বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দীতেই জনসভা করতে হবে: হানিফ

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “দেশে সরকার আছে, আইন আছে। নিজের ইচ্ছামত কারো চলার কোনো সুযোগ নেই।”

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2022, 01:35 PM
Updated : 29 Nov 2022, 01:35 PM

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেছেন, বিএনপি ১০ ডিসেম্বর জনসভা করতে চাইলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই তাদের করতে হবে।

মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগরীর একটি কনভেনশন সেন্টারে যুবলীগের বিভাগীয় প্রস্তুতি সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

চট্টগ্রামে ৪ ডিসেম্বর ও কক্সবাজারে ৭ ডিসেম্বর দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভা সামনে রেখে এই সভা হয়।

হানিফ বলেন, “উনারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (জনসভা) করতে চান না। কেন? এই বিএনপি জামায়াত এদের মধ্যে একটা আতঙ্ক কাজ করে সবসময়। কারণ একাত্তর সালে এ জায়গায় তাদের পরাজয়ের কলঙ্ক রচিত হয়েছিল। আর ডিসেম্বর মাস। বিএনপি এ কারণে ভাবে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মানেই এ মাঠে গিয়ে আবার পরাজয়ের কলঙ্কের কালিমা আসবে। এজন্য যেতে চান না ভয়ে।

“আমরাও বলেছি, সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেখানে অনুমতি দিয়েছে, সেখানেই জনসভা করতে হবে। দেশে সরকার আছে, আইন আছে। আপনাদের আইন মেনে চলতে হবে। নিজের ইচ্ছামত কারো চলার কোনো সুযোগ নেই।”

বিএনপি ঢাকার নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিল। তবে মহানগর পুলিশ তাদের ২৬ শর্তে সোহরাওয়ার্দী ময়দানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে।

বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ নেতা হানিফ বলেন, “আপনারা ১০ তারিখে সমাবেশ করতে চেয়েছেন। সমাবেশ করার জন্য আপনারা আবেদন করেছেন। আপনারা বলছেন, আপনাদের লক্ষ লক্ষ মানুষ হবে জনসভায়। ভালো কথা, হোক।

“তো লক্ষ লক্ষের জন্য আপনারা আবেদন করছেন নয়াপল্টন অথবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান না আরেক জায়গায় হোক। সরকার থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সিদ্ধান্ত দিয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। উনারা এখন করবেন না। উনারা বলছেন, আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাব না। কেন? পল্টনেই তারা করতে চান। তো পল্টনে তো লোক আঁটবে মাত্র ৩০-৪০ হাজার। আপনাদের লক্ষ লক্ষ লোক যাবে কোথায়?”

হানিফ বলেন, “তারা বলছে, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের পর এদেশ চলবে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। ওরে বাপরে। খালেদা জিয়া? এটা কে? খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাতকারী দুর্নীতিবাজ হিসেবে দণ্ডপ্রাপ্ত একজন কয়েদী। সে তো কারাগারে ছিল। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বদান্যতায়, কৃপায় উনি এখন কারাগার থেকে বাসায় আছেন। এখনও দণ্ডপ্রাপ্ত, এখনো আইনের চোখে কয়েদী। তার কথায় নাকি দেশ চলবে!

“আবার একজন বলল, তারেক রহমান লন্ডন থেকে বীরের বেশে আসবেন। একজন দুর্নীতিবাজ, দণ্ডপ্রাপ্ত, খুনি এবং মুচলেকা দিয়ে পলাতক আসামি, সে নাকি বীরের বেশে দেশে আসবেন। রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে!”

আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “এদের কথা শুনে আমার একটা কথা মনে পড়ল। বছর দুয়েক আগের ঘটনা। হঠাৎ করে কিছু ওয়াজ মাহফিলের শুরু হয়ে গিয়েছিল। এরমধ্যে একটা ওয়াজের বক্তা ছিল। রফিকুল ইসলাম মাদানী, শিশু বক্তা। সে একদিন উঠে বলল, ‘আমি দেশের সংবিধান মানি না, রাষ্ট্র মানি না, প্রেসিডেন্ট মানি না, আমি কাউকে মানি না।’ এদেশে বাস করছে, সংবিধান মানে না, রাষ্ট্র মানে না। কি পাওয়ারফুল সে বক্তা।

“এরপর ডিবি এসে নিয়ে আসার পরে বলে, আমার ভুল হয়েছে, মাফ করে দেন। একজন জিজ্ঞেস করেছিল, এ ধরনের বক্তব্য কেন দিয়েছিলে? বলল, লোকজন দেখে জোশ এসেছিল। জোশে দিয়ে ফেলেছি। বিএনপি নেতাদের অনেকে জোশে হুঁশ হারায় ফেলছে। বেশি জোশে হুঁশ হারিয়ে বেহুঁশ হইয়েন না। আপনাদের হুঁশ ফিরে আসলে হয়ত শিশু বক্তার মত পা জড়িয়ে ধরতে হতে পারে।”

যুবলীগ মাঠে নামছে দেখে বিএনপির অনেকে ‘বেহুঁশ থেকে আস্তে আস্তে হুঁশে ফিরে আসছে’ মন্তব্য করে হানিফ বলেন, “এখন কথাবার্তা একটু সোজা পথে বলা শুরু করছেন।”

যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়ে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার যোগ্যতা রাখে। এই যোগাতা শুধু বঙ্গবন্ধুর কন্যারই আছে। বর্তমান জটিল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপির কোন নেতার রাষ্ট্র পরিচালনা করার কোন যোগ্যতা নাই, দক্ষতা নাই, সক্ষমতা নাই।

“না আছে খালেদা জিয়ার, না আছে তার গুণধর পুত্ৰ তারেক জিয়ার। এই যোগ্যতা অর্জন করতে হলে দুর্নীতি পরিহার করতে হয়। এই যোগ্যতা অর্জন করতে হলে রাষ্ট্র পরিচালনার দক্ষতা থাকতে হয়। দক্ষতা নাই বলে নেতিবাচক রাজনীতির দিকে বিএনপি ধাবমান। কোন বিদেশি প্রভুদের হস্তক্ষেপে বা নির্দেশনায় বাংলাদেশে নির্বাচনও হবে না, সরকারও পরিবর্তন হবে না।”

যুবলীগ নেতাকর্মীদের রাজপথে জনগণের সাথে থাকার নির্দেশ দিয়ে পরশ বলেন, “রাজপথে থেকে জনগণকে সাথে নিয়ে এই সন্ত্রাসী এবং ভণ্ড রাজনীতিবিদকে আমরা সায়েস্তা করবো ইনশাল্লাহ এবং এদের সন্ত্রাস এবং নৈরাজ্যের আমরা দাঁতভাঙ্গা জবাব দেব।”

যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিলের সঞ্চলনায় সভায় বক্তব্য রাখেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মঞ্জুর শাহিন, মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, সাহদাত তসলিম, যুগ্ম-সাধারণ বদিউল আলম বদি, চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিষ্টার শেখ ফজলে নাইম, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগ, সহিদুল হক রাসেল, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আদিত্য নন্দী প্রমুখ।