ঢাকার বাড্ডা থানার এ মামলায় আসামির তালিকায় ২১ নম্বরে রয়েছে জসিম উদ্দিনের নাম।
Published : 05 Dec 2024, 12:15 AM
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর বাড্ডার এক হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার চন্দনাইশের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন আহমদকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার উপপরিদর্শক মো. রাসেল পারভেজ বুধবার জসিমকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম শরীফুর রহমান আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
তদন্ত কর্মকর্তা তার আবেদনে বলেন, তদন্তকালে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ মামলার এজাহারভুক্ত ২১ নম্বর আসামি জসিম উদ্দিন আহমেদকে বুধবার ঢাকার হোটেল লো-মেরিডিয়ানের পাশের রাস্তা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
“মামলাটি তদন্তাধীন এবং আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত অব্যাহত আছে। আসামির কাছ থেকে পাওয়া তথ্য ও নাম-ঠিকানা যাচাইয়ের কাজ চলছে। এ অবস্থায় মামলার সুষ্ঠ তদন্তসহ ন্যায় বিচারের স্বার্থে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে জেল হাজতে আটক রাখা একান্ত প্রয়োজন।”
আদালতে বাড্ডা থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই মোহাম্মদ আল আমিন জানান, জসিম উদ্দিনের পক্ষে তার আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে জামিন শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করে দেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, মামলার বাদী মো. দুর্জয় আহম্মেদ (২৮) গত ২০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মিছিলে অংশগ্রহণ করে মধ্যবাড্ডা ইউলুপ এর নিচে পোস্ট অফিস গলি মাথায় অবস্থান করছিলেন। সে সময় আওয়ামী লীগের ‘শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশনায়’ তাদের অনুসারীরা এলোপাতাড়ি গুলি করলে বাদীর দুই চোখ অন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া মাথায় পিছনে ও গুরুতর আঘাত পান।
ওই সময়ে আসামিরা বাদীকে মৃত ভেবে রাস্তায় ফেলে চলে যায়। পরে পথচারীরা তাকে এ এম জেড হাসপাতালে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নিতে বলেন। পরে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ওই ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৯০ জনের নামে মামলাটি দায়ের করেন দুর্জয় আহম্মেদ। সেই এজাহারে জসিম উদ্দিন আহমেদকে ২১ নম্বর আসামি করা হয়।
এর আগে ১০ জুলাই পদ্মা ব্যাংকের ঋণখেলাপির এক মামলায় জসিম উদ্দিন ও তার স্ত্রী তানজিনা সুলতানাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয় চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালত।
তারও আগে গত ৩০ এপ্রিল ঋণখেলাপির মামলায় জসিম ও তার স্ত্রীকে পাঁচ মাসের কারাদণ্ড দিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। এই আদেশের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ আনতে জসিম হাই কোর্টে যান। ঋণের ১৪ কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন জানিয়ে সেখানে তিনি জাল পে-অর্ডারের ফটোকপি দেন। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জামিন স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর তার জামিন বাতিল করে হাই কোর্ট।
ওই মামলার অভিযোগে বলা হয়, জেসিকা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার জসিম উদ্দিন ২০১৬ সালে পদ্মা ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে ৬০ কোটি টাকা ঋণ নেন। এক বছরের মধ্যে তা পরিশোধ করার চুক্তি থাকলেও আট বছরেও তিনি তা শোধ করেননি।
২০২২ সালে সম্পূর্ণ সুদ মওকুফ-সুবিধা নিয়ে তিনি ওই ঋণ পুনঃ তফসিল করেন। কিন্তু তারপরও পরিশোধ না করায় ওই ঋণ সুদাসলে প্রায় ১১৫ কোটি টাকায় দাঁড়ায়।
ঋণের বিপরীতে চট্টগ্রামের লালদীঘি এলাকার ১৬ দশমিক ৫৯ শতক জমির ওপর নির্মিত সাততলা মহল মার্কেট তিনি ব্যাংকের কাছে জামানত রেখেছেন। ঋণ শোধ না করায় ২০২০ সালের ১৮ জুলাই জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে পদ্মা ব্যাংক। ওই মামলায় ২৯ জানুয়ারি জসিমকে সুদসহ ঋণ পরিশোধের নির্দেশ দেয় আদালত। তারপরও ঋণ শোধ না করায় তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।