এদিন পাঁচটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
Published : 24 Sep 2024, 02:26 PM
মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটির ভাংচুরের মামলায় চট্টগ্রামের রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীকে দুই দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার সকালে শুনানি শেষে এ আদেশ দেন চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নুরুল হারুন।
এদিন ফজলে করিমকে আদালতে হাজির করে পুলিশ পাঁচটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন। এসব মামলার মধ্যে তিনটি হত্যা মামলা, বাকি দুটি ভাংচুরের।
শুরুতে সকাল ৮টায় ফজলে করিমকে নেওয়া হয় মুখ্য মহানগর হাকিম সরকার হাসান শাহরিয়ারের আদালতে। সেখানে পাঁচলাইশ ও চকবাজার থানার দুটি হত্যা মামরায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) এএএম হুমায়ুন কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালত গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করার পাশাপাশি আসামির আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে কারাবিধি অনুসারে আসামির ডিভিশন প্রাপ্তি ও চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও দিয়েছেন।”
তারপর ফজলে করিমকে নেওয়া হয় মহানগর হাকিম আবু বকর সিদ্দিকের আদালতে।
পুলিশ কর্মকর্তা এএএম হুমায়ুন কবীর জানান, সেখানে চান্দগাঁও থানার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন বিচারক।
এই তিন মামলার মধ্যে পাঁচলাইশ ও চকবাজার থানার মামলা দুটিতে ২৫ সেপ্টেম্বর এবং চান্দগাঁও থানার মামলাটিতে ২৬ সেপ্টেম্বর জামিন আবেদনের শুনানির দিন ঠিক করা হয়েছে।
সবশেষে সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে করিমকে নেওয়া হয় চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নুরুল হারুনের আদালতে। সেখানে মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটির করা দুটি ভাংচুরের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়।
চট্টগ্রাম জেলা আদালতের পুলিশ পরিদর্শক জাকির হোসাইন মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মুনিরীয়া যুব তবলীগের করা দুটি ভাংচুরের মামলায় আবেদনের প্রেক্ষিতে আসামিকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
“এর মধ্যে একটি মামলায় সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করা হলে; আদালত শুনানি শেষে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।”
রিমান্ডে নেওয়া ভাংচুরের মামলাটি হয় গত ২৩ অগাস্ট। এতে ফজলে করিম চৌধুরী, তার ছেলে ফারাজ করিম চৌধুরীসহ ৬৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মুনিরীয়া যুব তবলীগের দলইনগর-নোয়াজিশপুর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ আলাউদ্দিন।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল ফজলে করিমের নির্দেশে আসামিরা আধ্যাত্মিক ও তরীকত্বভিত্তিক সংগঠন মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটির দলইনগর-নোয়াজিশপুর শাখার পাকা একতলা কার্যালয় ভবন গুড়িয়ে দেয় এবং কমিটির সদস্যদের হত্যার চেষ্টা করা হয়।
সেসময় কার্যালয়ে থাকা নগদ ৬ লাখ টাকাসহ সব সরঞ্জাম লুটের অভিযোগও করা হয় মামলাটিতে।
ওই মামলার কার্যক্রম শেষে মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে করিমকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।
মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি রাউজানের কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফ কেন্দ্রিক একটি অরাজনৈতিক তরিকত্বভিত্তিক সংগঠন। সংসদ সদস্য থাকাকালে মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটির সাথে ফজলে করিমের বিরোধ ছিল চরমে।
গত ১২ সেপ্টেম্বর সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত এলাকা থেকে ফজলে করিম চৌধুরীকে আটকের কথা জানায় বিজিবি। সেদিন বিজিবি জানায় ‘অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার চেষ্টার’ সময় তাকে আটক করা হয়।
আটকের পর ফজলে করিমকে আখাউড়া থানায় হস্তান্তর করে বিজিবি। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে। সবশেষ ১৯ সেপ্টেম্বর হেলিকপ্টার যোগে তাকে সেখান থেকে চট্টগ্রামে আনা হয়।
হত্যা, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, হত্যাচেষ্টা, অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানো, অস্ত্রের মুখে জমি লিখিয়ে নেয়া, ভাংচুর, দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগে এখন পর্যন্ত ফজলে করিমের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় ১০টি মামলা হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ পেয়েছে।