বৃহস্পতিবার বিকালে নগরীর সিআরবি সাত রাস্তা মোড়ে আয়োজিত কর্মসূচি থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত বলেন, “এ আন্দোলনে শুধু চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ নয়, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও সামিল হয়েছেন। সবাই বলেছেন সিআরবি রক্ষা করতে হবে চট্টগ্রামের স্বার্থে।
“চট্টগ্রামের মানুষ এখানে বেসরকারি হাসপাতাল চায় না। যতদিন হাসপাতাল নির্মাণের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হবে ততদিন চট্টগ্রামবাসী এ আন্দোলন পরিচালনা করবে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থান এই সিআরবি। ঐক্যবদ্ধভাবে চট্টগ্রামের স্বার্থে আমরা সবাই এই আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাব।”
পূর্ব রেলের সদর দপ্তর (সিআরবি) এলাকায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) ৫০০ শয্যার হাসপাতাল, ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ ও ৫০ আসনের নার্সিং ইনস্টিটিউট স্থাপনের প্রকল্প রেল বিভাগ গ্রহণ করার পর থেকে তার প্রতিবাদ চলছে চট্টগ্রামে।
সিআরবি এলাকাকে ‘হেরিটেজ জোন’ হিসেবে বন্দর নগরীর মহাপরিকল্পনায় ‘সংরক্ষিত এলাকা’ হওয়ায় সেখানে কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনার অনুমোদন দেওয়া হবে না বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
বৃহস্পতিবারের কর্মসূচিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, “রেলওয়ে বলছে এখানে হাসপাতাল হলে গাছ কাটা পড়বে না। গুনে দেখেছি তিনশ গাছ আছে শতবর্ষী গাছসহ। যা বলা হচ্ছে গাছ কাটা হবে না, তা সঠিক নয়।
“হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হলে এ এলাকা ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীকে যদি সঠিক তথ্য জানানো যায় তাহলে তিনি এ প্রকল্প বাতিল করবেন।”
কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, “শুধু গাছ নয় আমরা সিআরবির পুরো জায়গাটাই রক্ষা করতে চাই। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিধন্য সিআরবিতে ১৯৭১ এ স্বাধীনতা যুদ্ধে বহু মানুষ শহীদ হয়েছেন। সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের ২৪ ধারায় বলা আছে, ঐতিহাসিক স্থাপনা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান রক্ষা করতে হবে। তা এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
“এখানে সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে উঠেছে। সিআরবি ভবন ব্রিটিশ স্থাপত্যের শেষ কয়েকটির একটি। রেলের যে হাসপাতাল সেটাকে পুনরুজ্জীবিত করে ব্যবহার উপযোগী করা যেতে পারে। কোনো বাণিজ্যিক হাসপাতাল নয়। এ সঙ্গে ডিসি হিল রক্ষার আন্দোলনও আমরা চালিয়ে যাব। সেখানে যাতে সুস্থ সংস্কৃতির চর্চার সুযোগ থাকে।”
খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী কমিটির সভাপতি ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, “রেলের জমি বলে কিছু নেই, সব জনগণের সম্পতি। সরকারি কোনো জায়গায় কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হতে পারবে না। বেসরকারি হাসপাতালের চরিত্র করোনাকালে দেখেছি আমরা। এই প্রকল্প বাতিল না হলে আমরণ অনশন করব সবাইকে নিয়ে। সাথে সাথে আমাদের ডিসি হিল রক্ষা করতে হবে।”
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুচ বলেন, “স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বিএনপি নেতাদের গ্রুপ এখানে হাসপাতাল করতে চায়। এখানে নয়জন শহীদের কবর আছে। শহীদের সমাধির উপর রক্তাক্ত স্বাধীনতার ইতিহাস ম্লান করতে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের সব মানুষকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আজ রাজনীতিবিদের হাতে রাজনীতি নেই। মহিউদ্দিন চৌধুরী থাকলে কারও সাহস হত না এখানে হাসপাতাল করার।”
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, “সিআরবি এলাকা সিডিএ হেরিটজ ঘোষণা হয়েছে। এখানে হাসপাতাল হতে পারে না। রেল মন্ত্রণালয় তারপরও অনেক কিছু গোপন করে হাসপাতাল করতে চেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে অনেক কিছু জানানো হয়নি। আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যদি সিআরবিতে চট্টগ্রামের মানুষ হাসপাতাল না চায় তাহলে কোনো হাসপাতাল হবে না।
“মানুষের চেতনা, নতুন প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি উপেক্ষা করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করে কোনো উন্নয়ন হতে পারে না। রেলমন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দা জানাই। এ বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। তা মানুষের মনে আঘাত দিয়েছে। সিআরবিতে হাসপাতালের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আগের মত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।”
নগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, “যে জমি একোয়ার করা হয়েছে, সেটা রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনি। যার আসল নাম শহীদ আবদুর রব কলোনি। রেলের বক্তব্যের কোথাও নেই শহীদ আবদুর রব কলোনি একোয়ার করে হাসপাতাল হচ্ছে। তাই কৌশলে গোয়ালপাড়া বলছেন। চ্যালেঞ্জ করছি এটা গোয়ালপাড়া নয়। যুদ্ধের ইতিহাস মুছে দিতে এখানে বাণিজ্যিক হাসপাতাল হতে পারে না।”
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী, সিপিবি নেতা নূরুচ্ছফা ভুঁইয়া, পিপলস ভয়েসের সভাপতি শরীফ চৌহান, সাংবাদিক নাজিমুদ্দিন শ্যামল, আওয়ামী লীগ নেতা জামশেদুল আলম চৌধুরী, প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসান, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের প্রচার সম্পাদক আলীউর রহমান, শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু, নাগরিক সমাজের পক্ষে বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, সাংবাদিক আসিফ সিরাজ, ঋত্তিক নয়ন, নগর ছাত্রলীগের সহ সভাপতি আ ফ ম সাইফুদ্দিন, চট্টগ্রাম জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এনি সেন।
আবৃত্তি শিল্পী প্রণব চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রতিবাদী আবৃত্তি পরিবেশন করেন শিল্পী মিলি চৌধুরী।
সংহতি জানায় প্রমা, বোধন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী, ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ মানবাধিকার ও পরিবেশ ফাউন্ডেশন, আমরা চট্টগ্রামবাসী, স্মাইল বাংলাদেশ, আমরা কৃষকের সন্তান পরিষদ, মুসাফির, বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশন দক্ষিণ জেলা, ভয়েস অব চট্টগ্রাম, জাগো চট্টগ্রাম বাঁচাও সিআরবি, অদিতি সঙ্গীত নিকেতন।