চট্টগ্রামের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে নার্স-চিকিৎসকদের ‘অবহেলায় ও ভুল চিকিৎসায়’ ১৩ মাস বয়সী এক সন্তানের মৃত্যুর অভিযোগ এনেছেন তার মা।
Published : 01 Dec 2019, 02:27 PM
রোববার চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগে ম্যাক্স হাসপাতালের অব্যস্থাপনার কথা তুলে ধরে তার প্রতিকার চেয়েছেন শিশুটির মা লালখান বাজারের বাসিন্দা মোহছেনা আক্তার ঝর্ণা। শিশুটির বাবার নাম শামীম সারোয়ার।
গত বছরের ২৮ জুন রাইফা নামের চার বয়সী এক শিশুর মৃত্যুর পর এই ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে গাফিলতি, অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার অভিযোগে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল।
এবার যে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে তার বয়স ছিল এক বছর ২৪ দিন।
সিভিল সার্জনের কাছে দেওয়া লিখিতি অভিযোগে শিশুটির মা জানিয়েছেন, গত ১৭ নভেম্বর তার শিশু সন্তান জিহান সারোয়ার প্রিয় অসুস্থ বোধ করলে তাকে ম্যাক্স হাসপাতালের এনআইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছিল।
সন্তানকে হারানো মোহছেনা আক্তার ঝর্ণা বলেছেন, “ভর্তির পর অনকলে চিকিৎসক সনৎ কুমার বড়ুয়াকে দেখালে তিনি ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন। এরপরই ম্যাক্স হাসপাতালের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মুখে আমরা অসহায় হয়ে পড়ি। এনআইসিইউর মত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তাদের কোনো অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স নেই।
ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার চারদিনে প্রায় সময়ই নার্স, আয়া ও চিকিৎসকদের অবহেলার শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি অভিযোগ করেছেন, বিভিন্ন সময়ে অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ চিকিৎসক কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি। অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ নার্সরা ডিউটিতে রাতে ঘুমিয়ে থাকে। তাদের ডাকলে উল্টো বকা শুনতে হয়।
এছাড়া তার সন্তানের বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের দেখতে দেয়নি দাবি করেছেন মোহছেনা।
“আমার সন্তানের চিকিৎসার বিস্তারিত তারা আমাদের দেয়নি। তারা যে ওষুধ আমার সন্তানকে দিয়েছে তার মেয়াদ ছিল কিনা তাও আমরা জানি না,” অভিযোগে উল্লেখ করেছেন এই নারী।
ম্যাক্স হাসপাতাল শুধু তাদের ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি পূর্ণ করে চলেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “রোগীদের সুচিকিৎসা প্রদানে তাদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। এসব কারণে আমার সন্তানের মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটন এবং ম্যাক্স হাসপাতালের প্রতিটি অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”
অভিযাগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, “যেকোনো মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত । আমরা অবশ্যই বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের সাথে সমন্বয় করে তদন্তের ব্যবস্থা করা হবে। চিকিৎসায় যদি কোনো গাফিলতি, ত্রুটি বা অবহেলা হয় তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পত্রিকায় এই ঘটনার বিষয়ে সংবাদ দেখে একটি তদন্ত কমিটি গঠনও করা হয়েচিল জানিয়ে সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, “কমিটির একজন চিকিৎসক তদন্তে অপরাগতা প্রকাশ করলে আবার তিন সদস্যের কমিটি নতুন করে গঠন করা হয়েছে।
“এখন এই অভিযোগ পাওয়ায় আমাদের তদন্তে সুবিধা হবে। ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যদি গাফিলতি থাকে তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বেসরকারি হাসপাতালগুলো সরকারি নীতিমালা অনুসারে যদি মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত না করে তাহলে আমার ব্যবস্থা নেব।”
এর আগে ঘটনার পরপরই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে বলেছিল, মস্তিষ্কের প্রদাহের কারণে শিশুটির অবস্থা আগে থেকেই খারাপ ছিল।
শিশুটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক নেফ্রলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সনৎ কুমার বড়ুয়ার অধীনে চিকিৎসাধীন ছিল।
তিনি সেসময় বলেছিলেন, শিশুটি মস্তিষ্কের প্রদাহে আক্রান্ত ছিল। গত ১৫ নভেম্বর থেকে তার জ্বর ছিল, এরপর খিঁচুনি হয়। শিশুটির অবস্থা একটু ভালো হয়। জ্বর একটু কমেছিল। তবে এ রোগের ধরণ এমন, যে কোনো সময় পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।
“যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় সেটির কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। নির্ধারিত সময় নিয়েই সেটি দেওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। হয়ত শিশুটির মস্তিষ্কে প্রদাহ আবারও কাছাকাছি সময়ে শুরু হয়েছিল। ওষুধের কারণে কিছু হয়নি।”
শিশুটি মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত ছিল জানিয়ে ম্যাক্স হাসাপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিয়াকত আলী বলেন, “অবস্থা খুব খারাপ থাকায় শুরু থেকে শিশুটি এনআইসিইউতে ছিল। মেনিনজাইটিস খুবই মারাত্মক অসুখ। শারীরিক অবস্থা কিছুটা ইমপ্রুভ করেছিল। এতে হয়ত স্বজনরা ভেবেছেন শিশু সুস্থ হয়েছে। ইনজেকশনের কোনো প্রভাব নেই। হয়ত ইনজেকশন দেওয়ার একটু পর আবার প্রদাহ শুরু হয়।”
তবে সন্তানের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে চান মোহছেনা আক্তার ঝর্ণা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ছেলের মৃত্যুর কারণ জানতে চাই। তারা খুঁজে বের করুক। আধ ঘণ্টা আগেও ছেলে সুস্থ ছিল। কোথায় ভুল ছিল সেটাই তারা বের করুক। আমি তো শূন্য হয়েছি আর কেউ যেন শূন্য না হয়।”