Published : 15 Dec 2023, 09:47 PM
সকাল থেকে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের চশমা হিলমুখী সড়কে ছিল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মিছিল। সেখানে শায়িত প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কবরে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
শুক্রবার ছিল নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তিনবারের সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী।
দিনটি উপলক্ষে সকাল ৯টায় চশমা হিল জামে মসজিদে খতমে কোরআন, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এরপর সকাল ১০টায় কবর জিয়ারত ও পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন নগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
বিকেলে নগরীর স্টেশন রোডে হোটেল সৈকত অডিটোরিয়ামে হয় আলোচনা সভা। সেখানে এই সময়ের নেতারা স্মরণ করেন প্রয়াত নেতাকে।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “বঙ্গবন্ধুর অঙ্গুলি হেলনে ও গর্জনে বীর বাঙালি যেভাবে জেগে উঠেছিল এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপ দিয়েছিল, তেমনি চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষের অধিকার রক্ষায় এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী জননেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর আহ্বানে চট্টগ্রাম বার বার জেগে উঠেছে।
“একইভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি ‘রুখে দাঁড়াও’ বলার সাথে সাথে চট্টগ্রামবাসী রুখে দাঁড়িয়েছে। তাই মহিউদ্দিন চৌধুরীর কাছে চট্টগ্রামবাসী চির ঋণী। উনার শূন্যতা কখনো পূরণ না হলেও আমরা অপেক্ষায় আছি, একজন মহিউদ্দিন চৌধুরীর মত জননেতার জন্য।”
মাহতাব বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর আমার পিতা জহুর আহমদ চৌধুরীর অনন্য সৃষ্টি- এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। আমার বাবার কাছেই দীক্ষিত এই ত্যাগী জননেতার জন্য শুধু আমি নই, সমগ্র চট্টগ্রামবাসী গর্বিত।
“তিনি চট্টগ্রামের নেতা হলেও একজন জননেতা হিসেবে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত পরিচিতি পেয়েছিলেন। এটাও চট্টগ্রামবাসীর সৌভাগ্য।”
সভায় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, “২০১৩ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী পরিষদে মহিউদ্দিন ভাইকে সভাপতি ও আমাকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিলেন, মহিউদ্দিন ভাইয়ের মৃত্যু পর্যন্ত উনার সাথে আমি কাজ করেছি।
“মতভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও মহিউদ্দিন ভাই কখনো দলের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনার বাইরে যাননি, এই বিষয়টা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমরা দুজন মিলেমিশে একসাথে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগকে মজবুত ভিত্তি তৈরি করতে পেরেছি।”
চট্টগ্রাম নগরের রাজনীতিতে মহিউদ্দিনের বিপরীত বলয়ের নেতা হিসেবে পরিচিত নাছির বলেন, “এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী জনগণের সাথে দলের সেতুবন্ধ তৈরি করেছেন। তিনি জনগণের চাওয়া-পাওয়া ও মুখের ভাষা বুঝতেন এবং মানুষের শিরা-উপশিরার প্রবহমান রক্তের উত্তাপ অনুভব করতেন।
“এ কারণে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগকে চট্টলবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষার মঞ্চে পরিণত করে গেছেন। সর্বোপরি যে কোনো সময় মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় মহিউদ্দিন চৌধুরী ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ সাহসের ঠিকানা হয়ে উঠে।”
এর আগে সকালে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) কাউন্সিলররা চশমা হিলে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
মেয়র রেজাউল বলেন, “ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতেও জনতার ঢল প্রমাণ করে মহিউদ্দিন চৌধুরী আমৃত্যু জনগণকে নিয়ে, জনগণের স্বার্থে, গণমুখী রাজনীতি করেছেন। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সফল ছিলেন, রাজনীতিবিদ হিসেবে সফল ছিলেন, মেয়র হিসেবে সফল ছিলেন।
“রাজনীতি যেসব তরুণদের ধ্যান-জ্ঞান তাদের উচিৎ মহিউদ্দিন চৌধুরীর সংগ্রামী পথ অনুসরণ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লড়াইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হওয়া।”
বিকেলের আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন নগর কমিটির সহ সভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী, উপদেষ্টা একেএম বেলায়েত হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান ও হাসান মাহমুদ হাসনী, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য শফিকুল ইসলাম ফারুক, সৈয়দ হাসান মাহমুদ শমসের, ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী।
মহিউদ্দিন চৌধুরীর কবরে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান চট্টগ্রাম মহানগর ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ।
১৪ দল চট্টগ্রাম মহানগরের সমন্বয়ক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, “ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে মহিউদ্দিন চৌধুরী রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। রাজনীতির পাশাপাশি ধীরে ধীরে তিনি জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন।
“১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের লাশ দাফন, মুসলিম হলে উপকূলীয় এলাকার রোগীদের জন্য বিকল্প কলেরা হাসপাতাল তৈরি করে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহ করতে শুরু করেন তিনি। তখন থেকেই মহিউদ্দিন চৌধুরীর মানবিক আরেকটি গুণ প্রকাশিত হতে শুরু করে।”
মহিউদ্দিনের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী সুজন বলেন, “মেয়র হয়ে দিনেরর পর দিন কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নগরীর পরিচ্ছন্নতা, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অভাবনীয় পরিবর্তন নিয়ে আসতে সক্ষম হন তিনি। সরকারের সাহায্য ছাড়াই সিটি কর্পোরেশনকে আর্থিকভাবে সাবলম্বী করতে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করতে থাকেন।
“মহিউদ্দিন চৌধুরীর সুদক্ষ দিকনির্দেশনায় পরিচালিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সুনাম দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। মহিউদ্দিন চৌধুরীর নানাবিধ গুণের মধ্যে অন্যতম ছিল চট্টগ্রামবাসীর স্বার্থে কোনোদিন পিছপা হননি তিনি। চট্টগ্রামের স্বার্থবিরোধী কিছু হলে প্রথমেই গর্জে উঠতেন।”
জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জসিমুদ্দিন বাবুল, ন্যাপের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য গাজী আলমগীর, ওয়ার্কার্স পার্টি চট্টগ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান, ন্যাপ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মিটুল দাশগুপ্ত, গণআজাদী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মাওলানা নজরুল ইসলাম আশরাফী, সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা মো. খোরশেদ আলম, জাতীয় পার্টি (জেপি) চট্টগ্রাম মহানগর সাধারণ সম্পাদক ডা. বেলাল মৃধা, সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিন হাওলাদার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শাখা ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা মহিউদ্দিনের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।