“দেশের বিভিন্ন জায়গায় মন্দির, ঘরবাড়িতে হামলা বন্ধ করতে হবে। আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে,” বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
Published : 01 Dec 2024, 12:11 AM
অবিলম্বে জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর নিঃশর্ত মুক্তি, তার বিরুদ্ধে করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা প্রত্যাহার এবং সনাতনীদের আট দফা দাবি বাস্তবায়নে সংলাপে বসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট।
শনিবার রাতে সংবাদমাধ্যমে জোটের পক্ষে ‘সন্ত মন্ডলের’ পাঠানো বিবৃতিতে এসব দাবি জানানো হয়। জোটের অন্যতম সংগঠক স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী বিবৃতির বিষয়টি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন।
একই সঙ্গে বিবৃতিতে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের ভিডিও ফুটেজ দেখে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে।
এতে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে সনাতনী সম্প্রদায়ের উপর হামলা, মন্দির ভাঙচুর, পথে পথে মোবাইল চেক করে গ্রেপ্তার এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে সাধারণ হিন্দুদের হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
সনাতনীদের হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “দেশের বিভিন্ন জায়গায় মন্দির, ঘরবাড়িতে হামলা বন্ধ করতে হবে। আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।”
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসার পথে গত ২৫ নভেম্বর বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় দাশকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর দেশজুড়ে বিক্ষোভের মধ্যে পরদিন তাকে চট্টগ্রাম আদালতে তোলা হয়। আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠায়।
এর প্রতিবাদে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ দেখান সনাতনী লোকজন। সাড়ে তিন ঘণ্টা পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে তাকে কারাগারে নিয়ে যায়। পরে আদালত থেকে নামার পথে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনজীবীসহ অন্যদের সংঘর্ষ বাঁধে। আদালত চত্বর থেকে কিছুটা দূরে এসমসয় একজন আলিফ নামে একজন আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে বিক্ষোভ, পাল্টা বিক্ষোভ এবং আলোচনা-সমালোচনায় উত্তেজনা ছড়ায়। তবে এরপর বড় ধরনের অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এমন প্রেক্ষাপটে শনিবার সনাতনী জোটের এ বিবৃতি এল। এতে সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে বলা হয়, “আপনারা দীর্ঘ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হন। হিন্দু নির্যাতন বন্ধ না হলে, আমাদেরকে কঠোর থেকে কঠোর আন্দোলনে যেতে হবে। আমরা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, জাতিসংঘসহ সকল সংস্থাকে অনুরোধ করব, আপনারা বিষয়টি তদন্ত করুন।”
ইসকন নিয়ে দেশি-বিদেশি ইন্ধন থাকতে পারে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
এতে চট্টগ্রামে আদালত চত্বরে ২৬ নভেম্বরের ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে বিনা উসকানিতে সনাতনীদের ওপর আক্রমণের জন্য পুলিশকে দায়ী করা হয়। একই সঙ্গে ‘একদল সন্ত্রাসীও’ সনাতনীদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ করা হয়।
“ঘটনার পর, আদালত ভবনের বিপরীতে সেবক কলোনিতে ৭টি ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৭০টি ঘরবাড়ি পুরোপুরি লুটপাট করা হয়েছে। নারীদের শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। শীতলা মন্দির ও রাধাকৃষ্ণ মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে। সেখানে থাকা বিভিন্ন মূল্যবান জিনিস লুটপাট করা হয়েছে। ভয়ে আতংকে সেবক কলোনির ৪৫০ পরিবার আজও ঘরছাড়া। পাথরঘাটা লোকনাথ মন্দিরে হামলা চালানো হয়েছে। হাজারিগলি জয়মাতা কালী মন্দিরের বাইরে ভাংচুর করা হয়েছে।”
ঘটনার দিন থেকে এখনো পর্যন্ত রাস্তায় সনাতনীদেরকে দেখলে হয়রানি করা হচ্ছে অভিযোগ করে বিবৃতিতে বলা হয়, “সনাতনী নারীদের সাথে অশ্লীল ব্যবহার করা হচ্ছে। হাতে লাল সুতা দেখলে তাদেরকে মারধর করা হচ্ছে। লাল কাপড়ের সাধুসন্তদের বিনা কারণে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। পটিয়ার ছনহরা বাসুদেব মুকুন্দ ধামে ভাঙচুর করা হয়েছে।“
২৬ নভেম্বর আদালত এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের করা তিনটি মামলার বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা দেখেছি তিনটি মামলায় অনেক নিরাপরাধ হিন্দুদের আসামী করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামী দিয়ে সনাতনীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এছাড়া মামলায় সাধারণ আইনজীবীদেরকে আসামী করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত খারাপ ইতিহাস সৃষ্টি করছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।“
চট্টগ্রামে আদালত চত্বরে সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী নিহত
বিক্ষোভকারীদের হটাতে সাউন্ড গ্রেনেড, চিন্ময় দাশ কারাগারে
বর্তমান পরিস্থিতির জন্য অন্তর্বর্তী সরকার দায় এড়াতে পারে না, দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, “সরকার পতনের পর হতে আজ অব্দি হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন, নিপীড়ন, বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ, মন্দির ভাঙচুর, জমি দখল করে চলেছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সনাতনী সম্প্রদায়ের ৮ দফা দাবি নিয়ে বাংলাদেশ অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের কাছে পেশ করেছিলাম।
“কিন্তু এই ৮ দফা দাবি আমরা এখনো সুরাহা পাইনি। তার মধ্যে একটা দিন দুর্গা পূজার ছুটি বাড়িয়েছিলেন। আর কোনো দাবির বিষয়ে তারা কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। এমনকি আন্দোলনকারীদের একবারের জন্য ডাকেওনি। যার ফলে সনাতনীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছিল।”