আমাদের সুখের সংসার ধ্বংস করে দিয়েছে: প্রদীপের স্ত্রী

দুদকের এ মামলায় কয়েকটি ধারা মিলিয়ে প্রদীপকে মোট ২০ বছর এবং তার স্ত্রী চুমকিকে ২১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2022, 10:31 AM
Updated : 27 July 2022, 10:31 AM

অবৈধ সম্পদের মামলায় দোষী সাব্যস্ত টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ দাবি করেছেন, তিনি ‘নির্দোষ’, কোনো দুর্নীতি তিনি ‘করেননি’।

বুধবার রায় ঘোষণার পর আদালত থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রদীপ সাংবাদিকদের সামনে ওই দাবি করেন।

আর তার স্ত্রী চুমকি কারণের দাবি, প্রদীপের ‘ভালো কাজে’ ক্ষুব্ধ মহল তাদের ‘সুখের সংসার ধ্বংস’ করে দিয়েছে।

দুদকের এ মামলায় কয়েকটি ধারা মিলিয়ে প্রদীপকে মোট ২০ বছর এবং তার স্ত্রী চুমকিকে ২১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বুধবার বেলা ১১টার দিকে আদালতে আনা হয় প্রদীপ কুমার দাশকে। আর চুমকিকে আদালতে হাজির করা হয় তার আগেই।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মুন্‌সী আব্দুল মজিদ স্বল্প সময়ের মধ্যে রায় ঘোষণা করেন।

রায়ের পর দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক মাহমুদ বলেন, “প্রদীপ কুমার এবং চুমকি দাশের জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন, মানি লন্ডারিং এবং সম্পদের অপব্যবহারের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আজ রায় দেওয়া হয়েছে।

“সমস্ত সাক্ষ্য প্রমাণ ও কাগজপত্র পর্যালোচনা করে আদালত আসামি প্রদীপ কুমার দাশকে সর্বমোট ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং চুমকি কারণকে ২১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। তাদের স্থাবর অস্থাবর সমস্ত সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছেন।”

মাহমুদুল হক মাহমুদ বলেন, “দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রদীপ যে সম্পদ অর্জন করেছে, সে সম্পদকে বৈধ করার চেষ্টায় তার স্ত্রীর নামে লন্ডারিং করেছে। সেটা আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রমাণ করতে পেরেছি। তাই মাননীয় আদালত এই রায় দিয়েছেন।”

রায় ঘোষণার পর আদালত কক্ষ থেকে প্রিজন ভ্যানের দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রদীপ সেখানে থাকা সাংবাদিকদের সামনে বলেন, “আমি কোনো দুর্নীতি করিনি। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ।

“আমাকে সিনহা হত্যা মামলায় যে রায় দেওয়া হয়েছে, ওখানেও আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। আপনারা তদন্ত করে দেখেন। থানায় যদি বিভিন্ন অফিসার থাকে, বিভিন্ন এসআই থাকে, তারা যদি কোনো অপরাধ করে থাকে, ওই দায় দায়িত্ব তাদের।”

Also Read: দুর্নীতি: ওসি প্রদীপের ২০, চুমকির ২১ বছরের সাজা, সম্পদ বাজেয়াপ্ত

ব্যাপক হট্টগোল আর পুলিশের বাঁশির শব্দের মধ্যে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, “আমি শুধুমাত্র সরকারের জিরো টলারেন্স বাস্তবায়নের জন্য মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি।… যাতে যুব সমাজ ধ্বংস না হয়।”

প্রদীপের ১০-১৫ মিনিট পর আদালত থেকে চুমকিকে বের করা হয়। বাইরে থাকা সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, “আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট নই। আমার স্বামী ভালো কাজ করায় বিভিন্ন মহল তার বিরুদ্ধে লেগেছে।

“ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে আমাদের সুখের সংসার ধ্বংস করে দিয়েছে।”

কোন ধারায় কী সাজা

রায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় চুমকি কারণের ১ বছরের কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড হয়েছে। এই ধারায় খালাস পেয়েছেন প্রদীপ কুমার দাশ।

একই আইনের ২৭ (১) ধারায় প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি দুজনকেই ৮ বছরের কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের সাজা দেয়া হয়েছে।

মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় প্রত্যেককে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং চার কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরও ২ বছরের সাজা দেয়া হয়েছে প্রদীপ ও চুমকিকে।

১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় প্রদীপ ও চুমকি প্রত্যেকের দুই বছর করে কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ‍দুই মাসের সাজা দিয়েছে আদালত।

তিনটি আইনের চারটি ধারায় প্রদীপ কুমার দাশের মোট ২০ বছরের কারাদণ্ড এবং ৪ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো মোট ২ বছর ৮ মাসের সাজা হয়েছে।

আর তার স্ত্রী চুমকির মোট ২১ বছরের কারাদণ্ড, ৪ কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার টাকা ও অনাদায়ে আরো মোট ২ বছর ৯ মাসের সাজা হয়েছে।

দুদকের পিপি মাহমুদুল হক মাহমুদ বলেন, “সকল ধারার শাস্তি একসাথে কার্যকর হবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রের অনুকূলে মামলায় উল্লেখিত সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছে আদালত।”

২০২০ সালের ৩১ জুলাই কক্সবাজারে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে এপিবিএন চেকপোস্টে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় সেসময়ের টেকনাফের ওসি প্রদীপ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর তার অবৈধ সম্পদের খোঁজে তদন্তে নামে দুদক।

ওই বছর ২৩ অগাস্ট দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এ মামলার অভিযোগপত্রে যে সব সম্পদের উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো হলো- নগরীর পাথরঘাটায় একটি ছয় তলা বাড়ি, ষোলশহরে সেমিপাকা ঘর, ৪৫ ভরি সোনা, একটি করে কার ও মাইক্রোবাস এবং কক্সবাজারে ফ্ল্যাট।