চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার নলুয়া ও বাজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাতের মধ্যে দুইজন নিহত হয়েছে।
Published : 07 Feb 2022, 12:48 PM
এর মধ্যে নলুয়ার ঘটনাটি ঘটে সোমবার দুপুরে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মরফলা বোর্ড কেন্দ্রের বাইরে। সেখানে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে তাসিফ নামে ১২ বছর বয়সী এক কিশোরের মৃত্যু হয়।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে বাজালিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে আব্দুর শুক্কুর নামে ৩৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
সাতকানিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা তুজ জোহরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা দুজনের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছি।”
নলুয়ায় মারা যাওয়া তাসিফ ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জসিম উদ্দিনের ছেলে। স্থানীয় একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল সে।
স্থানীয়রা জানান, বেলা ১২টার দিকে মরফলা বোর্ড কেন্দ্রের বাইরে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে তার প্রাণ যায়।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আফসারুল হক টুটুল বলেন, “আমরা যেটা জানতে পেরেছি, দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়েছিল ছেলেটি। সেখানে তাকে কুপিয়ে জখম করা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”
আর বাজালিয়া ইউনিয়নের ঘটনাটি ঘটে সাঙ্গু নদীর পাড় সংলগ্ন ইউনিয়ন পরিষদ ভোট কেন্দ্রের বাইরে। নৌকা দিয়ে নদী পার হয়ে কিছু লোক এসে গুলি ছোড়ে। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের ধাওয়া করলে তারা নৌকা নিয়ে পার হয়ে যায়।
পরে চারজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে আব্দুর শুক্কুর মারা যান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার টুটুল বলেন, “শুক্কুর আলীর কুচকিতে গুলি লেগেছিল। উদ্ধার করে হাসপাতাল পাঠালেও বাঁচানো যায়নি।”
সকালে খাগড়িয়া ইউনিয়নের গণিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খাগরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রের বাইরে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির পর ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ ইউনিয়নের মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আকতার হোসেন এবং মোটর সাইকেল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জসীম উদ্দিনের সমর্থকরা সকাল সাড়ে ৯টার দিকে লাঠিসোঁটা নিয়ে দুই কেন্দ্রের বাইরে জড়ো হয়। ওই দুই কেন্দ্রের মধ্যে দূরত্ব কয়েকশ গজ।
এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি শুরু হয়। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং ভোটাররা কেন্দ্র ছেড়ে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
মারামারির মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পরও গোলাগুলির শব্দ শোনা যায় বলে স্থানীয়রা জানান।
বেলা সাড়ে ১০টার পর গণিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পৌঁছান চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার রশিদুল হক। এরপর সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু তিনি চলে যাওয়ার পর আবারও গোলাগুলি শুরু হয়।
এদিকে ১৭ নম্বর সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম উদ্দিন চৌধুরীর ওপর হামলার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে তার ওপর হামলা হয়েছে অভিযোগ এনে তিনি বলেন, “দুই কেন্দ্রে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ব্যালেট ভোটারদের না দিয়ে আগে থেকে নৌকা মার্কায় সিল মেরে রাখা হয়েছে। প্রতিবাদ করায় আমাকে মারধর করা হয়।”
সেলিমের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় ১০৭ নম্বর মধ্য গারাংগিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে।
কেন্দ্রের একটি বুথে গিয়ে দেখা যায়, দুই সদস্য প্রার্থীর ব্যালেট দেওয়া হলেও চেয়ারম্যান প্রার্থীর ব্যালেট দেওয়া হয়নি। সেখানে পোলিং অফিসারের টেবিলে আগে থেকে নৌকা মার্কায় সিল মারা ব্যালেট দেখা গেছে।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন বলেন, “এরকম তো কিছু ঘটেনি।”
পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক তদন্ত সাদিকুর রহমান জানান, সাতকানিয়ার বিভিন্ন কেন্দ্রের বাইরে সংঘর্ষে আহত ছয়জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এরা হলেন, মো. শারফিন (১৮), প্রিয়তোষ তালুকদার (৪৬), মো. আরিফ (১৮), আশরাফ (২১), আকাশ দাশ (১৮) ও মো. নাজিম (২৩)। তারা সবাই হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন।