চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে র্যাব।
শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ জানিয়েছেন।
তিনি শনিবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় আমরা চারজনকে আটক করেছি। তাদের যাচাই-বাছাই চলছে।”
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় প্রকাশ না করলেও লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইউসুফ বলেছেন, তাদের মধ্যে ঘটনার ‘হোতা’ রয়েছেন।
পরে র্যাবের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গ্রেপ্তার চারজনের নাম-পরিচয় জানানো হয়। তাদের মধ্যে দুজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র। অন্য দুজন হাটহাজারী কলেজের ছাত্র।
গ্রেপ্তার বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র দুজনের মধ্যে মোহাম্মদ আজিমকে (২৩) ঘটনার হোতা বলছে র্যাব। ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এই ছাত্রের বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়ার চর ভারত সেনে। তার বাবার নাম আমির হোসেন। এখন হাটহাজারীর ফতেহপুরে থাকেন তারা।
গ্রেপ্তার নুরুল আবছার বাবু (২২) বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তার বাবা
বেলায়েত হোসেন ফেনীর পরশুরামের বেড়াবাড়ির বাসিন্দা। এখন থাকেন হাটহাজারীর ফতেহপুরে।
গ্রেপ্তার অন্য দুজনের মধ্যে নূর হোসেন শাওন (২২) হাটহাজারীর ফতেহপুরের জাবেদ হোসেনের ছেলে। তিনি হাটহাজারী কলেজের সমাজ বিজ্ঞানের প্রথম বর্ষের ছাত্র।
গ্রেপ্তার মাসুদ রানা (২২) হাটহাজারী কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি ঝালকাঠির আশিয়ার গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে।
এদিকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় চিহ্নিতদের আটক করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলে শনিবার প্রথম প্রহরে তল্লাশি চালানো হয়।
পুলিশের সহযোগিতায় এই অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া।
এ আবাসিক হলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ও তার অনুসারীরা থাকেন।
অভিযান শেষে প্রক্টর সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা যে দুজনকে শনাক্ত করছি। এরমধ্যে একজন আমানত হলে থাকতে পারে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তাকে ধরতে শাহ আমানত হলে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করা হয়, কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।”
রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের হতাশার মোড় থেকে হলে ফেরার পথে এক ছাত্রী ও তার বন্ধুকে আটকে বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় নিয়ে যৌন নিপীড়ন করে পাঁচজন। ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টাও করা হয় বলে অভিযোগ।
ঘটনার পরদিন সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ওই ছাত্রী লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের বাধায় তা দিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রীর এক বন্ধু।
তবে রুবেলের দাবি, তিনি ওই ছাত্রীকে অভিযোগ দিতে বাধা নয়, বরং সহযোগিতা করেছেন।
ইতোমধ্যে রুবেলকে ‘শৃঙ্খলা পরিপন্থী’ কাজ করায় শোকজ করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সেই নোটিস পেয়ে বুধবার ঢাকায় যান রুবেল।
যৌন নিপীড়নের শিকার ওই ছাত্রী মঙ্গলবার থানায় মামলা করেন, তাতে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। সেদিন তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছেও লিখিত অভিযোগ দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ও তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
যৌন নিপীড়নের এই ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নানা কর্মসূচি পালন করছে।