বাচনি সরঞ্জামও স্ব স্ব আসনের নির্বাচনি এলাকায় পৌঁছেছে।
“আজ সকাল ৮টায় প্রচারণা বন্ধ হয়েছে। সেনাবাহিনী ও বিজিবি দায়িত্ব পালন শুরু করেছে। ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সকালেও আমরা সভা করেছি।”
চট্টগ্রামে মোট ২০২৩টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ১৪৬৩টিকে। যার মধ্যে জেলায় ১০১৩টি এবং নগরীতে ৪৫০টি কেন্দ্র।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও জেলার ১০টি আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান শুক্রবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে যা যা করা দরকার, সব করা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে সকল ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
“কেউ নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্নিত করতে চাইলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখনও আমরা জরুরি সভায় বসেছি। কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত থাকলে পরে বিস্তারিত জানাব।”
ভোট গ্রহণের দিন ৭৯ জন নির্বাহী হাকিম ও ৩২ জন বিচারিক হাকিম দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানান তিনি।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে বিজিবি, আনসার কোস্ট গার্ড দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে। উপজেলা পর্যন্ত তারা স্ট্যান্ডবাই থাকবে। যে কোনো সময় তারা রিটার্নিং কর্মকর্তার কলে রেসপন্স করবে।
“কোনো ভোটারকে যদি কেউ বাধা দেয়, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব। সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কেউ ভোটকেন্দ্র দখল বা দখলের সক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারবে না। আপনার ভোট আপনি দেবেন, নিশ্চিত করতে পারি কোনো ধরনের ঝামেলা হবে না।”
নির্বাচন সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যেসব এলাকায় প্রচারণায় সংঘাত হয়েছে, সেসব এলাকায় নিরাপত্তা নজরদারি বেশি থাকবে।
রোববার সকাল ৭টার মধ্যে প্রত্যেক নির্বাচনি আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার নেতৃত্বে ব্যালট বিতরণ শেষ করা হবে।
প্রতিটি উপজেলায় আলাদা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ করা হবে এবং নগরীর চারটি আসনের জন্য আলাদা তিনটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ করা হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।