চট্টগ্রামের প্রধান ঈদ জামাত হয় জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে।
Published : 17 Jun 2024, 01:31 PM
চট্টগ্রামের ঈদের নামাজ থেকে দেশের শান্তি, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনার পাশাপাশি ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য দোয়া করা হয়েছে।
সোমবার সকাল সাড়ে ৭টায় চট্টগ্রামের প্রধান ঈদ জামাত হয় জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে। ইমামতি করেন মসজিদের খতিব সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দীন আল কাদেরী।
এর আগে সকাল থেকে নগরীর নানা প্রান্ত থেকে জায়নামাজ হাতে সব বয়সী মুসলমানরা মসজিদ প্রা্ঙ্গণে জড়ো হতে থাকেন।
এখানে নামাজে সামিল হন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, জাতীয় পার্টির নেতা সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, সোলায়মান আলম শেঠসহ অনেক রাজনৈতিক নেতা।
নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে দেশ ও মুসলিম উম্মাহর মঙ্গল কামনায় মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে ফিলিস্তিনের জনগণের জন্যও আল্লাহর কাছে দোয়া করা হয়।
নামাজ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী নওফেল বলেন, “সবাইকে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন সবার কোরবানি কবুল করুন। সকলের মনের পশুও যাতে আমরা কোরবানি দিতে পারি, সেই প্রার্থনা আজ আমরা আল্লাহ পাকের কাছে আমরা করছি।
“পাশাপাশি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যিনি আমাদের স্থিতিশীলতা নিরাপত্তা এবং শান্তির প্রতীক, তার জন্য আমরা দোয়া করেছি। আল্লাহ তাকে সুস্থ রাখুন, নিরাপদে রাখুন। বাংলাদেশকে নিরাপদে রাখুক আল্লাহ। আর আজকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক যে চ্যালেঞ্জ, সেগুলো যাতে আমরা মোকাবেলা করে সাধারণ মানুষের যে অধিকারের কথা ইশতেহারে বলেছি, সেগুলো যেন বাস্তবায়ন করতে পারি, সেজন্য দোয়া করেছি।”
বিএনপি নেতা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, “সবার শান্তি হোক। দুর্ভিক্ষমুক্ত বাংলাদেশ হোক। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ চাই। দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে সরকার ও নেতাদের দুর্নীতি মুক্ত হতে হবে।”
জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে ঈদের দ্বিতীয় জামাত হয় সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে। তাতে ইমামতি করেন জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মোহাম্মদ আহমদুল হক।
এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় নগরীর নয়টি মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদ জামাত হয়।
মসজিদগুলো হলো- লালদিঘী সিটি করপোরেশন শাহী জামে মসজিদ, হযরত শেখ ফরিদ (র.) চশমা ঈদগাহ মসজিদ, সুগন্ধা আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, চকবাজার সিটি করপোরেশন জামে মসজিদ, জহুর হকার্স মার্কেট জামে মসজিদ, দক্ষিণ খুলশী (ভিআইপি) আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, আরেফীন নগর কেন্দ্রীয় কবরস্থান জামে মসজিদ, সাগরিকা গরুবাজার জামে মসজিদ এবং মা আয়েশা সিদ্দিকী চসিক জামে মসজিদ (সাগরিকা জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম সংলগ্ন)।
পাশপাশি নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে একটি করে প্রধান ঈদ জামাত স্ব স্ব মসজিদ ও ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার সকালে নগরীর বহদ্দারহাট শাহী জামে মসজিদে ঈদের নামাজ পড়েন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আত্মত্যাগের মাধ্যমে ভেদাভেদহীন সমাজ গড়ার যে শিক্ষা ঈদ আমাদের দেয় তা সমাজে বাস্তবায়ন করতে হবে। কোরাবানির আত্মত্যাগের মাধ্যমে দরিদ্র শ্রেণির কষ্ট উপলব্ধি করার যে সুযোগ আমরা পেয়েছি, সে শিক্ষাকে ধারণ করে বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়তে লড়তে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে।
“ঈদ শুধুমাত্র ধর্মীয় উৎসব নয় বরং এটি সকলের জন্য ঐক্য ও সৌহার্দ্যের বার্তা। এই দিনে আমাদের সকলের উচিত ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে সকলের সাথে মিলেমিশে আনন্দ উদযাপন করা।”
এই পবিত্র দিনে সকলের প্রতি সহানুভূতি ও শ্রদ্ধাশীল আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে মেয়র রেজাউল বলেন, “সাম্প্রদায়িক শক্তিকে নির্মূল করে আগামীর বাংলাদেশ হবে অসাম্প্রদায়িক, সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদী এবং উন্নত বাংলাদেশ। এই হোক আমাদের শপথ।”
অন্যদিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় ঈদ জামাত কমিটির ব্যবস্থাপনায় সকাল ৮টায় ঈদের জামাত হয় এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম মাঠে। সেখানে ইমামতি করেন বায়তুশ শরফ আদর্শ সিনিয়র কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সাইয়েদ আবু নোমান।
এখানেও ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মুসলমানদের মুক্তি কামনায় দোয়া করা হয়।
কেন্দ্রীয় ঈদ জামাত কমিটি প্রধান উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ ড. আজিজ আহমেদ ভূঞা, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুল মালেক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাকিব হাসানসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এ জামাতে ঈদের নামাজ পড়েন।
এদিকে ঈদের নামাজ শেষে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে পশু কোরবানি শুরু করে নগরবাসী।
নগরীর সব পাড়া মহল্লায় পশু কোরবানি শুরুর পর পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমও শুরু করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।