শরীফ চৌহান বলেন, “আর একটিও পাহাড় কাটা হলে আমরা এবার থেকে সেই পাহাড়ের সামনে গিয়ে প্রতিবাদ করব। আমাদেরকে কেটে তারপর পাহাড় কাটতে হবে।”
Published : 11 Jun 2024, 09:33 PM
বন্দর নগরীর পাহাড় রক্ষার বিষয়ে রাজনীতিবিদরা নিরব এবং প্রশাসন নির্লিপ্ত, তাই পাহাড় রক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবি জানানো হয়েছে এক নাগরিক সমাবেশ থেকে।
চট্টগ্রাম ও তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড় ধসে নিহতদের স্মরণে ১১ জুনকে জাতীয় পাহাড় রক্ষা দিবস ঘোষণার দাবিতে এই নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
মঙ্গলবার বিকালে নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে এই সমাবেশ শেষে পাহাড় ধসে নিহতদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়।
পিপল’স ভয়েস, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম চট্টগ্রাম অঞ্চল এবং পিএসডিআই কনসালটেন্সির আয়োজনে নাগরিক সমাবেশ ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়।
সমাবেশে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, “পাহাড় কেটে ধ্বংস করে আমাদের অধিকার চরমভাবে হরণ করা হচ্ছে। পাহাড়কে রক্ষা করতে কঠোর কর্মসূচি দিতে হবে। চট্টগ্রামের সব রাজনীতিবিদ, প্রশাসন ও আন্দোলনকারীরা মিলে একটা বড় সমাবেশ করতে চাই। আমরা শেষ আল্টিমেটাম দিব সেই সমাবেশ থেকে। এরপর আর আমরা ঘরে বসে থাকব না। পাহাড় রক্ষায় আন্দোলনে নেমে যাব।”
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী বলেন, “পাহাড় কাটার বিষয়ে নির্লিপ্ত প্রশাসন ও নিরব এখানকার রাজনীতিবিদরা। কিন্তু অতি সক্রিয় পাহাড়খেকোরা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনাকেই এটা দেখতে হবে৷ এখানে রাজনীতিবিদ ও প্রশাসন নিরব থাকে।”
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে পরিবেশবাদী সংগঠন পিপল’স ভয়েস এর সভাপতি শরীফ চৌহান বলেন, “এই প্রশাসন পাহাড়খেকোদের বশ্যতা স্বীকার করেছে। আমরা বলতে চাই, আর একটিও পাহাড় কাটা হলে আমরা এবার থেকে সেই পাহাড়ের সামনে গিয়ে প্রতিবাদ করব। আমাদেরকে কেটে তারপর পাহাড় কাটতে হবে৷ এভাবে প্রতিবাদ না করলে পাহাড় বাঁচবে না।”
উদীচী চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জসিম চৌধুরী সবুজ বলেন, “প্রতি বছর বলছি পাহাড় কাটা বন্ধ করা হোক, কিন্তু হচ্ছে না। আরো বাড়ছে। আমরা এখনো একটি পাহাড়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। নাম চেরাগী পাহাড়, কিন্তু পাহাড়ের অস্তিত্ব নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে কিন্তু তাদের কাজ কী? ২০০৭ সালের মত ঘটনা যেন আর না ঘটে।”
আইইবি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, “২০০৭ থেকে প্রতি বছর কোথাও না কোথাও পাহাড় ধসে মানুষ মারা গেছে। চট্টগ্রাম ও তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড় ধস নিয়মিত ঘটনা। প্রতি বছর আমরা আর্তনাদ করে যাই। যারা এই পাহাড় কাটে তাদের বিচারের আওতায় আনার কেউ নেই৷
“রাষ্ট্র তো আজ অনেক শক্তিশালী কিন্তু এ অপকর্ম যারা করে তাদের কি কেউ বিচারের আওতায় আনতে পারে না। এসব পাহাড়ের মালিকানায় বিভিন্ন সরকারি সংস্থা। এসব পাহাড় দেখতে সেসব প্রতিষ্ঠানে আমাদের ট্যাক্সের টাকায় কর্মচারী আছে। অথচ তারা নিস্ক্রিয়। সব পাহাড় দখলকারী চিহ্নিত হলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই।”
কবি-সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল বলেন, “আমরা যেসব দাবি জানাচ্ছি, সেসব দাবি তো সবাই জানে তবু বাস্তবায়ন হয় না কেন? পাহাড় ধসে যে লোকগুলো মারা যাচ্ছে সেটা হলো হত্যাকাণ্ড। কারণ কেউ এসব পাহাড় দখলের জন্য কেটেছে। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হচ্ছে না কেন?
“কেননা যারা এসব কাজ করে তারা ক্ষমতাবানদের সাথে জড়িত। তাই আমাদের ঘাতকদের হাত থেকে বাঁচতে হলে আরো সোচ্চার হতে হবে।”
নাট্যজন প্রদীপ দেওয়ানজি বলেন, “বিশ্বে যেখানেই প্রকৃতি ধ্বংস করা হয়েছে সেখানে বিপর্যয় নেমে এসেছে। আমাদের পাহাড় ক্রমান্বয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। আমাদের দুর্ভাগ্য, যারা এসব ঠেকানোর কথা তারাই নষ্ট করছে।”
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক অসীম বিকাশ দাশ, প্রমার কঙ্কন দাশ, আদিবাসী ফোরামের লামিউ মারমা ও বিএনপিএসের পক্ষে এরশাদুল করিম।
উপস্থিত ছিলেন নাট্যজন মোস্তফা কামাল যাত্রা, পটিয়া উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদা বেগম শিরু, সাংস্কৃতিক সংগঠক সুনীল ধর, অধ্যাপক শেখ বিবি কাউসার ও পিপলস ভয়েসের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মুহাম্মদ আতিকুর রহমান।