শিব চতুর্দশী মেলা: চন্দ্রনাথ থেকে নামতে হুড়োহুড়ি, আহত ১০

প্রতি বছর শিব চতুর্দশীতে ১২০০ ফুট উঁচুতে চন্দ্রনাথ ধামে শিবের মন্দিরে সমবেত হন লাখ লাখ সনাতন ধর্মাবলম্বী দেশি-বিদেশি পূণার্থী।

ফাইল ছবি

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে চন্দ্রনাথ ধামে শিব চতুর্দশী মেলায় পাহাড়ে ওঠানামার সময় ধাক্কাধাক্কিতে ১০ জন আহত হয়েছেন।

রোববার সকালে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে ধাক্কাধাক্কির এ ঘটনা ঘটে। এরআগে শনিবার গভীর রাতে অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে ওঠার মূল সিঁড়ি পথ কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ ছিল।

আহতরা হলেন- ফেনীর সুশান্তি রানি দাশ, সীতাকুণ্ডের শিল্পী সেন, নবীনগরের চমকা দেব, চাঁদপুরের কমল কর্মকার, মহেশখালীর মৃদুল কান্তি দে ও তার স্ত্রী অপর্ণা কান্তি দে, মানিকগঞ্জের ননী গোপাল, পরশুরামের অর্ণব সাহা ও অমিত এবং কুমিল্লার বড়ুরার বাসিন্দা সাবিত্রি।

সীতাকুণ্ড মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবুল কান্তি শর্মা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রচণ্ড ভিড়ে ঠেলাঠেলিতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। গতরাতে প্রচণ্ড ভিড় ছিল। তাই সবাইকে নিষেধ করেছিলাম রাতে না উঠে, যাতে সকালে উঠে। কিন্তু পুণ্যার্থীরা না শুনে চলে গেছে।

“পুলিশ অনেক চেষ্টা করে ভিড় কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনে। গভীর রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত চন্দ্রনাথ থেকে নামার সময় ধাক্কাধাক্কিতে ৭-৮জন সামান্য আহত হয়েছেন। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে।”

বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে বলে জানান মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবুল কান্তি শর্মা।

প্রতি বছর শিব চতুর্দশীতে সমতল থেকে ১২০০ ফুট উপরে সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ ধামে শিবের মন্দিরে সমবেত হন লাখ লাখ সনাতন ধর্মাবলম্বী দেশি-বিদেশি পূণার্থী।

বিভিন্ন মন্দিরে পূজা-অর্চনা করলেও ভক্তদের কাছে মূল আকর্ষণ থাকে পাহাড় চূড়ার চন্দ্রনাথ মন্দিরে। ভক্তদের অনেকেই পূণ্যস্নানে নিজেকে পবিত্র করে নেন চূড়ায় ওঠার আগে।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ের এই তীর্থ স্থানে চন্দ্রনাথ মন্দির, স্বয়ম্ভুনাথ মন্দির, বীরুপাক্ষ মন্দির, ভোলানাথ গিরি সেবাশ্রম, দোল চত্বর, শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরসহ বিভিন্ন মঠ-মন্দির ঘুরে ঘুরে দেখেন দশনার্থীরা।

প্রতিবছর তিনদিন ধরে এই মেলা চললেও এবার তিথির কারণে মেলা হবে চারদিন। শনিবার সন্ধ্যায় চতুদর্শী তিথি শুরু হয়। এসময় থেকে শিবের উদ্দেশ্যে পূজা দেওয়া চলে। তাই শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে চন্দ্রনাথে উঠতে পূণার্থীদের ভিড় ছিল যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

প্রতি বছর এই মেলায় তিনদিনে প্রায় ১০ লাখ মানুষের সমাগম হয়ে থাকে। এবার মেলা শুরু হয় শুক্রবার থেকে।

শনিবার গভীর রাতে চন্দ্রনাথ মন্দিরের পাহাড় থেকে নামার সিঁড়ি ভেঙে পড়ে গিয়ে কেউ মৃত্যুর গুজব ছড়ায় ওই এলাকায়। এরপর কয়েক ঘণ্টা ওঠানামার সিঁড়িটি বন্ধ ছিল।

রোববার ভোরের দিকে ইকোপার্কের দিকে বিকল্প পথে ওঠানামা শুরু হলে উপর থেকে নিচের দিকে প্রচণ্ড গতিতে পূণ্যার্থীরা নামতে শুরু করেন। ভিড়ের কারণে পাহাড়ে যারা উঠছিলেন, তারা পড়ে যান চাপে। এতে ধাক্কাধাক্কিতে কয়েকজন আহত হন।

সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নূর উদ্দিন রাশেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আহতদের মধ্যে কারো হাত-পা ছড়ে গেছে, আবার কেউ চাপে ব্যথা পেয়েছেন। ১০ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।”

শুক্রবার থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গনে স্থাপিত স্বাস্থ্য ক্যাম্পে ২ হাজর ১০০ জন স্বাস্থ্য সেবা নিয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নূর উদ্দিন রাশেদ বলেন, “তীর্থ যাত্রীদের মধ্যে যারা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যায় পড়েন, যেমন- জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া বা পাহাড়ে ওঠার কারণে পায়ে ব্যথা, তারা সবাই ক্যাম্প থেকে চিকিৎসা নেন।”

বাংলাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় মেলাগুলোর মধ্যে একটি সীতাকুণ্ডের শিবের মেলা। প্রতিবছর শিব চতুর্দশী মেলা উপলক্ষে শিবরাত্রি ব্রত পালন ও শিব লিঙ্গে অর্ঘ্য নিবেদন পুণ্যার্থীরা জড়ো হন সেখানে।