মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ, বই ও ফেইসবুকে যুদ্ধকালীন বিভিন্ন ‘অসত্য তথ্য’ তুলে ধরেছেন সিরু বাঙালি।
Published : 26 Jun 2024, 09:22 PM
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বই ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক মুক্তিযোদ্ধা ‘অসত্য তথ্য’ প্রচার করছেন বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রামের প্রায় ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা।
মুক্তিযুদ্ধকালীন পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম, যিনি সিরু বাঙালি নামে পরিচিত তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছেন তারা। এ নিয়ে বুধবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন মুক্তিযোদ্ধারা।
তাদের অভিযোগ, ‘মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম শহর’ ও সিরু বাঙালি রচিত ‘বাঙাল কেন যুদ্ধে গেল’ গ্রন্থে যুদ্ধকালীন বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করেছেন সিরু বাঙালি, যেগুলো ‘অসত্য’। বইয়ের পাশাপাশি ফেইসবুকেও তিনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ‘অসত্য তথ্য’ প্রচার করছেন।
তবে সিরু বাঙালির দাবি, যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তার ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী চট্টগ্রামের ‘একটি মহলকে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছে’। এরপর থেকেই তার বিরুদ্ধে ফেইসবুকে ‘অপপ্রচার’ এবং এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মামলা করবেন বলেও জানান তিনি।
যুদ্ধ ও মানবতাবিরোধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ওরফে সাকা চৌধুরীর মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছিলেন সিরু বাঙালি।
সালাউদ্দিন কাদেরের ছেলের কাছ থেকে ‘আর্থিক সুবিধা নিয়ে’ তাকে ‘মিথ্যাবাদী প্রমাণ করার চেষ্টা চলছে’ বলে তিন দিন আগে ফেইসবুকে পোস্ট করেন সিরু।
সংবাদ সম্মেলনে আসা মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, সাকা চৌধুরীর সন্তানকে জড়িয়ে যে অভিযোগ করছেন সিরু বাঙালি, তা তাকেই প্রমাণ করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে তারাও মামলা করবেন।
সিরু বাঙালির বিরুদ্ধে অভিযোগ
সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধকালে চট্টগ্রাম শহর কমান্ডের গ্রুপ কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজুর রহমান বলেন, ”সিরু বাঙালি তথা সিরু ভাই ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, এ নিয়ে আমাদের কোনো প্রশ্ন নেই।
“কিন্তু তিনি বিভিন্ন অভিযান সম্পর্কে যা লিখছেন, তা সত্য নয়। মুক্তিযুদ্ধ কোনো মাসুদ রানা সিরিজ বা জেমস বন্ডের গল্প নয়। চট্টগ্রাম শহরে কোনো অপারেশন উনার ছিল না, এটা শতভাগ নিশ্চিত।”
তিনি বলেন, “আমি ৪০০ অপারেশনের তথ্য সংগ্রহ করে প্রকাশ করেছি। সেখানেও কোনো তথ্য নেই। উনি ভালো লেখক হতে পারেন, কিন্তু নিজের নামে এভাবে লেখা ঠিক নয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় উনার গ্রুপ কমান্ডার ছিলেন গৌরাঙ্গ মিত্র এবং পরে কিছুদিন আহমদ নবী। গ্রুপ কমান্ডার না হয়েও নিজেকে (সিরু বাঙালি) কমান্ডার দাবি করা উচিত নয়।”
বলাকা প্রকাশনের স্বত্ত্বাধিকারী জামাল উদ্দিন বলেন, “আমার প্রকাশনা থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম শহর’ প্রকাশের আগে পাণ্ডুলিপিটি সিরু বাঙালিকে পড়তে দিই। সেটি অসম্পূর্ণ থাকলে তাকে ঠিক করতে বলেছিলাম। ২০১৩ সালে বইটি প্রকাশিত হয়।
“আমার বিশ্বাস ভঙ্গ করে তিনি ওই গ্রন্থে মিথ্যাচার ও কল্পকাহিনী যুক্ত করেছেন। সেজন্য আমি অনুতপ্ত ও ক্ষুব্ধ। তার কাছে কৈফিয়ত দাবি করলে তিনি এখন পর্যন্ত মুখোমুখি হননি।”
আট পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্যে সিরু বাঙালি রচিত ‘বাঙাল কেন যুদ্ধে গেল’ গ্রন্থে তুলে ধরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জামাল উদ্দিন।
পাল্টা অভিযোগ
মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগের বিষয়ে ঢাকায় অবস্থানরত সিরু বাঙালি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে বইয়ের কথা তারা বলছেন, সেটা ধারাবাহিকভাবে ১৯৯৩-৯৫ সালে দৈনিক পূর্বকোণে ছাপা হয়েছে। তখন ওই পাতার দায়িত্ব ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিরুদ্দিন চৌধুরী। একই পাতায় মাহফুজুর রহমানের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখাও ছাপা হয়েছে।
“বইটি প্রকাশিত হয়েছে বহু বছর আগে। বই বড় কথা নয়। যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলাকে প্রশ্নবিদ্ধ ও মিথ্যা মামলা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য চট্টগ্রামের একটা বিশেষ মহলকে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছে সাকার ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী।”
সিরুর অভিযোগ, “১৯৭১ সালের ১৪ জুন আমি সাকা চৌধুরীর গাড়িতে গ্রেনেড হামলা করেছিলাম। সেদিন অল্পের জন্য তিনি বেঁচে যান। আমাকে বিতর্কিত করা গেলে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে। এ কারণে তারা এসব করছে।
“ওই বিশেষ মহলের দুই-তিনজন আজকের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিল বলে জানতে পেরেছি। তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব করছে। এর মধ্যে দুয়েকজন ফেসবুকেও লিখেছে। আমি সাইবার ট্রাইব্যুনালে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব।”
সংবাদ সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফেরদাউছ ইসলাম খান, এএইচএম নাসিরউদ্দিন চৌধুরী, আজিজুল হক, একেএম মতিন চৌধুরী, মো. শফি খাঁন, প্রদ্যোৎ কুমার পাল, মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, মোহাম্মদ সাহাদুল হক, মোহাম্মদ জমির, মো. কামাল উদ্দিন, মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী, ফজলুল হক ভুঁইয়া, ফাহিম উদ্দিন, মোহাম্মদ আবুল কাসেম, মোজাফফর আহমেদ রাজু, এম এন ইসলাম, মোহাম্মদ হারিছ, মুহাম্মদ সবুর, দেওয়ান মাকসুদ আহমেদ ও এস এম নুরুল আমিন উপস্থিত ছিলেন।