মহামারীর দুবছর অন্যান্য উৎসবের মত হালখাতাও ছিল বাক্সবন্দি; লোকসানের ধাক্কা সামলে পুরনো বছরের সব দেনা-পাওনা মিটিয়ে বাংলা নতুন বছরে হিসাবের নতুন খাতা খোলার সেই ঐতিহ্য ফেরানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ।
Published : 12 Apr 2022, 10:16 AM
হালখাতা কেবল হিসাবের নতুন খাতা খোলা নয়, ক্রেতা-বিক্রেতার আস্থা ও সম্পর্ক ঝালিয়ে নেওয়ারও আনুষ্ঠানিকতা। তবে আগের সেই জৌলুস আর নেই।
আগে হালখাতার দিন কয় আগে থেকেই ক্রেতাদের বর্ণিল কার্ড দিয়ে নিমন্ত্রণ জানাতেন ব্যবসায়ীরা, ফুল আর রঙিন কাগজে পরিপাটি সাজে দোকান পেত অন্য চেহারা। দোকানে দোকানে ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করানো হত; সাথে থাকত ধর্মীয় নানা আচার।
সেই আড়ম্বর দিনে দিনে কমে এলেও পাইকার, স্বর্ণকার, মুদি কিংবা যারা বাকিতে ব্যবসা করেন, এমন অনেকে টিকিয়ে রেখেছিলেন বৈশাখী এ আয়োজন। মহামারীর মধ্যে সেটাও ছিল বন্ধ।
এবার করোনাভাইরাসের ত্রাস কমেছে, আসছে বৃহস্পতিবার ১৪২৮ বঙ্গাব্দকে বিদায় জানিয়ে শুরু হবে ১৪২৯।
তবে সারাদেশের মত চট্টগ্রামের অনেক ব্যবসায়ী সনাতন পঞ্জিকা অনুসরণ করে বর্ষবরণ করেন; তাদের হালখাতা হবে শুক্রবার।
“সব ধর্মের লোকজন নিয়েই তো আমাদের ব্যবসা। তাই এবছর অনেকেই হালখাতা খুলবেন না। যারা খুলবেন, তারা কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা পালন করবেন না।"
সোনাপট্টিতে হালখাতা আয়োজনে কিছুটা ভাটা পড়লেও খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের ব্যবসায়ীরা এবার আর বকেয়া করবেন না।
চাক্তাই চাল বাজারের মের্সাস খাজা আজমীর ট্রেডার্সের মালিক কিংশুক চৌধুরী জানালেন, ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে হালখাতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
“আমাদের এখানে হিন্দুরা পূজার মাধ্যমে আর মুসলমান ব্যবসায়ীরা মিলাদ পড়িয়ে হালখাতা খুলবেন।"
অধিকাংশ ব্যবসায়ী বাংলা নববর্ষে উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের ব্যবসার হালখাতা খোলেন। আবার কেউ কেউ বৈশাখের ১৫ তারিখ 'অক্ষয় দ্বিতীয়া তিথিতেও' খাতা খোলেন।
অল্প সংখ্যক ব্যবসায়ী ইংরেজি নতুর বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি ও নতুন অর্থবছর অর্থাৎ ১ জুলাই থেকেও তাদের ব্যবসার হালখাতা খোলেন বলে জানান মনোরঞ্জন।
চাক্তাই চাল বাজারের মের্সাস খাজা আজমীর ট্রেডার্সের মালিক কিংশুক চৌধুরী বলেন, “হালখাতার সেই জৌলুস এখন নেই। এখন পহেলা বৈশাখে সবাই হালখাতা খোলেন না। কেউ কেউ ইংরেজি বছর ও অর্থবছরের শুরুতে হালখাতা খোলেন।"
কিংশুক জানান, ২০২০ সালে বাংলা ১৪২৭ সালের হালখাতা খোলার সময় বকেয়া আদায় হয়েছিল, কিন্তু চলতি বাংলা বছরের শুরুতে অনেক টাকা অনাদায়ী রেখেই তারা হালখাতা খুলেছিলেন।
চট্টগ্রামের বেশিরভাগ ফলের আড়ত নগরীর বিআরটিসি ফলমণ্ডি এলাকায়। সেখানেও বার্ষিক এ আয়োজন আগের জৌলুস হারিয়েছে।
বছর শেষে পাওনাদারের টাকা পরিশোধের প্রবণতা কমে আসছে বলে অভিযোগ করেন আসাদগঞ্জের শুঁটকির আড়ত মেসার্স নিলু কান্তি বড়ুয়ার কর্ণধার রাজীব বড়ুয়া।
“আগে বছরের শেষে ব্যবসায়ীরা পাওনা টাকা পরিশোধ করে দিত আড়তদারদের। এখন সেই প্রবণতা কমে গেছে। কেউ কেউ বাংলা নববর্ষে হালখাতা খুললেও কোনো আনুষ্ঠানিকতা করেন না, হিন্দু ব্যবসায়ীরা হিসেবের খাতা মন্দিরে নিয়ে যান।"
তবে বৈশাখের আগে হালখাতা তৈরিতে ব্যস্ততা বেড়েছে ছাপাখানাগুলোতে।
“অধিকাংশ ব্যবসায়ী চৈত্র মাসে তাদের ব্যবসার পুরানো বছরের হিসাব চুকিয়ে নতুন করে হালখাতা খোলেন বৈশাখ মাসে। আবার কেউ কেউ ইংরেজি জানুয়ারি, জুলাই মাসে আবার কেউ কেউ ঈদের শেষেও নতুন হালখাতা খোলেন।"
চট্টগ্রামের বাইরে সিলেট, হবিগঞ্জ, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছে হালখাতা পাঠায় এসবি বাইন্ডিং হাউজ।
প্রণব বলেন, গেল দুই বছর লকডাউন থাকায় ব্যবসায়ীরা দোকান খুলতে পারেননি, তার ছাপাখানাও বন্ধ রাখতে হয়েছিল। তবে এ বছর পুরোদমে কাজ চলছে, হালখাতাও তৈরি হচ্ছে।