চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের আগে দলের এক সভায় দেখা হল মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের।
Published : 08 Feb 2020, 02:41 PM
শনিবার দুপুরে নগরীর এস এস খালেদ সড়কের একটি কমিউনিটি সেন্টারে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়মী লীগের বর্ধিত সভায় তাদের দেখা হয়।
নগর কমিটির সদস্য নওফেল সভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় ছিলেন না নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাছির। নওফেল বক্তব্য শেষ করে চলে যাওয়ার সময় তিনি উপস্থিত হন।
নওফেল ও নাছির মুখোমুখি হলে দুজনে হাসিমুখে পরস্পরের সঙ্গে কথা বলেন।
এই সভায় বক্তব্যে দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে উদ্ধৃত করে মেয়র পদে দলের মনোনয়ন পেতে আগ্রহীদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের বিষয়ে নির্দেশনা দেন সিটি মেয়র নাছির।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) বর্তমান মেয়র নাছির আসন্ন নির্বাচনেও প্রার্থী হতে চান। বিভিন্ন গণমাধ্যমে মেয়র পদে নওফেলের নাম আলোচনায় এলেও নিজের অনাগ্রহের কথা জানিয়েছেন তিনি।
নওফেলের বাবা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এক সময় চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ছিলেন। আ জ ম নাছিরকে যেবার প্রার্থী করেছিল আওয়ামী লীগ, সেবারও মহিউদ্দিন প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু দলের সায় পাননি।
চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে মহিউদ্দিন-নাছির দ্বন্দ্ব ছিল আলোচিত বিষয়। মহিউদ্দিন মারা গেলেও তার ছেলে শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেলকে কেন্দ্র করে আছেন তার বাবার অনুসারীরা।
ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান
মেয়র পদে দল যাকেই মনোনয়ন দিক, ভেদাভেদ ভুলে তার পক্ষে কাজ করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নাছির ও নওফেল।
নওফেল সভায় বলেন, “খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে যাবে। এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন বোর্ডের সাথে বসে একটা দিক-নির্দেশনা দিবেন। সেই নির্দেশনা মেনে সবাই একসাথে কাজ করব।”
নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি এড়ানোর উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “অনেক কথাবার্তা আসে, মনোনয়নের আগে এধরনের কথায় মনোযোগ দিয়ে মনোবল দুর্বল করতে চাই না। সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদক বসে আমাদের পরিকল্পনা দিয়ে দিবেন। আমরা চাই না, এর আগে এটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে কোনো আলোচনা থাকুক।
“আমরা ঐক্যবদ্ধ শক্তি। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। নির্বাচন সেখানে অনেক টাইট ছিল কিন্তু। তাদের (বিএনপি) অপপ্রচারের কারণে ভোটার সেভাবে আসেনি। ঢাকাতে যেভাবে করেছে চট্টগ্রামে তাদের কৌশল ভিন্ন হতে পারে। এটা মাথায় রাখতে হবে। তাই আমাদের মধ্যে যাতে কোনো ধরনের অবিশ্বাস যেন না আসে।”
নাছির বলেন, “আত্মঘাতী কর্মকান্ড থেকে নিজেদের বিরত থাকতে হবে। পরস্পর পরস্পরকে হেয় করা, কিছু একটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে দেয়ার যে অপচেষ্টা, এগুলো বন্ধ করতে হবে। এগুলো যদি বন্ধ করতে না পারি দিন শেষে ক্ষতি হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর, আওয়ামী লীগের, সরকারের।”
নাছির বলেন, ১৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের তফসিল হবে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এখন থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম নিতে পারবেন, তা জমা দিতে হবে ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম-৮ আসনে উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ায় দিকটি তুলে ধরে দলের মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন নগর সাধারণ সম্পাদক নাছির।
তিনি বলেন, “কেন্দ্রের বাইরে আমাদের অনেকেই ছিল। কিন্তু ভোট কত পড়েছে? যদি নিজ নিজ এলাকায় আস্থা তৈরি করতে পারতাম জনগণ বাধ ভাঙা জোয়ারের মত ভোট দিতে যেত।
“দেশে ৩০০ আসনের মধ্যে যেটা একেবারে খারাপ আসন সেখানেও তো আমাদের দলের ৩০ শতাংশ ভোটার আছে। সেই ভোটাররা কোথায় গেল। আমাদের ভোটগুলো কোথায় গেল?”
নগর কমিটির সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমদ, নগর কমিটির সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু ও সুনীল সরকার, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য এম এ রশিদ, মশিউর রহমান চৌধুরী, চন্দন ধর, ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, নোমান আল মাহমুদ ও চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনীসহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।