জ্যেষ্ঠ নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং এর পরপরই সভা শেষ হয়।
Published : 20 Jun 2024, 09:59 PM
সদস্য সংগ্রহ, তৃণমূলের সম্মেলন এবং ত্যাগী নেতাকর্মীদের দলে ‘ঠাঁই না হওয়ার’ বিষয় নিয়ে বধির্ত সভায় বিতণ্ডায় জড়ালেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার বিকালে নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত নগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় এ ঘটনা ঘটে।
তৃণমূলের বিভিন্ন ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন নিয়ে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে বিভেদ দীর্ঘদিনের। এর আগেও একাধিকবার নগর কমিটির সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পরও তা হয়নি।
বিরোধের বিষয় নিয়ে গত বছর দুই পক্ষ দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেছিল। সম্প্রতি আবার নগর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হয়েছে।
বৃহস্পতিবারের সভায় বিতণ্ডার বিষয়ে জানতে নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে সভায় উপস্থিত দুজন জ্যেষ্ঠ নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তাছাড়া বধির্ত সভার বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও নেতাদের যে বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে, সেখানেও মতভেদের ইঙ্গিত রয়েছে।
সভায় উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহ-সভাপতি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী সভায় বলেন, তৃণমূলের সম্মেলনে বিচক্ষণ ও পরীক্ষিত নেতারা সুযোগ পায়নি।
“আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকার সময় যারা রাজপথে ছিল সেসব ছাত্রনেতাদের সংগঠনে আনতে হবে। সদস্য সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২০ হাজার। চট্টগ্রামের জনসংখ্যা ৭০ লাখ। এই সংখ্যা বাড়ানো যাবে না কেন, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। পাশাপাশি ইউনিট ও ওয়ার্ডের সম্মেলনের ক্ষেত্রে কয়েকটির প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।”
নগর আওয়ামী লীগের ওই নেতা বলেন, “সভায় নাছির ভাই মেয়রকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আমি নেত্রীর নির্দেশনা অনুসারে করছি। আপনি তো এতদিন সভায়ও আসেননি। সংগঠন পরিচালনার কৌশল নিয়ে একেক জনের একেক মত থাকবে। এটাই রাজনীতির বৈশিষ্ট্য।”
নগর আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, “জুলাই মাসের মধ্যে ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানার সম্মেলন শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে সাধারণ সভায়। মেয়র রেজাউল বলেছেন, ৭০ লাখ মানুষের শহরের একটি ওয়ার্ডে যদি দেড়শজন সদস্য হয়, সেটা গ্রহণযোগ্য নয়।
“চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের সদস্য হতে হবে ১০ লাখ। কোনো কোনো ইউনিটের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি দল করেন না। এটা কিভাবে হল? সাবেক ছাত্রলীগ-যুবলীগ এবং ত্যাগী নেতাকর্মীরা সদস্য হয়নি কেন?”
সম্পাদকমণ্ডলীর ওই সদস্য বলেন, “পরে বক্তব্য দিতে উঠে সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির মেয়রের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনার ওয়ার্ডের কী অবস্থা? আপনি কতদিন পর আজ সভায় এসেছেন?”
পরে জ্যেষ্ঠ নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং এর পরপরই সভা শেষ হয় বলে জানান তিনি।
পরে সভার বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সভায় নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেছেন, “সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এই সত্য নিশ্চিতভাবে উপলব্ধি করেছি যে, আওয়ামী লীগ পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের সংগঠন। সাংগঠনিক কাঠামো সাজাতে গিয়ে পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের পদ-পদবীতে বসানোর প্রচেষ্টা ছিল এবং আগামীতেও থাকবে।”
সভায় আ জ ম নাছির বলেন, “গত ২০ মে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুব উল আলম হানিফ যে নির্দেশনা দিয়েছেন, সে অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে যেসকল ইউনিট ওয়ার্ড ও থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন সমাপ্ত হয়নি তা সম্পন্ন করা হবে।
“নগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের সাংগঠনিক কাঠামোগুলো সম্মেলন করে কমিটি গঠনের মাধ্যমে অক্টোবর মাসে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্ধারিত তারিখ ও সময় অনুযায়ী মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন সম্পন্ন হবে।”
নাছির বলেন, “বিভিন্ন অজুহাত উপলক্ষ্য করে যারা সংগঠনের মধ্যে বিভেদ, বিভাজন ও অনৈক্য সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে তারা কখনো দুর্দিনে আওয়ামী লীগের সাথে ছিলেন না। এখনো যারা বিভিন্ন স্তরে নেতৃত্বে আছেন তাদের মধ্যে প্রায় প্রত্যেকে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের সাথী। যারা নতুন নেতৃত্বে এসেছে তাদেরকে যাচাই বাছাই করে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নেতৃত্বের আসনে বসানো হয়েছে। এক্ষেত্রে নতুন করে কোনো প্রশ্ন বা বিতর্ক সৃষ্টির অবকাশ নেই।
“চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ সব সময় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশনা ও প্রস্তাবনা অনুযায়ী সাংগঠনিক কার্যক্রম চলমান রেখেছে এক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।”
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “সৎ, সাহসী পরীক্ষিত ও ত্যাগী যেসকল আওয়ামী লীগ কর্মী যাদের, সমাজে গ্রহণযোগ্যতা আছে, তাদেরকে তৃণমূল স্তরে নেতৃত্বে আনতে হবে। কেননা তারাই সংগঠনের মূল প্রাণশক্তি। এই প্রাণশক্তির যথার্থ মূল্যায়নের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ভিত্তি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।”
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ বলেন, “দলের ভেতরে নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতা থাকবে। এটাই একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। তবে নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিহিংসামূলক কোনো আচরণ দলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী।”
২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বিকালে লালদীঘি ময়দান থেকে শোভাযাত্রা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয় সভায়।
প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, উপদেষ্টা একেএম বেলায়েত হোসেন, সফর আলী ও শেখ মাহমুদ ইছহাক, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মসিউর রহমান চৌধুরী, আহমেদুর রহমান সিদ্দিকী, হাজী মো. হোসেন, জোবাইরা নার্গিস খান প্রমুখ।